আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিষয়ক এক সূচকে সম্প্রতি বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে সবার নিচে স্থান পেয়েছে ভারত। সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম এবং পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার তালিকায় যথাক্রমে ১৭৬, ১৭৮ ও ১৭৯ নম্বরে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ল অ্যান্ড পলিসি এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক সম্প্রতি ২০২২ সালের এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
৭৭.৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ইউরোপের দেশ ডেনমার্ক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য ও ফিনল্যান্ডের পয়েন্ট যথাক্রমে ৭৭.৭ ও ৭৬.৫। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জাপান। তাদের পয়েন্ট ২৫। শীর্ষ ৫০-এর মধ্যে এশিয়ার আর মাত্র দুটি দেশ রয়েছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩৯ ও সিঙ্গাপুর ৪৪ নম্বরে রয়েছে।
পরিবেশ বিষয়ে ১১টি সমস্যা সংক্রান্ত বিভাগের ৪০টি নির্দেশকের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরি করতে বিশ্বের ১৮০টি দেশের জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত স্বাস্থ্য ও বাস্তুতন্ত্রের প্রাণবন্ততার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
সূচক অনুযায়ী সবচেয়ে কম ১৮.৯ পয়েন্ট পেয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত। এর আগের কয়েকটি দেশের মধ্যে মিয়ানমার ১৯.৪, ভিয়েতনাম ২০.১, বাংলাদেশ ২৩.১ ও পাকিস্তান ২৪.৬ পয়েন্ট পেয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যেসব দেশ দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের চেয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে বা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও অন্যান্য সংকটে জর্জরিত, সেসব দেশ তালিকায় নিচের দিকে রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মারাত্মক খারাপ বায়ুমান এবং অব্যাহত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে তালিকায় প্রথমবারের মতো সবার নিচে অবস্থান করছে ভারত। এদিকে ২৮.৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ১৬১ নম্বরে অবস্থান চীনের। দ্রুত শিল্পায়নের পথে থাকা চীন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দূষণকারী।
সূচকের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা বলছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ক্ষেত্রে ২০৫০ সালের মধ্যে চীন প্রথম এবং ভারত দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে।
৫১.১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় ৪৩তম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র এবং ৩৭.৫ পয়েন্ট নিয়ে ১১২তম স্থানে আছে রাশিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পিছিয়ে থাকার মধ্যে ট্রাম্পের আমলে জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ারই প্রতিফলন ঘটেছে।
ইপিআইয়ের প্রতিবেদন আরো বলছে, বর্তমান চিত্র অনুযায়ী ডেনমার্ক ও যুক্তরাজ্যের মতো মাত্র কয়েকটি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিরপেক্ষতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আরো অনেক দেশই ভুল পথে ধাবিত হচ্ছে। চীন, ভারত ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো ক্রমাগত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ বাড়াচ্ছে।
ইপিআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের অর্ধেকের বেশি নির্গমন করবে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।
তবে, পরিবেশের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রশ্নে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান কী ভাবে সবচেয়ে শেষে হতে পারে? এই প্রশ্ন তুলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের দাবি, অবৈজ্ঞানিক ভাবে এবং অনুমানের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
বুধবার একটি বিবৃতি জারি করে ‘এনভায়রনমেন্ট পারফরম্যান্স ইন্ডেক্স’ (ইপিআই)-এর তালিকাকে নস্যাৎ করেছে পরিবেশ মন্ত্রক। ওই বিবৃতিতে মন্ত্রকের দাবি, ‘পরিবেশ রক্ষার মূল্যায়নে যে সমস্ত সূচকের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি, তার কয়েকটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং অনুমানের ভিত্তিতে গড়া হয়েছে।’
এই তালিকার বিশ্লেষণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি, পরিবেশ দূষণ রুখতে ভারতের ব্যর্থতার উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, বর্জ্য পদার্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায়ও ভারত যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে। যদিও তালিকার এই বিশ্লেষণকে ভারত মানতে নারাজ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে পরিবেশ মন্ত্রক। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক