০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগান সঙ্কট: ভারত কী শুধু দেখবে?

পূরব পান্ডে (অনুবাদ: ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল): আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতি এবং উদ্ভুত অবস্থায় ভারতের ভূমিকা ও করণীয় নিয়ে ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক -এ দিল্লীর সিনিয়র সাংবাদিক পূরব পান্ডের লেখা নিবন্ধটি দৈনিক নবযুগের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণার পরই ক্ষমতা দখলে নেয়ার লড়াই আরম্ভ করে তালেবান যোদ্ধাগণ। একের পর এক প্রদেশে সরকারী বাহিনীকে পরাস্ত করে অবশেষে গত ১৫ আগস্ট দেশটির রাজধানী কাবুল দখলে নেয় তাঁরা।

তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পরপরই বিশ্ব রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে নাটকীয় অনিশ্চয়তা ও পরিবর্তন। এসব পরিবর্তনের সুফল ভোক্তা অনেক হলেও সবচেয়ে বেশি আশঙ্কায় রয়েছে ভারত।

তালেবান উত্থানে ভারতের এই উদ্বেগের বিষয়টি কারুর কাছে অজানা নয়। গত দু দশকে আফগানিস্তানে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে দিল্লী। এতো বিশাল পরিমাণ বিনিয়োগের ভবিষ্যত নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন ভারত।

এছাড়াও, নিরাপত্তা ইস্যুতে তালেবানের উত্থান ভাবাচ্ছে মোদী নেতৃত্বকে। দিল্লী আশঙ্কা করছে, পাকিস্তানের আইএসআই এবং কুখ্যাত হাক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তালেবানের মিত্রতা ভবিষ্যতে আফগান ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে পারে।

এমতাবস্থায় প্রশ্ন জাগছে, ভারত কী শুধু দেখবে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? চলুন দেখে নিই সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ বা পরিস্থিতি।

দোহায় তালেবান নেতার সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকের বৈঠক

ধারণা করা হচ্ছিলো, ভারত সরকারের নিরাপত্তা কর্মকর্তাগণ এবং কূটনীতিকগণ গত কয়েক মাস যাবতই তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে গতকালই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানের সঙ্গে কোনো বৈঠকের কথা স্বীকার করলো ভারত সরকার।

ক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দোহায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তাল তালেবান নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টেনেকজাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দোহায় ভারতের দূতাবাসের ভেতরে এই বৈঠক হয়।

বৈঠকে ভারত কূটনীতিক আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং আফগানিস্তানে আটকে পড়া নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফেরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু নাগরিক যারা ইন্ডিয়ায় ভ্রমণ করতে চায় তাদের বিষয়েও কথা বলেছে ভারত।

কাবুলে আটকে রয়েছেন অনেক ভারতীয় নাগরিক

কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বর্তমানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তালেবান উত্থানের পর থেকেই দেশটি থেকে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনছে দিল্লী। স্বীয় নাগরিকদের দেশে ফেরাতে সম্ভব সকল রকমের পদক্ষেপই নিয়েছে দিল্লী। ইতোমধ্যে নিজেদের সাড়ে পাঁচ শতাধিক নাগরিক সহ প্রায় ৮০০ নাগরিককে দিল্লী নিয়ে এসেছে ভারত। কঠোর করা হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিও।

তারপরও, শুধুমাত্র কাবুলেই প্রায় ১৪০ নাগরিক আটকে রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়ের সদস্যগণ। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সমস্ত সমস্যার ইতিবাচক সমাধান হবে বলে কথা দিয়েছে তালেবান নেতৃত্ব।

ঝুঁকির মুখে আফগানিস্তানে ভারতীয় বিনিয়োগ

তালেবান উত্থানের পর ভারতের জন্যে এখনও অবধি সবচেয়ে সংবেদনশীল জায়গা গুলোর একটি হচ্ছে দেশটিতে থাকা বিশাল পরিমাণ ভারতীয় বিনিয়োগ। বিগত দু দশক সময়কালে আফগানিস্তানের অবকাঠামোগত এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি খরচ করেছে ভারত। কিন্তু বর্তমানে তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

এমতাবস্থায়, সম্ভব সব রকমের নিরাপদ পদক্ষেপের সন্ধান করছে ভারত। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে বলে ধারণা করি। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ব রাজনীতির মোড়লেরা সঙ্গে রয়েছে ভারতের।

ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

এটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুতর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তালেবান উত্থানে ভারতের নিরাপত্তার উপর যে বিন্দুমাত্র আঁচ আসবেনা, সে বিষয়ে এখনও কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে ভারতের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় এই যে, আফগান ভূখন্ড ব্যবহার করে অন্য কোনো শক্তি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

তাই স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তানে তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে মোদী সরকারকে। অস্বীকার করার কিছু নেই যে, পাকিস্তানের আইএসআই এবং কুখ্যাত হাক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তালেবানের মিত্রতা ভবিষ্যতে আফগান ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে পারে।

এছাড়াও, আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি), জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিরাপদ ঘাঁটি হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান।

তাই বিষয়টি যারপরনাই ভাবাচ্ছে ভারতীয় নেতৃত্ব এবং প্রশাসনকে। ইতোপূর্বে তালেবান শাসনামলে নব্বইয়ের দশকের শেষাংশে আফগান ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের উপর ক্রমাগত অনেক আক্রমণ চালানো হয়। তাছাড়া, বিগত দু দশকেও ভারতের উপর নানা ভাবে সন্ত্রাসী হামলায় সংশ্লিষ্টতা ছিলো তালেবান নেতৃত্বের। সেসময় (১৯৯৯ সাল) ভারতীয় বিমান হাইজ্যকও করেছিলো তালেবান সন্ত্রাসীরা। সে যাত্রায় তিনজন পাকিস্তানী সন্ত্রাসীকে মুক্ত করার বিনিময়ে যাত্রীদের মুক্ত করে এনেছিলো ভারত সরকার। তাই তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক গভীর সম্পর্ককে অস্বীকার করার কিছু নেই।

গোটা বিষয়টিকে মিডিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবেই আখ্যা দেয়া হয়। তালেবানের বিজয়ে পাকিস্তানেও উৎসবের আমেজ দেখা গিয়েছে। খুশির বেগ এতোই প্রবল যে, বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণও করেছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই কড়া বার্তা এবং অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে ভারতকে। ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হতে হবে ভারতীয় সশস্ত্র এবং গোয়েন্দা বাহিনী গুলোকে।

তাই, পরিশেষে বলতে পারি, ভারত সরকার বসে নেই। সম্ভব সবকিছুই হয়তো করছেন। তবে এক্ষেত্রে সকল ক্ষেত্রে আরও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ হয়তো জনমনে পূর্ণ আস্থা তৈরীতে ভীষণ পদক্ষেপ রাখবে।

লেখকঃ দিল্লীভিত্তিক সাংবাদিক, প্রকাশিত মতামত একান্তই তাঁর নিজস্ব

অনুবাদ: ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল, বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

ট্যাগ:

আফগান সঙ্কট: ভারত কী শুধু দেখবে?

প্রকাশ: ১২:৪৭:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১

পূরব পান্ডে (অনুবাদ: ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল): আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতি এবং উদ্ভুত অবস্থায় ভারতের ভূমিকা ও করণীয় নিয়ে ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক -এ দিল্লীর সিনিয়র সাংবাদিক পূরব পান্ডের লেখা নিবন্ধটি দৈনিক নবযুগের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণার পরই ক্ষমতা দখলে নেয়ার লড়াই আরম্ভ করে তালেবান যোদ্ধাগণ। একের পর এক প্রদেশে সরকারী বাহিনীকে পরাস্ত করে অবশেষে গত ১৫ আগস্ট দেশটির রাজধানী কাবুল দখলে নেয় তাঁরা।

তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পরপরই বিশ্ব রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে নাটকীয় অনিশ্চয়তা ও পরিবর্তন। এসব পরিবর্তনের সুফল ভোক্তা অনেক হলেও সবচেয়ে বেশি আশঙ্কায় রয়েছে ভারত।

তালেবান উত্থানে ভারতের এই উদ্বেগের বিষয়টি কারুর কাছে অজানা নয়। গত দু দশকে আফগানিস্তানে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে দিল্লী। এতো বিশাল পরিমাণ বিনিয়োগের ভবিষ্যত নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন ভারত।

এছাড়াও, নিরাপত্তা ইস্যুতে তালেবানের উত্থান ভাবাচ্ছে মোদী নেতৃত্বকে। দিল্লী আশঙ্কা করছে, পাকিস্তানের আইএসআই এবং কুখ্যাত হাক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তালেবানের মিত্রতা ভবিষ্যতে আফগান ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে পারে।

এমতাবস্থায় প্রশ্ন জাগছে, ভারত কী শুধু দেখবে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? চলুন দেখে নিই সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ বা পরিস্থিতি।

দোহায় তালেবান নেতার সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকের বৈঠক

ধারণা করা হচ্ছিলো, ভারত সরকারের নিরাপত্তা কর্মকর্তাগণ এবং কূটনীতিকগণ গত কয়েক মাস যাবতই তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে গতকালই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানের সঙ্গে কোনো বৈঠকের কথা স্বীকার করলো ভারত সরকার।

ক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দোহায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তাল তালেবান নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টেনেকজাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দোহায় ভারতের দূতাবাসের ভেতরে এই বৈঠক হয়।

বৈঠকে ভারত কূটনীতিক আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং আফগানিস্তানে আটকে পড়া নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফেরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু নাগরিক যারা ইন্ডিয়ায় ভ্রমণ করতে চায় তাদের বিষয়েও কথা বলেছে ভারত।

কাবুলে আটকে রয়েছেন অনেক ভারতীয় নাগরিক

কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বর্তমানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তালেবান উত্থানের পর থেকেই দেশটি থেকে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনছে দিল্লী। স্বীয় নাগরিকদের দেশে ফেরাতে সম্ভব সকল রকমের পদক্ষেপই নিয়েছে দিল্লী। ইতোমধ্যে নিজেদের সাড়ে পাঁচ শতাধিক নাগরিক সহ প্রায় ৮০০ নাগরিককে দিল্লী নিয়ে এসেছে ভারত। কঠোর করা হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিও।

তারপরও, শুধুমাত্র কাবুলেই প্রায় ১৪০ নাগরিক আটকে রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়ের সদস্যগণ। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সমস্ত সমস্যার ইতিবাচক সমাধান হবে বলে কথা দিয়েছে তালেবান নেতৃত্ব।

ঝুঁকির মুখে আফগানিস্তানে ভারতীয় বিনিয়োগ

তালেবান উত্থানের পর ভারতের জন্যে এখনও অবধি সবচেয়ে সংবেদনশীল জায়গা গুলোর একটি হচ্ছে দেশটিতে থাকা বিশাল পরিমাণ ভারতীয় বিনিয়োগ। বিগত দু দশক সময়কালে আফগানিস্তানের অবকাঠামোগত এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি খরচ করেছে ভারত। কিন্তু বর্তমানে তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

এমতাবস্থায়, সম্ভব সব রকমের নিরাপদ পদক্ষেপের সন্ধান করছে ভারত। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে বলে ধারণা করি। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ব রাজনীতির মোড়লেরা সঙ্গে রয়েছে ভারতের।

ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

এটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুতর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তালেবান উত্থানে ভারতের নিরাপত্তার উপর যে বিন্দুমাত্র আঁচ আসবেনা, সে বিষয়ে এখনও কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে ভারতের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় এই যে, আফগান ভূখন্ড ব্যবহার করে অন্য কোনো শক্তি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

তাই স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তানে তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে মোদী সরকারকে। অস্বীকার করার কিছু নেই যে, পাকিস্তানের আইএসআই এবং কুখ্যাত হাক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তালেবানের মিত্রতা ভবিষ্যতে আফগান ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে পারে।

এছাড়াও, আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি), জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিরাপদ ঘাঁটি হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান।

তাই বিষয়টি যারপরনাই ভাবাচ্ছে ভারতীয় নেতৃত্ব এবং প্রশাসনকে। ইতোপূর্বে তালেবান শাসনামলে নব্বইয়ের দশকের শেষাংশে আফগান ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের উপর ক্রমাগত অনেক আক্রমণ চালানো হয়। তাছাড়া, বিগত দু দশকেও ভারতের উপর নানা ভাবে সন্ত্রাসী হামলায় সংশ্লিষ্টতা ছিলো তালেবান নেতৃত্বের। সেসময় (১৯৯৯ সাল) ভারতীয় বিমান হাইজ্যকও করেছিলো তালেবান সন্ত্রাসীরা। সে যাত্রায় তিনজন পাকিস্তানী সন্ত্রাসীকে মুক্ত করার বিনিময়ে যাত্রীদের মুক্ত করে এনেছিলো ভারত সরকার। তাই তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক গভীর সম্পর্ককে অস্বীকার করার কিছু নেই।

গোটা বিষয়টিকে মিডিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবেই আখ্যা দেয়া হয়। তালেবানের বিজয়ে পাকিস্তানেও উৎসবের আমেজ দেখা গিয়েছে। খুশির বেগ এতোই প্রবল যে, বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণও করেছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই কড়া বার্তা এবং অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে ভারতকে। ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হতে হবে ভারতীয় সশস্ত্র এবং গোয়েন্দা বাহিনী গুলোকে।

তাই, পরিশেষে বলতে পারি, ভারত সরকার বসে নেই। সম্ভব সবকিছুই হয়তো করছেন। তবে এক্ষেত্রে সকল ক্ষেত্রে আরও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ হয়তো জনমনে পূর্ণ আস্থা তৈরীতে ভীষণ পদক্ষেপ রাখবে।

লেখকঃ দিল্লীভিত্তিক সাংবাদিক, প্রকাশিত মতামত একান্তই তাঁর নিজস্ব

অনুবাদ: ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল, বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক