ড. শ্রীধর কৃষ্ণস্বামী, সিনিয়র সাংবাদিক: ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার টোকিওতে দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যকার ‘টু-প্লাস-টু’ আলোচনার আগে জাপানের প্রতিমন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় উভয় দেশ পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করবে বলে জানিয়েছে।
আলোচনায় ভারত ও জাপানের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা উভয় দেশের বিমান বাহিনী নিয়ে যৌথ সামরিক মহড়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে। এছাড়াও জাপানি শিল্পের বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দিল্লি।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিংকে উদ্বৃত করে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তিনি জাপানি শিল্পকে ভারতের প্রতিরক্ষা করিডোরে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দুই মন্ত্রী একমত হয়েছেন যে উদ্বোধনী ফাইটার মহড়ার প্রাথমিক আয়োজন দুই দেশের বিমান বাহিনীর মধ্যে আরও বৃহত্তর সহযোগিতা এবং আন্তঃক্রিয়াশীলতার পথ প্রশস্ত করবে।’
জাপানের মতো ভারতও প্রতিবেশি চীনকে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছে। চীনকে মোকাবেলায় সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত।
জাপানে, প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেনের আগ্রাসনের মতো চীনও তাইওয়ানে আগ্রাসন চালাতে পারে, এমন চিন্তা থেকে তার ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি আগামী পাঁচ বছরে জাপানের সামরিক বাজেট দ্বিগুণ করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশে উন্নীত করতে চায় বলে ঘোষণা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে প্রথমবার নিজেদের তৈরি বিমানবাহী রণতরী চালু করেছে দিল্লি। চীনকে মোকাবেলায় এখন টোকিওর সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করছে দিল্লি।
টু-প্লাস-টু বৈঠকের শুরুতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
হায়াশি বলেন, ‘আপনি যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে তাকান, পূর্ব এবং দক্ষিণ চীন সাগরে শক্তি দিয়ে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের একতরফা প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের কথা বাদ দিন।’
দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় বেশিরভাগ জলসীমা দাবি করছে চীন। সেখানে তারা কৃত্রিম দ্বীপগুলিতে সামরিক ফাঁড়ি স্থাপন করেছে। বেইজিং পূর্ব চীন সাগরের জনবসতিহীন জাপানি-শাসিত দ্বীপের মালিকানাও দাবি করছে।
অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রস, জাপান এবং ভারতের সম্মিলিত জোট কোয়াড তাদের আন্তঃকার্যক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকা জুড়ে বার্ষিক নৌ মহড়া করেছে।
গত মে মাসে জাপানে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কোয়াড সম্মেলনে শীর্ষ নেতাদের আলোচনায় তাইওয়ান ইস্যুটি প্রাধান্য পেয়েছিল। সম্মেলনের আগের দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনকে উস্কানি দিয়ে বলেছিলেন, তিনি গণতান্ত্রিক দ্বীপকে রক্ষা করার জন্য শক্তি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক।
তাদের সেই সম্মেলনের দিন রাশিয়ান এবং চীনা যুদ্ধবিমান এই অঞ্চলে যৌথ টহল চালিয়েছিল।
কিশিদা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ‘মুক্ত এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ প্রচারের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত, দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করে তুলতে জাপান ও ভারত একত্রে কাজ করবে বলে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা নিশ্চিত করেছেন। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হামাদা ইয়াসুকাযু এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নিজ নিজ দেশের পররাষ্ট্র প্রধানের সাথে মিলে “টু প্লাস টু” বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে বৃহস্পতিবার জাপানের রাজধানী টোকিওতে সাক্ষাৎ করেন।
অবাধ ও মুক্ত ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বাস্তবায়নে আরও গভীর দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে হামাদা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন উল্লেখ করে এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এর প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর এলাকায় শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তার বিশ্বাস।
এদিকে, প্রথম জাপান-ভারত যৌথ যুদ্ধবিমান মহড়ার জন্য সমন্বয় করে নেয়ার কাজে অগ্রগতি অর্জিত হওয়াকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা স্বাগত জানিয়েছেন। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি বিষয়ে সহযোগিতা করতে সুর্নিদিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষ্যে কাজ করার বিষয়েও তারা সম্মত হন। ইউক্রেন সহ আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও মন্ত্রীরা আলোচনা করেন। একতরফাভাবে স্থিতিস্থীল অবস্থা পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালানো কিংবা শক্তির ব্যবহার বা হুমকির আশ্রয় না নিয়ে প্রতিটি দেশের বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা উচিত হবে বলে উভয় নেতা একমত পোষণ করেন। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক