১০:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসসিও সম্মেলনে যাচ্ছেন মোদী

সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) আসন্ন সম্মেলনে যোগ দিতে উজবেকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মোদী-শি বা মোদী-পুতিন বৈঠকের বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। পশ্চিমাদের ‘বিকল্প’ হিসেবে চীন, ভারত ও রাশিয়ার নেতৃত্বে তৈরি এসসিও ইউরেশিয়ার আঞ্চলিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সংগঠন। এসসিও-র সদস্য দেশগুলো হলো: চীন, ভারত, রাশিয়া, কাজাখস্তান, পাকিস্তান, কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও ইরান।

উজবেকিস্তানে আগামী ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী এসসিও-র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনে ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা হবে বলে ধরেই নেয়া যায়।

একইসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপরও নজর থাকবে বিশ্বের। সেখানে তিনি চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সম্মেলনে ভারতের ভূমিকা কী? এসসিও সম্মেলনে ভারতের অবস্থান বাকি সবার থেকে আলাদা। কারণ দেশটি একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা জোট ‘কোয়াড’ এর সদস্য।

কোয়াডের সদস্য হলেও ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানাতে রাজি হয়নি ভারত। একইসঙ্গে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মস্কো থেকে জ্বালানি তেল কেনা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে দেশটি।

এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে শি জিনপিং ও পুতিনের সঙ্গে মোদী বৈঠক করবেন বলে শোনা গেলেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।

যদি শির সঙ্গে মোদীর বৈঠক হয় তবে তা হবে ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের পর দুই নেতার প্রথম বৈঠক। কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই ওই সংঘাতে ভারতের ২০ সেনা নিহত হন। পরে চীনও তাদের চার সেনা নিহত হওয়ার খবর দেয়।

ওই সম্মেলনে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে মোদী কোনো বৈঠক করবেন কিনা তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে। ২০২০ সালে এসসিও-র জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের একটি বৈঠক চলার সময় পকিস্তানের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল ভারত।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু দেশটির নতুন সরকার পুনরায় ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।

কেনো এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ? আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ দমনে এবং সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে ২০০১ সালে চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান মিলে এসসিও বানিয়েছিল।

এরপর ২০১৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান এসসিওতে যোগ দেয়। এবার ইরানকে পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ দেওয়া হবে। নেটোর মত পশ্চিমা সামরিক জোটের প্রভাব সীমিত করার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এসসিও-র জন্ম হয়েছে বলেই মনে করা হয়।

যদিও এর প্রভাব এখনো সীমিতই আছে। বছরের পর বছর ধরে এর কার্যক্রম আঞ্চলিক নিরাপত্তা থেকে প্রসারিত হয়েছে আঞ্চলিক অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং এমনকি আইন প্রয়োগকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রচুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকার কারণে আরো অনেক দেশ এই ব্লকের সদস্য বা অংশীদার হতে চাইছে।

কিন্তু ব্লকটি এখনো চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে রয়ে গেছে বলেও মনে করেন ‍তারা। মস্কো এখন মধ্য এশিয়ায় তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। এদিকে এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। এই অঞ্চলে চীনের রাজনৈতিক প্রভাবও যথেষ্ট। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

ট্যাগ:

এসসিও সম্মেলনে যাচ্ছেন মোদী

প্রকাশ: ১০:১৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) আসন্ন সম্মেলনে যোগ দিতে উজবেকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মোদী-শি বা মোদী-পুতিন বৈঠকের বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। পশ্চিমাদের ‘বিকল্প’ হিসেবে চীন, ভারত ও রাশিয়ার নেতৃত্বে তৈরি এসসিও ইউরেশিয়ার আঞ্চলিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সংগঠন। এসসিও-র সদস্য দেশগুলো হলো: চীন, ভারত, রাশিয়া, কাজাখস্তান, পাকিস্তান, কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও ইরান।

উজবেকিস্তানে আগামী ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী এসসিও-র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনে ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা হবে বলে ধরেই নেয়া যায়।

একইসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপরও নজর থাকবে বিশ্বের। সেখানে তিনি চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সম্মেলনে ভারতের ভূমিকা কী? এসসিও সম্মেলনে ভারতের অবস্থান বাকি সবার থেকে আলাদা। কারণ দেশটি একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা জোট ‘কোয়াড’ এর সদস্য।

কোয়াডের সদস্য হলেও ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানাতে রাজি হয়নি ভারত। একইসঙ্গে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মস্কো থেকে জ্বালানি তেল কেনা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে দেশটি।

এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে শি জিনপিং ও পুতিনের সঙ্গে মোদী বৈঠক করবেন বলে শোনা গেলেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।

যদি শির সঙ্গে মোদীর বৈঠক হয় তবে তা হবে ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের পর দুই নেতার প্রথম বৈঠক। কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই ওই সংঘাতে ভারতের ২০ সেনা নিহত হন। পরে চীনও তাদের চার সেনা নিহত হওয়ার খবর দেয়।

ওই সম্মেলনে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে মোদী কোনো বৈঠক করবেন কিনা তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে। ২০২০ সালে এসসিও-র জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের একটি বৈঠক চলার সময় পকিস্তানের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল ভারত।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু দেশটির নতুন সরকার পুনরায় ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।

কেনো এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ? আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ দমনে এবং সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে ২০০১ সালে চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান মিলে এসসিও বানিয়েছিল।

এরপর ২০১৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান এসসিওতে যোগ দেয়। এবার ইরানকে পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ দেওয়া হবে। নেটোর মত পশ্চিমা সামরিক জোটের প্রভাব সীমিত করার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এসসিও-র জন্ম হয়েছে বলেই মনে করা হয়।

যদিও এর প্রভাব এখনো সীমিতই আছে। বছরের পর বছর ধরে এর কার্যক্রম আঞ্চলিক নিরাপত্তা থেকে প্রসারিত হয়েছে আঞ্চলিক অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং এমনকি আইন প্রয়োগকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রচুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকার কারণে আরো অনেক দেশ এই ব্লকের সদস্য বা অংশীদার হতে চাইছে।

কিন্তু ব্লকটি এখনো চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে রয়ে গেছে বলেও মনে করেন ‍তারা। মস্কো এখন মধ্য এশিয়ায় তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। এদিকে এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। এই অঞ্চলে চীনের রাজনৈতিক প্রভাবও যথেষ্ট। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক