০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাবুলে গুরুদ্বারে হামলায় উদ্বীগ্ন ভারত

গতকাল আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি গুরুদ্বারের সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায় আইএসআইএস খোরাসান জঙ্গি সংগঠন। বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজনের মৃত্যুর খবর উঠে আসে। এছাড়া শিখ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আহত হয় বলে জানা গিয়েছে।

এই খবরটি সামনে উঠে আসার পরেই এবার অ্যাকশনে নামলো ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বর্তমানে ১০০-রও বেশি শিখ এবং হিন্দুদের জন্য ই-ভিসা শুরু করল ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানান, “কাবুলের গুরুদ্বারে আইএসআইএস খোরাসান জঙ্গি সংগঠন দ্বারা একটি বিস্ফোরণ করা হয়। এই ঘটনায় আমরা সকলে অত্যন্ত পরিমাণে চিন্তায় রয়েছি। অবশ্য ঘটনার দিকে আমরা সর্বদাই নজর রেখে চলেছি। গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটনাটির নিন্দা করেছেন। আমরা সকলের সুস্থতা কামনা করছি।”

প্রসঙ্গত, গতকাল সকালে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাসওয়ান এলাকায় একটি গুরুদ্বারের সামনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আইএসআইএস খোরাসান সংগঠন জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। সম্পূর্ণ ঘটনায় এক নিরাপত্তা রক্ষী সহ সওয়িন্দর সিং নামে এক শিখ অধিবাসীর মৃত্যু হয়।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা আহত হয় বলে জানা যায়। যদিও পরবর্তীকালে তাদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘক্ষন ধরে চলে তালিবান সরকার এবং সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে গুলির লড়াই।

এদিকে, আফগানিস্তানের বিস্ফোরণের ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। নিজেদের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক-এ প্রকাশিত এক বার্তায় আইএস বলেছে, মহানবী (সাঃ)-কে অবমাননার প্রতিশোধ নিতে হামলা চালিয়েছে তারা।

গত ২৬ মে এক টেলিভিশন বিতর্কে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) তৎকালীন মুখপাত্র নূপুর শর্মা। বিজেপির দিল্লি শাখার তৎকালীন গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দালও টুইটারে মহানবী (সাঃ)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে উত্তেজনা চলার মধ্যে গতকাল শনিবার কাবুলে একটি গুরুদুয়ারায় বিস্ফোরণ হয়।

এ ঘটনায় আমাক-এ প্রকাশিত বার্তায় আইএস দায় স্বীকার করে বলেছে, হিন্দু, শিখ ও স্বধর্মভ্রষ্টদের—মহানবী (সাঃ)–এর অবমাননাকারীদের যারা সুরক্ষা দিয়েছে—লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। আইএস আরও বলেছে, তাদের এক সদস্য গুরুদুয়ারার এক নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যার পর ভেতরে প্রবেশ করেন। মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়তে থাকেন এবং হ্যান্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটান।

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল নাফি তাকোর বলেন, হামলাকারীরা গুরুদুয়ারায় প্রবেশের সময় অন্তত একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়।

আফগানিস্তানে ১৯৭০–এর দশকে প্রায় ৫ লাখ শিখ বসবাস করলেও বর্তমানে তা কমে ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নারী, শিশুসহ অনেক শিখ ধর্মাবলম্বী গুরুদুয়ারায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। গতকাল সেখানে হামলা হয়।

ভারতীয় প্রতিনিধিদলের কাবুল সফরের পরপরই এ হামলা হলো। ভারত থেকে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা বিতরণ নিয়ে আলোচনা করতে আফগানিস্তান সফরে যায় ভারতীয় প্রতিনিধিদল।

আফগান ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে নতুন করে ভারতীয় দূতাবাস খোলার ব্যাপারে কথা বলেছে প্রতিনিধি দলটি। গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর বোমা হামলার সংখ্যা কমলেও গত কয়েক মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। এর বেশ কয়েকটির দায় স্বীকার করেছে আইএস। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

ট্যাগ:

কাবুলে গুরুদ্বারে হামলায় উদ্বীগ্ন ভারত

প্রকাশ: ০৯:৪৭:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

গতকাল আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি গুরুদ্বারের সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায় আইএসআইএস খোরাসান জঙ্গি সংগঠন। বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজনের মৃত্যুর খবর উঠে আসে। এছাড়া শিখ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আহত হয় বলে জানা গিয়েছে।

এই খবরটি সামনে উঠে আসার পরেই এবার অ্যাকশনে নামলো ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বর্তমানে ১০০-রও বেশি শিখ এবং হিন্দুদের জন্য ই-ভিসা শুরু করল ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানান, “কাবুলের গুরুদ্বারে আইএসআইএস খোরাসান জঙ্গি সংগঠন দ্বারা একটি বিস্ফোরণ করা হয়। এই ঘটনায় আমরা সকলে অত্যন্ত পরিমাণে চিন্তায় রয়েছি। অবশ্য ঘটনার দিকে আমরা সর্বদাই নজর রেখে চলেছি। গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটনাটির নিন্দা করেছেন। আমরা সকলের সুস্থতা কামনা করছি।”

প্রসঙ্গত, গতকাল সকালে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাসওয়ান এলাকায় একটি গুরুদ্বারের সামনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আইএসআইএস খোরাসান সংগঠন জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। সম্পূর্ণ ঘটনায় এক নিরাপত্তা রক্ষী সহ সওয়িন্দর সিং নামে এক শিখ অধিবাসীর মৃত্যু হয়।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা আহত হয় বলে জানা যায়। যদিও পরবর্তীকালে তাদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘক্ষন ধরে চলে তালিবান সরকার এবং সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে গুলির লড়াই।

এদিকে, আফগানিস্তানের বিস্ফোরণের ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। নিজেদের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক-এ প্রকাশিত এক বার্তায় আইএস বলেছে, মহানবী (সাঃ)-কে অবমাননার প্রতিশোধ নিতে হামলা চালিয়েছে তারা।

গত ২৬ মে এক টেলিভিশন বিতর্কে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) তৎকালীন মুখপাত্র নূপুর শর্মা। বিজেপির দিল্লি শাখার তৎকালীন গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দালও টুইটারে মহানবী (সাঃ)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে উত্তেজনা চলার মধ্যে গতকাল শনিবার কাবুলে একটি গুরুদুয়ারায় বিস্ফোরণ হয়।

এ ঘটনায় আমাক-এ প্রকাশিত বার্তায় আইএস দায় স্বীকার করে বলেছে, হিন্দু, শিখ ও স্বধর্মভ্রষ্টদের—মহানবী (সাঃ)–এর অবমাননাকারীদের যারা সুরক্ষা দিয়েছে—লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। আইএস আরও বলেছে, তাদের এক সদস্য গুরুদুয়ারার এক নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যার পর ভেতরে প্রবেশ করেন। মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়তে থাকেন এবং হ্যান্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটান।

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল নাফি তাকোর বলেন, হামলাকারীরা গুরুদুয়ারায় প্রবেশের সময় অন্তত একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়।

আফগানিস্তানে ১৯৭০–এর দশকে প্রায় ৫ লাখ শিখ বসবাস করলেও বর্তমানে তা কমে ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নারী, শিশুসহ অনেক শিখ ধর্মাবলম্বী গুরুদুয়ারায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। গতকাল সেখানে হামলা হয়।

ভারতীয় প্রতিনিধিদলের কাবুল সফরের পরপরই এ হামলা হলো। ভারত থেকে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা বিতরণ নিয়ে আলোচনা করতে আফগানিস্তান সফরে যায় ভারতীয় প্রতিনিধিদল।

আফগান ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে নতুন করে ভারতীয় দূতাবাস খোলার ব্যাপারে কথা বলেছে প্রতিনিধি দলটি। গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর বোমা হামলার সংখ্যা কমলেও গত কয়েক মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। এর বেশ কয়েকটির দায় স্বীকার করেছে আইএস। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক