আবারও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত অবিলম্বে বন্ধের ডাক দিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনদিনের ইউরোপ সফরে বেরিয়ে প্রথমেই জার্মানি গিয়েছেন ভারত সরকারের সুপ্রিমো। সেখানে সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সাথে ৬ষ্ঠ ভারত-জার্মানি ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কনসালটেশন বৈঠকে অংশ নেন তিনি। উক্ত বৈঠকেই স্কোলজের সঙ্গে মিলে দ্ব্যর্থহীনভাবে ইউক্রেনে বেসামরিক মৃত্যুর নিন্দা জ্ঞাপন পূর্বক অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের ডাক দেন মোদী।
আইজিসি বৈঠকের পর জারি করা এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের সমসাময়িক বৈশ্বিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার উপর টিকে রয়েছে। আইজিসি বৈঠকে উভয় দেশের শীর্ষ নেতা ইউক্রেনের সংঘাতের অস্থিতিশীল প্রভাব এবং এর বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। উভয় পক্ষই একমত হয়েছেন যে, অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করা দরকার।”
বিবৃতি অনুসারে, জার্মানি রাশিয়ান বাহিনীর দ্বারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বেআইনি এবং অপ্রীতিকর আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বৈঠকের পর এক প্রেস ব্রিফিং এ ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেন, “দুই নেতা সারা বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে উন্নয়নের বিষয়ে তাদের স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন। এর মধ্যে ইউক্রেন সংঘাতের প্রভাব, বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি, ভোজ্য তেল, সারের মতো সেক্টরে অস্থিতিশীলতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এগুলো সমস্ত বৈশ্বিক উন্নয়নের মতামতের অধীনে আলোচনার বিষয়বস্তু।”
ইউক্রেনের বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব কোয়াত্রা বলেন, “সংঘাতের সূত্রপাত হওয়ার সময় থেকে ভারত ধারাবাহিকভাবে শত্রুতা অবিলম্বে বন্ধ করার এবং দ্রুত সমাধানের অংশের কথা বলেছে, যা কূটনীতি এবং সংলাপের মাধ্যমে যায়।”
তিনি বলেন, “আমি মনে করি এই বিষয়গুলো আমাদের অবস্থানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্তম্ভ ছিল, যা আমরা বহুবার ব্যাখ্যা করেছি। আপনার কাছে হয়তো গোটা বিষয়টি নীতির প্রশ্ন, মূল্যবোধের প্রশ্ন, স্বার্থের প্রশ্ন। এদিকে, আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নীতি এবং স্বার্থের ভারসাম্যের প্রশ্ন এবং আমি মনে করি আমাদের অবস্থান আমাদের ইচ্ছেকে প্রতিফলিত করছে।”
আইজিসি-র পরে জারি করা যৌথ বিবৃতি অনুসারে, বৈঠকে উভয় পক্ষই আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা করেছে এবং সেখানে মানবিক পরিস্থিতি, লক্ষ্যবস্তুতে সন্ত্রাসী হামলাসহ সহিংসতার পুনরুত্থান, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার পদ্ধতিগত লঙ্ঘন এবং প্রবেশাধিকারের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসময়, নারী শিক্ষার প্রতিবন্ধকতার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত ও জার্মানির নেতৃবৃন্দ একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং স্থিতিশীল আফগানিস্তানের জন্য দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং আফগানিস্তানের জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।”
বিবৃতিতে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ নং রেজুলেশন পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলার আহবান জানানো হয়েছে। তাছাড়া, একই বিবৃতিতে আশিয়ানের কেন্দ্রীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি মুক্ত, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের তাত্পর্যের উপর জোর দিয়েছে উভয় পক্ষ। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক