নওশীন নাওয়ার রাফা: মানব সভ্যতার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে গৌরবময় স্থান দখল করে আছে প্রাচীন মিশরীয়রা। বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতি তাদের অবদানে সমৃদ্ধ। স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে তাদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা বলা যায়। চিত্রকলায় আছে বিশেষ বৈচিত্রপূর্ণ অবদান। লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন, সেচ ব্যবস্থা চালু, চিকিৎসা শাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র অংক শাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান সভ্যতার ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
মিশরীয় সভ্যতার পটভূমি: প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিস্তৃতিকাল মূলত খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০-৫২৫ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত এবং অবস্থান আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে, যা বর্তমানে আমাদের কাছে পরিচিত ইজিপ্ট বা মিশর নামে। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে মিশরে প্রথম সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটে, যার একটি ছিল উত্তর মিশর (নিম্ন মিশর), অপরটি ছিল দক্ষিণ মিশর (উচ্চ মিশর) । খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩২০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত সময়ে নীলনদের অববাহিকায় একটি সার্বভৌম মিশর রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সে সময়টা প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে প্রাক-রাজবংশীয় যুগ বলে পরিচিত। এ সময় থেকে মিশর প্রাচীন সভ্যতায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করে।
ধারণা করা হয়, মিশরে প্রথম রাজবংশের শাসন আমল শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ থেকে। তখন থেকে মিশরের ঐতিহাসিক যুগের শুরু। একই সময়ে নিম্ন ও উচ্চ মিশরকে একত্রিত করে ‘নারমার’ বা ‘মেনেস’ নামের একজন একাধারে মিশরের প্রথম নরপতি এবং পুরোহিত নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম ফারাও এর মর্যাদাও লাভ করেন। এরপর থেকে ফারাওদের অধীনে মিশর প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার চিত্রকলা, স্থাপত্য এবং ভাস্কর্যবিদ্যার অগ্রগতিতে একের পর এক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে শুরু করে। নিচে এ বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করা হলো।
মিশরীয় চিত্রকলা
মিশরের চিত্রশিল্প গড়ে উঠেছিলো মূলত ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে। মিশরীয়দের চিত্রকলা বিশেষভাবে বৈচিত্রপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। মিশরের চিত্রশিল্পের সূচনা হয় সমাধি আর মন্দিরের দেয়াল সাজাতে গিয়ে। তাদের প্রিয় রং ছিল সাদাকালো। সমাধি, পিরামিড, মন্দির, প্রাসাদ, প্রমোদ কানন, সাধারণ ঘর-বাড়ির দেয়ালে মিশরীয় চিত্রশিল্পীরা অসাধারণ ছবি এঁকেছেন। এসব ছবির মধ্যে মিশরের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের কাহিনী ফুটে উঠেছে।
কারুশিল্পেও প্রাচীন মিশরীয় শিল্পীরা অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আসবাবপত্র, মৃৎপাত্র, সোনা, রূপা, মূল্যবান পাথরে খচিত তৈজসপত্র, অলঙ্কার, মমির মুখোশ, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র, হাতির দাঁত ও ধাতুর দ্রব্যাদি মিশরীয় কারুশিল্পের অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ বহন করে।
মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য লিখনপদ্ধতি, লিপি ও কাগজ আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও মিশরীয় চিত্রশিল্পের বিশেষ অবদান রয়েছে। নগর সভ্যতা বিকাশের সঙ্গেই মিশরীয় লিখন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে তারা সর্বপ্রথম ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের বর্ণমালা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। প্রথম দিকে ছবি এঁকেই তারা মনের ভাব প্রকাশ করতো। এই লিখন পদ্ধতির নাম ছিল চিত্রলিপি। এই চিত্রলিপিকে বলা হয় ‘হায়ারোগ্লিফিক’ বা পবিত্র অক্ষর।
ভাস্কর্য
মিশরীয় ভাস্কর্য সেখানকার স্থাপত্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। প্রাচীন বিশ্বসভ্যতায় মিশরীয়দের মতো ভাস্কর্য শিল্পে-অসাধারণ প্রতিভার ছাপ আর কেউ রাখতে সক্ষম হয়নি। ব্যাপকতা, বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় ভাবধারায় প্রভাবিত বিশাল আকারের পাথরের মূর্তিগুলো ভাস্কর্য শিল্পে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে।
প্রতিটি ভাস্কর্য, হোক সেটি মানুষ কিংবা জীবজন্তু- সবই ধর্মীয় ভাবধারা, আচার অনুষ্ঠান, মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। প্রতিটি শিল্পই আসলে ধর্মীয় শিল্পকলা। সর্বশ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য হচ্ছে গিজার অতুলনীয় স্ফিংকস। স্ফিংকস হচ্ছে এমন একটি মূর্তি, যার দেহটা সিংহের মতো, কিন্তু মুখ মানুষের। মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিডটি হচ্ছে ফারাও খুফুর পিরামিড। মন্দিরগুলোতে মিশরীয় ভাস্কর্য স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন প্রতিফলিত হয়েছে।
মিশরীয় ভাস্কর্যে চোখে পড়ার মতো প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো হলো – জড়তা, গতিহীনতা ও ভাবলেশহীনতা। ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রচলিত রীতির প্রাধান্যের ফলে ভাস্কর্যের ধরন হয়েছিলো বিশাল স্মারক জাতীয়। প্রাচীন মিশরের উল্লেখযোগ্য কিছু ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে
১. গিজার গ্রেট স্ফিংকস: প্রাচীন মিশরের ভাস্কর্যের মধ্যে অন্যতম হলো গিজার পিরামিডের সন্নিকটে অবস্থিত স্ফিংকস মূর্তি। একটি বৃহৎ পাথর কেটে এটি নির্মাণ করা হতো। স্ফিংকস মূলত মৃতের এবং মরুভূমির দেবতা। মানুষের মাথা এবং সিংহের দেহের সমন্বয়ে মূর্তিটি গঠিত। মূর্তিটির মাথা ফারাও এর অনুরূপ। ফারাও খুফু এটি নির্মাণ করেছিলেন। তিনি যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক হতে ভীষণ শক্তিশালী ছিলেন তা বোঝানোর জন্যই এরূপ একটি প্রকান্ড মূর্তি নির্মাণ করা হয় বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এটির দিকে তাকালে মনে হয় যেনো প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে সে পাহারা দিচ্ছে পুরো এলাকা।
২. তুতেন খামেনের মুখোশ বা প্রতিকৃতি: রাজা তুতেন খামেনের কফিনের আচ্ছাদনে তার প্রতিকৃতি আঁকা ছিলো। এটি ছিলো সোনার তৈরী। উৎসবের সাজে সে সজ্জিত ছিলো। পোশাকে দামি দূর্লভ পাথর ব্যবহৃত হয়েছে।
৩. খুফু মূর্তি: খুফু মূর্তি হলো একটি প্রাচীন মিশরীয় মূর্তি যা ১৯০৩ সালে স্যার উইলিয়ান ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স পেট্রি দ্বারা আবিস্কৃত হয়েছিল। এটি উচ্চ মিশরের অ্যাবিডোসের খেন্টামেন্টিউ মন্দিরে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি খুফুর একটি ত্রিমাত্রিক চিত্র।
৪. ব্লক মূর্তি: ব্লক মূর্তি হলো প্রাচীন মিশরের মধ্য রাজ্যে আবিষ্কৃত একটি স্মারক মূর্তি। এই মূর্তিটির ক্ষেত্রে সাধারণত অনুমান করা হয় যে, মন্দিরের প্রবেশদ্বারে একজন অভিভাবক বসে আছেন। একজন লোকের হাঁটু তার বুক পর্যন্ত টানা এবং তাঁর হাত হাঁটুর চারপাশে ভাজ করে বসে আছে।
৫. উপবিষ্ট লেখক: দ্য সিটেড স্ক্রাইব ১৮৫০ সালে আবিষ্কৃত একটি ভাস্কর্য। এটি ‘স্কোয়াটিং স্ক্রাইব’ নামেও পরিচিত। এই চুনাপাথরের ভাস্কর্যটিতে একজন মানুষকে বসার অবস্থানে দেখানো হয়েছে। প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে এটি দেখা যাবে।
৬. মেমননের কলসি: মিশরের দক্ষিণের শহর লুক্সরে অবস্থিত ‘মেমননের কলসি’ হলো ফারাও আমেনহোটেপ তৃতীয়ের দুটি বিশাল মূর্তি। এগুলো কোয়ার্টজাইট বেলেপাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং আঠারো মিটার উঁচু। উভয় মূর্তিই ফারাও এর মা, স্ত্রী এবং নীলনদের দেবতা হ্যাপির ছবি খোদাই করা সিংহাসনে বসে আছে। এই দুই মূর্তি দ্বারা মূলত আমেনহোটেপের শ্মশান মন্দিরের প্রবেশদ্বারটিকে চিহ্নিত করা হতো। প্রতিটি মূর্তির স্বতন্ত্র ফারাও আকৃতি আজও লক্ষণীয়, দুটির একটি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
স্থাপত্য
মিশরীয় স্থাপত্যশিল্প এক অনন্য ঐশ্বর্যের দাবিদার। স্থাপত্যশিল্পে তারা অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলো বলেই আজও তাঁদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা বলা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে পরবর্তীতে স্মৃতিসৌধ, প্রাসাদ, মন্দির ও পিরামিড স্থাপত্যে মিশরীয়দের অসামান্য কৃতিত্ব প্রকাশিত হয়। প্রাচীন মিশরের পিরামিড ও মন্দিরসমূহ স্থাপত্যবিদ্যায় মিশরীয়দের সর্বশ্রেষ্ঠ ও চরম উৎকর্ষের নিদর্শন এখনো বহন করছে।
তবে, মিশরীয়রা মনে করতো মৃত ব্যক্তি আবার একদিন বেঁচে উঠবে। সে কারণে দেহকে তাজা রাখার জন্য তারা মৃতদেহ সংরক্ষণ করত। এই পদ্ধতিকে বলা হয় মমি। এই চিন্তা থেকে মমিকে রক্ষার জন্য তারা পিরামিড তৈরি করেছিল। প্রাচীন মিশরীয় স্থাপত্যের সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ এই পিরামিড। এই সভ্যতার স্থাপত্য শিল্পের কয়েকটি উদাহরণ হলো:
১. গিজার পিরামিড: খুফুর পিরামিড বা চিওপসের পিরামিড নামেও পরিচিত। বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে প্রাচীনতম (৪০০০ বছরেরও বেশি)। আধুনিক কায়রোর কাছে গিজা মালভূমিতে নির্মিত, এটি মিশরের সমস্ত পিরামিডগুলোর মধ্যে বৃহত্তম।
২. আবু সিম্বেল মন্দির: বিশাল শক্ত পাথরে খোদাই করা এই দুটি মন্দির দক্ষিণ মিশরে নাসের হ্রদের তীরে অবস্থিত। এগুলো ফারাও রামেসিস দ্বিতীয়ের শাসনামলে নির্মিত এবং দেবতা Ptah, Ra-Horakhty, Amun এবং Hathor -কে উৎসর্গ করা হয়েছিল। বৃহত্তর মন্দিরের বাহ্যিক অংশে (গ্রেট টেম্পল নামেও পরিচিত) রামেসেসের চারটি বিশ মিটার উঁচু মূর্তি রয়েছে, যদিও একটি মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রেট টেম্পল তিনটি হল নিয়ে গঠিত যা পাহাড়ের ৫৬ মিটার প্রসারিত। ১৯৭৯ সালে, আবু সিম্বেল মন্দিরকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষণা করে।
৩. কর্ণক মন্দির: কর্ণক হল থিবেসে অবস্থিত আমুন মন্দিরের আধুনিক দিনের নাম। ফারাও সেনুস্ট্রেট (প্রথম) এর শাসনামলে নির্মাণ শুরু হয়েছিল, তবে এটি বিভিন্ন শাসকের আমলে নির্মিত হয় প্রায় দু হাজার বছরেরও পূর্বে। এটি সূর্য ও বায়ুর দেবতা আমুনকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। এখানে হাইপোস্টাইল হলরুম রয়েছে, যার ১৬ টি সারিতে সাজানো ১৩৪টি কলাম রয়েছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় কমপ্লেক্সের অন্যতম। ১৯৭৯ সালে, এটিকেও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়।
৪. লুক্সর মন্দির: দক্ষিণের শহর লুক্সরে বেশ কিছু প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা রয়েছে, তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হল লুক্সর মন্দির, যা নীল নদের কাছে অবস্থিত। এটিও দেবতা আমুনকে উৎসর্গ করা হয়েছিল এবং এখানে অনেক ফারাওদের মুকুট পড়ানো হয়েছিল। এটি বেলেপাথরের তৈরি।
৫. হাটশেপসুটের মন্দির: হাটশেপসুটের মন্দির হল দেইর এল-বাহারিতে একটি মর্চুরি মন্দির, যা লুক্সর শহর থেকে নীল নদের ওপারে অবস্থিত। এটি ফারাও হাটশেপসুটের শাসনামলে নির্মিত এবং এটি আমুনকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। পরবর্তী জীবনে রাণীকে সম্মান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসের ইতিহাসে এটি একটি বিশেষ স্থান ধারণ করে কারণ এটি এক মহিলা ফারাওর নির্দেশনায় নির্মিত হয়েছিল।
৬. জোসারের পিরামিড: জোসারের পিরামিডটি প্রাচীন মিশরীয় রাজধানী মেমফিসের সমাধিস্থল সাক্কারা নেক্রোপলিসে অবস্থিত। এটি ফারাও জোসারের সমাধি হিসাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, তবে রাজপরিবারের অন্য সদস্যদেরও সেখানে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। ৬২.৫ মিটার উচ্চতার সাথে, এটি চুনাপাথরের বড় ব্লক দিয়ে তৈরি যা একটি বহু-স্তরযুক্ত কাঠামো তৈরি করে এবং উপরের দিকে ক্রমশ ছোট হয়ে যায়। গিজার পিরামিডের বিপরীতে, এটির একটি সমতল ছাদ রয়েছে।
৭. এডফু মন্দির: বাজপাখির মাথার দেবতা হোরাসকে উত্সর্গীকৃত এডফু মন্দিরটি মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম মন্দির। এর সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক বৈশিষ্ট্য হল বিশাল পাইলন – একটি গেটওয়ে, যা দুটি বড় টাওয়ার দ্বারা সজ্জিত এবং ৩৬ মিটার উঁচু। গেটওয়েটি ৩২ টি স্তম্ভ এবং বিভিন্ন উত্সবের দৃশ্য খোদাই করা দেয়াল সহ একটি বৃহৎ প্রাঙ্গণে সরাসরি নিয়ে যায়। মন্দিরটি নিজেই ১৪০ মিটার দীর্ঘ এবং এটি প্রাচীন মিশরের সেরা সংরক্ষিত ধর্মীয় স্মৃতিস্তম্ভের অন্যতম।
মিশরীয় চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের তুলনামূলক চিত্র: প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাস ছিল শিল্পকলায় সমৃদ্ধ। সম্ভবত প্রাচীন মিশরীয়দের মতো অন্য কোনো জাতি জীবনের সকল ক্ষেত্রে এতটা ধর্মীয় নিয়ম-কানুন অনুশাসন দ্বারা প্রভাবিত ছিল না। সে কারণে মানবসভ্যতার অনেক ধ্যান-ধারনা, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠানের জন্ম প্রাচীন মিশরে। মিশরীয়দের এসব বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে তাঁদের চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের মাধ্যমে। আর, শিল্পকলার এসব উপাদান মিশরীয়দের করেছে বিশ্বের অমর এক জাতি। ফলত, মানবজাতি আজও মিশরীয়দের কাছে ঋণী। তাই বলা যায়, মিশরীয় চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য এঁকে অন্যের পরিপূরক।
পরিশেষে, মিশরের ভাস্কর্য, চিত্রকলা ও স্থাপত্যগত জটিলতার পরিকল্পনা কখনও পুরোপুরি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। আজ অবধি বহু প্রাণ পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হয়েছে শুধুমাত্র পিরামিড রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে! পর্যটন খাতে ক্ষতির আশঙ্কা থেকে মিশরের সরকারও কখনো চায়নি মিশরীয় সভ্যতা রহস্যের অবসান হোক! এক্ষেত্রে, আধুনিক প্রযুক্তিও যেনো অন্ধকারে পতিত! বাস্তব অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিবেচনা করেই আমরাও চাই, পৃথিবীর বুকে অনন্তকাল টিকে থাকুক প্রাচীন সভ্যতার এই অমূল্য সম্ভার!
লেখক: শিক্ষার্থী, শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যসূত্র:
১। ‘বিশ্বসভ্যতা’ অধ্যায় (ইউনিট ২, পাঠ: ২.১) ।। ইতিহাস বিভাগ ।। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
২। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার শিল্প-সংস্কৃতির মূল্যায়ন ।। millioncontent.com ।।
৩। হালিমা আকতার সাথী ।। মিশরের চিত্রকলা চর্চার প্রাচীন ইতিহাস ।। https://roar.media/
৪। ছবি সূত্র: উইকিপিডিয়া