ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক মঞ্চে লাখো মাঠ কাঁপানো নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। অনেকেই নিজেদের নেতৃত্ব, দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আরোহন করেছেন ক্ষমতার শীর্ষে, উঠেছেন খ্যাতির চূড়ায়! হয়েছেন কিংবদন্তি! কিন্তু মানুষের মনে স্থায়ী শ্রদ্ধার আসন গেড়ে উঠতে পেরেছেন কজন? কজনই বা নিজেদের কর্মের মাধ্যমে হতে পেরেছেন তরুণ প্রজন্মের আদর্শিক অনুপ্রেরণা? আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের অসংখ্য গৌরব গাঁথা রচিত হলেও আদর্শিক পুরুষের বাঙালী সংখ্যাটা নেহায়েতই কম। সংক্ষিপ্ত এই তালিকাতেও যে নামটি সর্বাগ্রে চলে আসে, তিনি আমাদের জাতির পিতা, বাঙালী জাতির গর্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু তাঁর তরুণ বয়সের মেধা, মনন, পরিকল্পনা, কর্মকান্ড, লব্ধ অভিজ্ঞতা এবং পরিণত বয়সে সেসব অভিজ্ঞতার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আসীন হয়েছেন হাজার বছরের বাঙালী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্বে। তরুণ বয়সে বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়িত প্রতিটি কাজই আজকের বাংলাদেশের বাঙালী সমাজের গর্বের ইতিহাস! বঙ্গবন্ধুর জীবনকে একটি খোলা বই এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এমন একটি বই, যার প্রতিটি পৃষ্ঠা সর্বসাধারণ্যের জন্য উন্মুক্ত, প্রতিটি লাইনে রয়েছে জীবনঘনিষ্ঠ বিস্তর উপদেশ এবং শিক্ষার উপাদান।
কিশোর বয়সে শের-ই-বাংলা এবং সোহরাওয়ার্দী সাহেবের পথ আটকে স্কুল মেরামতের জন্য তিনি ফাণ্ড আদায় করেছিলেন। তারও পূর্বে মহাজনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ভাগ্যে জুটেছিলো জেলযাত্রা! কথায় আছে, ভোরের সূর্য নাকি সারাদিনের গতিবিধি বাতলে দেয়। বঙ্গবন্ধুর তরুণ বয়সেও আমরা এই প্রবাদের সার্থকতা দেখতে পাই! আগুনের শিখা হয়ে সেদিন যে ছেলেটি ধরা দিয়েছিলো, পরবর্তীতে গোটা আগুন হয়েই তা সৃষ্টি করেছে একের পর এক ইতিহাস।
১৯৪৬ সালের নির্বাচন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী আন্দোলন, ভারত ভাগ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচন, আটান্ন পরবর্তী সামরিক শাসন বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষা আন্দোলন, ছয়দফা প্রণয়ন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের যুদ্ধ, পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় – এতো এতো যুগান্তকারী কিংবা যুগ পালটে দেয়া ঘটনাও একজন শেখ মুজিবের মাহাত্ম্যকে তুলে ধরতে যথেষ্ট নয়। বঙ্গবন্ধুর সৃষ্ট ইতিহাস নিয়ে অন্য কোনোদিন সবিস্তারে আলোচনা করা যাবে।
দমন, পীড়ন, বারবার জেলে প্রেরণ সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, কেনো দাবিয়ে রাখা যায়নি? কীভাবে, কোন শক্তির বলে একজন শেখ মুজিব, অজপাড়াগাঁয়ের খোকা, কালের পরিক্রমায় রাজপথ কাঁপানো নেতা থেকে হয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধু? হলেন গোটা বাঙালী জাতির পিতা?
স্বীয় আত্মার কাছে প্রশ্ন করে যখন বিচার বিশ্লেষণ করে নিজেই একটি সিদ্ধান্তে পৌছানো যায়, তখন তা মন এবং মস্তিস্ক দুটোকেই শান্ত করতে সক্ষম। উপরোক্ত প্রশ্নের আমি যে উত্তর পেয়েছি, তার সারমর্ম এই যে, বঙ্গবন্ধু আদর্শিক রাজনীতির চর্চা করতেন। বাঙালীর ইতিহাস ও সংস্কৃতি থেকে শক্তি নিয়ে তিনি এগোতেন। সত্যের পথে নির্ভীক থাকতেন। এক কথায় নিজের বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি মানুষের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
গণতন্ত্রের মানসপুত্র শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক শিষ্যত্ব গ্রহন করলেও আদর্শিক প্রশ্নে তিনি অনুসরণ করতেন বিদ্রোহী কবি নজরুল, অগ্রপথিক নেতাজীর মতো তরুণ তেজ্যোদ্দীপ্ত স্বাধীনতাকামী কিংবদন্তীদের। বঙ্গবন্ধুর পরিণত বয়সের কর্মকাণ্ডে আমরা এর প্রমাণ পাই।
যুক্ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক বৈচিত্র্য, অগ্রজ নেতাদের কর্মকাণ্ড, সু-নীতি, ভ্রান্ত-নীতি থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতা, স্বীয় অনুভব, ত্যাগের মানসিকতা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে নৈকট্য এবং জাতি গঠনে স্বীয় উচ্চাভিলাষ বঙ্গবন্ধুকে তাঁর সমসাময়িক সকল নেতৃত্বের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে।
তরুণ বয়স রক্ত গরম করা বয়স। তরুণ বয়সে যে উদ্যম, সাহস এবং শক্তি নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়া সম্ভব, তা পরিণত বয়সে সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। আর বঙ্গবন্ধুর সার্থকতা এখানেই যে তিনি তাঁর তৎকালীন তরুণ সমাজকে বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে মিশতে পেরেছিলেন এবং তাঁদেরকে সঙ্গে পেয়েছিলেন। তরুণ রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার যে ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর ছিল, তা তাঁর সমসাময়িক অন্য কোনো নেতার মাঝেই পরিলক্ষিত হয়নি।
তরুণদেরকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু ফাঁকা বুলি আওড়াননি। তিনি নিজে যা বিশ্বাস করতেন, তা কাজে প্রমাণ করতেন এবং অন্যদের জন্য উদাহরণ তৈরী করতেন। তরুণরাও যখন দেখলেন এমন একজন নেতাকে, যিনি শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রমাণ দিতে জানেন, সুখ-দুঃখ সবসময় তাঁকে পাশে পাওয়া যায়, তিনি কথা বলেন এবং বলতে দেন, তখন এই নেতার জন্য তাঁরা প্রাণ দিতেও কুন্ঠা বোধ করেনি। তাঁর জলজ্যান্ত প্রমাণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এই দর্শন এবং কর্ম নীতির জন্যেই বঙ্গবন্ধু হয়েছেন বাঙ্গালী তরুণ সমাজের জন্যে অন্যতম যুগপুরুষ, আদর্শ পুরুষ এবং চলার পথে প্রেরণা।
বাঙালী তরুণদের চলার পথে আদর্শ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ হিসেবে যে নামটি আসতে পারে তিনি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। বঙ্গবন্ধু উত্থান পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের সমাজের আদর্শিক চর্চায় সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনিই। রাষ্ট্র চালকদের নানামুখী ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভুলিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা আজও নেতাজীকে স্থান দিয়ে রেখেছি আমাদের মনের একদম মনিকোঠায়।
ভারতীয় উপমহাদেশে তিনিই প্রথম আদর্শিক রাজনীতি এবং সংগঠকের একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছিলেন। যে আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) এর চাকরী তৎকালীন ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত সরকারের যুব সমাজের নিকট রাজত্ব লাভ সম ছিলো, সেই আইসিএস -এ শীর্ষারোহন করার পরও তিনি স্বীয় আদর্শে অটল থেকে দেশমাতৃকার সেবায় তা অবজ্ঞাভরে ত্যাগ করেন! শুধুমাত্র এই একটি ঘটনা চব্বিশ বছর বয়সে সুভাষকে তৎকালীন বাঙালী সমাজ তথা ভারতবর্ষের মানুষের নয়নের মণি করে তুলে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তাঁকে সন্তানস্নেহে আপন করে নেন এবং স্বীয় রাজনৈতিক উত্তরাধিকার দান করেন। অসংখ্য তরুণ স্বাধীনতাকামী ছেলেমেয়েরা সুভাষের নেতৃত্বের ছায়াতলে এসে দাঁড়ায়। আর এরপর সুবী থেকে সুভাষ, সুভাষ থেকে সুভাষ দা, অতঃপর বোস বাবু, সে থেকে নেতাজী -দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনের উপাখ্যানও তরুণ সমাজের জন্য একটি বিশাল অনুপ্রেরণা এবং শিক্ষার উপাদান।
নেতাজীর জীবনের দিকে তাকালেও আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গে নানা মিল খুঁজে পাই। নেতাজীর বালক বয়সেই প্রকাশ পেয়েছিলো তাঁর বিদ্রোহী সত্তা! স্কুলে বন্ধুদের নিয়ে ক্ষুদিরামের ফাঁসির দিনে উপবাস করেছিলেন, মোমবাতি প্রজ্বলন করেছিলেন। এজন্য হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষের চক্ষুশূল। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্সি কলেজেও ফিলোসফিতে স্নাতক শিক্ষার সময় ইতিহাসের অধ্যাপক প্রফেসর ওটেন কর্তৃক হিন্দু ধর্ম এবং ভারত বিদ্বেষী বক্তৃতা শুনে নিজের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান এবং কৃত কর্মের জন্য বহিস্কৃত হন। যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে সেদিন তরুণ সুভাষ আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, তা-ই পরবর্তীতে বিশাল মহাস্ফুলিঙ্গ হয়ে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দুশো বছরের শাসন অবসান ঘটায়। যে ঝর্ণার পানির ফোঁটা হয়ে সুভাষ তাঁর আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সেই আন্দোলনই পরবর্তীতে মহাসমুদ্রে পরিণত হয়ে অবসান ঘটায় দাসত্বের।
দেশপ্রেমের আদর্শে বলীয়ান, দেশের অসম্মানকে মায়ের অসম্মান জ্ঞান, দেশের ব্যথাকে স্বীয় ব্যথা সম্বোধন এর মাধ্যমে নেতাজী রচনা করেছেন অসংখ্য ইতিহাস। মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে আইসিএস এর চাকরী ছেড়ে দিয়ে তিনি রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন শুরু করেন। এই তরুণ বয়সেই তিনি উপলব্ধি করেন দেশের অগ্রজ নেতৃত্ব কোনো সঠিক রূপরেখা ছাড়াই স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করছে। আর এজন্য সেই বয়সেই নিজ অনুভব এবং অর্জিত জ্ঞান পুঁজি করে তিনি রচনা করেন স্বাধীন ভারতের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক রূপরেখা, সামাজিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো। পরিকল্পনা করেন পৃথিবীর ইতিহাসে এক মহাজাতি গঠনের।
একজন তরুণ সাংগঠনিক হিসেবে নেতাজী তাঁর সমবয়সী, অনুজ এবং সমসাময়িক মহলে নিজের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তিনি স্বীয় মেধা এবং লক্ষ্যে অটুঁট থেকে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পছন্দ করতেন। আর তাই একদিকে যেমন তিনি হয়েছিলেন গান্ধী, নেহরু, প্যাটেলদের রাজনৈতিক সহকর্মী, অন্যদিকে হয়েছিলেন ভগত সিং, সূর্যসেন, বাঘা যতীনদের মতো বিপ্লবীদের আত্মিক পুরুষ! একদিকে যেমন মূলধারার রাজনীতির শীর্ষে আরোহন করেছিলেন, অন্যদিকে হয়েছিলেন বিপ্লবীদের প্রাণপুরুষ।
ব্যাক্তিজীবনে স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত সুভাষচন্দ্রের জীবনী নিয়ে অসংখ্য আলোচনা করেছেন, বই লিখেছেন ঐতিহাসিকেরা। দেশমাতৃকার প্রেমে বিভোর সুভাষ তাঁর তরুণ বয়সেই স্বাধীনতার খোঁজে পাড়ি দিয়েছিলেন মরুচর-পর্বত-সমুদ্র-বনাঞ্চল! হয়েছিলেন দেশান্তরী! গড়েছিলেন দুর্দন্ড সেনাদল! হিটলারের সঙ্গে যিনি কথা বলেছিলেন চোখে চোখ রেখে! আর তাঁর এই অসম্ভব সাংগঠনিক মেধা, শৌর্য্য এবং অসাধ্য সাধনের ক্ষমতাই তাঁকে করেছে সকলের নেতা, সবার প্রিয় নেতাজী, আমাদের ইতিহাসের আদর্শ পুরুষ!
বঙ্গবন্ধু এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু উভয়েই তাঁদের নীতি, আদর্শ, কর্ম পরিকল্পনা এবং সেসবের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে তরুণ বয়সেই আমাদের জাতির অভিভাবক হিসেবে আবির্ভূত হতে সক্ষম হন। নেতাজী তাঁর বিপ্লবের পূর্ণতা দিয়ে যেতে না পারলেও বঙ্গবন্ধু পেরেছিলেন।
দুজনেই জীবনভর অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করেছিলেন। সংগঠনে সৃজনশীলতার চর্চা করেছিলেন। বিপ্লব মানে অন্য কোনো বিপ্লবী জাতির অন্ধ অনুকরণ নয়। স্বীয় অবস্থান, চাহিদা এবং প্রাপ্য তুলে ধরে ন্যায্য প্রাপ্তির আশায় যে আন্দোলন দানা বাঁধে, তাই বিপ্লব। বঙ্গবন্ধু এবং নেতাজী -দুজনেই নিজেদের সমাজের চাওয়া গুলো অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই তাঁরা মহান বিপ্লবের জন্ম দিতে পেরেছিলেন।
আমার মতো এ প্রজন্মের বাঙালী তরুণ প্রজন্মের জন্য এই দুই কিংবদন্তির জীবন থেকে শিক্ষা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। দুজনেই তাঁদের তরুণ বয়সে অসংখ্য ত্রাণ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। লাইব্রেরীতে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন সময় কাটিয়েছেন। নিজেদের এবং বিভিন্ন দেশের, জাতির ইতিহাস পড়ার চেষ্টা করেছেন। সেসব আবার সতীর্থদের জানানোর চেষ্টা করেছেন। স্বীয় সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণের চেষ্টা করেছেন। দেশ ও জাতি গঠনে তরুণ বয়সেই দুজনেই রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন। মূলধারার স্রোতে যেমন নিজেদের মেলে ধরেছেন, তেমনই যোগাযোগ রেখেছেন আদর্শিক বিপ্লবীদের সঙ্গেও।
সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো আন্দোলন চলে না। উভয় নেতা-ই সমাজ ঘনিষ্ট ছিলেন। ছিলেন সাধারণ মানুষের নয়নের মণি। উভয়েরই নিজস্ব আদর্শিক মূল্যবোধ তুলে ধরা অসংখ্য বক্তৃতা ও লেখনী আমাদের মাঝে পাথেয় হিসেবে রয়েছে। আমাদেরকে সেসব পড়তে হবে, বুঝতে হবে। তাঁদের নাম-কে স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে সমাজ হিতৈষী কাজের মাধ্যমে নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরতে হবে। তবেই গঠন করা যাবে সোনার বাংলা। গঠিত হবে স্বপ্নের মহাজাতি। গঠিত হবে পরিকল্পিত নগর। বাস্তবায়িত হবে সুষম উন্নয়নের পথ। পৃথিবীর আকাশে উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়বে বাঙালী জাতীয় সমাজ।
পরিশেষে এটুকুই বলবো, আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে জানতে হবে। সংস্কৃতি রক্ষা করতে জানতে হবে। নিজের মাটি এবং ভাষাকে ভালোবাসতে হবে। আমার আজকের তরুণ বয়সের যে লক্ষ্য, প্রৌঢ় বয়সে হবে সেটিই আমার অর্জন। নেতাজী এবং বঙ্গবন্ধু উভয়েই স্বপ্ন দেখতে জানতেন। স্বপ্ন দেখাতে জানতেন। তাই তাঁরা “নেতাজী” এবং “বঙ্গবন্ধু” হতে পেরেছিলেন। তাঁদেরই স্বদেশী, স্বজাতির অন্তর্ভূক্ত হয়ে আমরা যদি আমাদের জীবনকে দুর্নীতি, ধর্ষণ, বিশৃঙ্খলা, মাদক, অশ্লীলতা, সন্ত্রাসের নিকট সমর্পণ করি, তবে লানত আমাদের উপর! লানত আমাদের শিক্ষার উপর, সমাজের উপর, রাজনীতির উপর!
তাই যুগ এবং সমাজ কী করছে, কী ভাবছে, সে ভাবনায় ভাবিত না হয়ে, কুন্ঠিত না হয়ে, নিজেদের সদিচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। নিজেদের বন্ধুমহল, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিত মহলে সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে দিতে হবে, নিজের স্বপ্নের কথা জানান দিতে হবে। নিজেদের গড়ে তুলতে হবে অদম্য, নির্ভীক পথিক হিসেবে। মেধা এবং মননের সবটুকু সত্যের পথে সমর্পন করতে হবে। আর সেটিই হবে নেতাজী এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক পথে আমাদের মতো তরুণদের পথচলার স্বতন্ত্র গল্প।
লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেহাদ