রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহেই ইউরোপ সফরে গেলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবারের যাত্রায় জার্মানি, ডেনমার্ক এবং ফ্রান্স সফর করবেন ভারত সরকারের সুপ্রিমো। এর মাধ্যমে চলতি বছরে এই প্রথমবারের মতো বিদেশ যাত্রা করলেন তিনি। দেশ ছাড়ার আগে মোদী জানালেন, ইউরোপীয় অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করাই তাঁর এই সফরের উদ্দেশ্য।
জানা গিয়েছে, ০২ মে হতে ০৬ মে অবধি পূর্বোক্ত দেশ তিনটি সফর করবেন মোদী। সফরকালে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ, ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে দেখা করবেন তিনি।
ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ০২ মে জার্মানি সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথমে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। পরে দুই নেতা ভারত-জার্মানি ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কনসালটেশনের (আইজিসি) ষষ্ঠ সংস্করণে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বিস্তারের সুযোগ বাড়বে এই সফরে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিনিময়ের সুযোগ পাবে দুই সরকার। সফর চলাকালীন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে বক্তব্য পেশ করবেন একটি বিজনেস ইভেন্টে। জার্মানে ভারতীয়দের উদ্দেশ্যেও বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
উল্লেখ্য, এর আগেও স্কোলজের সঙ্গে মোদীর দেখা হয়েছিল। জি-২০ বৈঠকের সময় দুই নেতার সাক্ষাত হয়েছিলেন। যদিও সেই সময় স্কোলজ জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন না। তখন তিনি ছিলেন জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর এবং অর্থমন্ত্রী। জার্মান রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্কোলজ দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম মোদী তাঁর মুখোমুখি হবেন।
এরপর ডেনমার্ক যাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের আমন্ত্রণে কোপেনহেগেনে অবস্থান করবেন তিনি। সেখানে ০৩ ও ০৪ মে দ্বিতীয় ইন্দো-নর্ডিক সামিটে অংশ নেবার কথা রয়েছে তাঁর। সফর চলাকালীন দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা যাচ্ছে। ভারত-ডেনমার্ক বিজনেস ফোরামে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ভারতীয়দের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন তিনি। নর্ডিক নেতাদের সঙ্গেও আলাপচারিতা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অতিমারী পরবর্তী সময়ে আর্থিক পুনরুদ্ধার, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তির মতো বিষয় সামিটে আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে। উল্লেখ্য, ভারত-নর্ডিক সামিট প্রথমবার হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেবার এই সামিট হয়েছিল স্টকহোমে।
এই সম্মেলনে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। সম্মেলনের ফাঁকে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে মোদী দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে ভারতের সঙ্গে সেই দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বিদায়ী বিবৃতিতে বলেছেন, “ইউরোপে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক মিলিয়নেরও বেশি লোকের বাসস্থান। এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভারতীয়রা থাকেন জার্মানিতেও। ভারতীয় প্রবাসীরা ইউরোপের সাথে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নোঙর এবং তাই আমি ইউরোপ সফরের সুযোগে আমাদের ভাই ও বোনদের সাথে দেখা করতে চাই।”
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এমন এক সময়ে আমি ইউরোপ সফরে যাচ্ছি যখন গোটা অঞ্চলটি বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। আমি চাই আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে।”
এসময়, ফরাসি প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ নিয়ে মোদী বলেন, “প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। আর তার দশ দিনের মধ্যেই তাঁকে সামনাসামনি অভিনন্দন জানানোর সুযোগ আমি পাচ্ছি। এই বৈঠকে ভারত-ফ্রান্স অংশীদারিত্ব পরবর্তী পর্যায়ের দিকটি তৈরি হবে।”
প্রসঙ্গত, চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে কার্যত ‘বন্ধু’ রাশিয়ার দিকেই থেকেছে ভারত। পশ্চিমী দেশগুলো ভারতের এই অবস্থানকে ভালভাবে নিচ্ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভারসাম্য রাখার ক্ষেত্রে মোদীর এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই আখ্যা দিচ্ছে বিশ্লেষকগণ। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক