এতদিনের অপেক্ষার শেষ হচ্ছে। ভারত থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিশ্বের দ্রুততম প্রাণীটিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে থেকেই। কেন্দ্রের মোদী সরকারের উদ্যোগেই সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতাদের দেশে উড়িয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা শুরু হয়। সেই দিন আসছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনের দিনেই দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে আটটি পূর্ণবয়স্ক চিতাকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হবে দেশে। অতিথিদের স্বাগত জানাতে এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৮,৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে উড়িয়ে আনা হবে আটটি আফ্রিকান চিতাকে। এর মধ্যে পাঁচটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী চিতা। মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানেই ঠাঁই হবে তাদের। দেশের অন্য যে সমস্ত জাতীয় অরণ্য বা সংরক্ষণ কেন্দ্রের পরিবেশ আফ্রিকান চিতাদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত, সেখানেই এই প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা হবে।
পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব বলেছেন, নামিবিয়ায় বিশেষ বিমান পাঠানো হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য সেই বিমানের মুখটা ঠিক বাঘের মতো। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, এই প্রজাতির চিতা সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা আছে মধ্যপ্রদেশের অভয়ারণ্যগুলোতে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মধ্যপ্রদেশের অভয়ারণ্যগুলোর পরিবেশ, জলবায়ু আফ্রিকান চিতাদের বসবাসের উপযোগী। কাজেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যে চিতা নিয়ে আসা হবে তার সংরক্ষণে কোনও সমস্যাই হবে না।
ভারতে শেষবার দেখা গিয়েছিল ১৯৪৭ সালে। তিনটি চিতাকে গুলি করে মারা হয়েছিল। তাও সে তিনটি ছিল এশিয়াটিক চিতা। আফ্রিকান চিতা বিলুপ্ত হয়েছে তারও আগে। ভারতে ১৯৪৭ সালের পরে ১৯৬৭-৬৮ সালে চিতার দেখা মিলেছিল। ইতিহাস বলে, মুঘল সম্রাট আকবরের কাছে নাকি ১০ হাজারের বেশি পুষ্যি চিতা ছিল। যার মধ্যে তাঁর সভাঘরেই থাকত হাজারের বেশি চিতা।
রাজপুত, মারাঠা সাম্রাজ্যে নির্বিচারে এই প্রজাতির চিতা শিকার করতেন রাজারা। ব্রিটিশ আমলেও চিতা শিকার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। যার কারণ সবংশে আফ্রিকান চিতাদের অবলুপ্তি। ১৯৪৭ সালে মহারাজা রামানুজ প্রতাপ সিং দেও শেষ তিনটি আফ্রিকান চিতাকে গুলি করে মারেন।
১৭৯৯ থেকে ১৯৬৮ সাল অবধি চিতার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৩০টিতে। তারপর ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৭০ সালে ভারত সরকার একবার উদ্যোগ নিয়েছিল আফ্রিকান চিতাকে দেশে ফিরিয়ে আনার, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। নতুন করে তোড়তোড় শুরু হয় ২০১৩ সালে। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ দফতর ও ন্যাশনাল টাইগার রিজার্ভেশন অথরিটির আবেদন সেই সময় ফিরিয়ে দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। পরবর্তীকালে এনটিসিএ-র রিপোর্টকে শিলমোহর দেয় আইইউসিএন। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক