০৭:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৬/১১ হামলার মূল হোতারা এখনও নিরাপদে

২৬/১১-র মুম্বই হামলার অপরাধীদের আনার কাজ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। আর তার কারণ একটাই। এই ভয়ঙ্কর হামলার মূল চক্রীরা সুরক্ষিত অবস্থায় লুকিয়ে আছে। শুক্রবার এমনটাই বললেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে কিছু সন্ত্রাসবাদীকে নিরাপত্তা পরিষদ নিষিদ্ধ করতে পারেনি।

রাষ্ট্রসংঘে ‘স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদ ও তার অর্থায়ন মোকাবিলা’ শীর্ষক বৈঠকে নিজের এই মত প্রকাশ করেন বিদেশমন্ত্রী। জাতিসংঘের বিবেচনার জন্য পাঁচটি পয়েন্টের একটি রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস মোকাবিলা কমিটির বিশেষ বৈঠকের অংশ ছিল এটি। ২৬/১১ মুম্বই হানার কেন্দ্রস্থল, মুম্বইয়ের তাজ মহল প্যালেস হোটেলেই এই আলোচনা হয়।

এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে একজনকে জীবিত ধরা হয়েছিল। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে বিচার হয়েছিল এবং দোষী সব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ২৬/১১ হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী এবং পরিকল্পনাকারীরা এখনও নিরাপদে রয়ে গিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হল, নিরাপত্তা পরিষদ রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে কিছু ক্ষেত্রে এই সন্ত্রাসবাদীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারেনি। এটি আমাদের যৌথ বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আমাদের সম্মিলিত স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে।’

সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অর্থায়নের বিষয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, এর অর্থায়নকে দমন করা। কারণ এই টাকার মূলধনই হল সন্ত্রাসবাদের প্রাণ। বাস্তব এটাই যে, সন্ত্রাসবাদের অস্তিত্ব অব্যাহত রয়েছে। ক্রমেই তা প্রসারিত হচ্ছে। এটি একটি অন্তর্নিহিত ছবি তুলে ধরছে। এর থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, সন্ত্রাসবাদীরা প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান পাচ্ছে।’

জয়শঙ্কর রাষ্ট্রসংঘ কমিটির বিবেচনার জন্য পাঁচটি পয়েন্ট উল্লেখ করেন। পাকিস্তানের নাম না করে তিনি এফএটিএফ -এর উল্লেখ করেন। এফএটিএফ-এর সম্পূর্ণ অর্থ হল, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। এই সংগঠন সম্প্রতি পাকিস্তানকে তাদের ধূসর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

জয়শঙ্কর যে পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেন, সেগুলো হল:

১. সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অর্থায়ন প্রতিরোধে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এফএটিএফ-এর মতো অন্যান্য ফোরামের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে রাষ্ট্রসংঘের প্রচেষ্টাকে সর্ব-সমন্বিত করতে হবে।

২. শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে যেন নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত অকার্যকর না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এভাবে সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. অস্ত্র এবং অবৈধ মাদক পাচারের মত আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র এখন বেশ স্পষ্ট ও প্রমাণিত। এটি চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

৫. সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন সূত্র মারফত টাকা সংগ্রহ করছে। ফলে সন্ত্রাসবাদীদের ব্যবহৃত নতুন প্রযুক্তির মোকাবিলায় আমাদের উদ্ভাবনী সমাধান থাকা প্রয়োজন।

মুম্বই হামলার কথা স্মরণ করে জয়শঙ্কর বলেন, ‘১৪ বছর আগে, মুম্বই আমাদের সমসাময়িক সবচেয়ে মর্মান্তিক সন্ত্রাসবাদী হামলার সাক্ষী হয়েছিল। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ১৪০ ভারতীয় এবং ২৩টি অন্যান্য দেশের ২৬ জন নাগরিক প্রাণ হারান। প্রকৃতপক্ষে, পুরো শহরটিই সীমান্তের ওপার থেকে আসা সন্ত্রাসবাদীদের জিম্মায় চলে গিয়েছিল।’

আবেগঘন জয়শঙ্কর বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ মুম্বইবাসীরাও ছিলেন। তিনি বলেন, হামলা শুধু মুম্বই নয়, বিশ্ববাসীর উপর। হত্যার আগে নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের চিহ্নিত করা হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রাষ্ট্রসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে যেন প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। ‘তারপর থেকে, আমরা এই হামলার মাস্টারমাইন্ড এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই কাজটি অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। তাই, আজ এই স্থানে জাতিসংঘ কাউন্টার-টেররিজম কমিটির একত্রিত হওয়াটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ,’ বলেন বিদেশমন্ত্রী।

সন্ত্রাস-বিরোধী এই বৈঠকের আয়োজনের জন্য কেন্দ্র সরকার তাজমহল প্যালেস হোটেলই বেছে নিয়েছিলো। এর ফলে যেন সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিল কেন্দ্র। এই বৈঠকে ঘানার বিদেশমন্ত্রী শার্লি আয়রকর বোচও; গ্যাবনের বিদেশমন্ত্রী মাইকেল মুসা-আদামো; সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর প্রতিমন্ত্রী রিম বিনতে ইব্রাহিম আল হাশিমি, ব্রিটেনের বিদেশ সচিব জেমস ক্লিভারলি; আলবেনিয়ার উপ-বিদেশমন্ত্রী মেগি ফিনো এবং রাষ্ট্রসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি ভ্লাদিমির ভোরনকভ যোগ দেন। ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এটিই ব্রিটেনের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক

 

ট্যাগ:

২৬/১১ হামলার মূল হোতারা এখনও নিরাপদে

প্রকাশ: ০৩:০০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২

২৬/১১-র মুম্বই হামলার অপরাধীদের আনার কাজ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। আর তার কারণ একটাই। এই ভয়ঙ্কর হামলার মূল চক্রীরা সুরক্ষিত অবস্থায় লুকিয়ে আছে। শুক্রবার এমনটাই বললেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে কিছু সন্ত্রাসবাদীকে নিরাপত্তা পরিষদ নিষিদ্ধ করতে পারেনি।

রাষ্ট্রসংঘে ‘স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদ ও তার অর্থায়ন মোকাবিলা’ শীর্ষক বৈঠকে নিজের এই মত প্রকাশ করেন বিদেশমন্ত্রী। জাতিসংঘের বিবেচনার জন্য পাঁচটি পয়েন্টের একটি রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস মোকাবিলা কমিটির বিশেষ বৈঠকের অংশ ছিল এটি। ২৬/১১ মুম্বই হানার কেন্দ্রস্থল, মুম্বইয়ের তাজ মহল প্যালেস হোটেলেই এই আলোচনা হয়।

এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে একজনকে জীবিত ধরা হয়েছিল। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে বিচার হয়েছিল এবং দোষী সব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ২৬/১১ হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী এবং পরিকল্পনাকারীরা এখনও নিরাপদে রয়ে গিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হল, নিরাপত্তা পরিষদ রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে কিছু ক্ষেত্রে এই সন্ত্রাসবাদীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারেনি। এটি আমাদের যৌথ বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আমাদের সম্মিলিত স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে।’

সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অর্থায়নের বিষয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, এর অর্থায়নকে দমন করা। কারণ এই টাকার মূলধনই হল সন্ত্রাসবাদের প্রাণ। বাস্তব এটাই যে, সন্ত্রাসবাদের অস্তিত্ব অব্যাহত রয়েছে। ক্রমেই তা প্রসারিত হচ্ছে। এটি একটি অন্তর্নিহিত ছবি তুলে ধরছে। এর থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, সন্ত্রাসবাদীরা প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান পাচ্ছে।’

জয়শঙ্কর রাষ্ট্রসংঘ কমিটির বিবেচনার জন্য পাঁচটি পয়েন্ট উল্লেখ করেন। পাকিস্তানের নাম না করে তিনি এফএটিএফ -এর উল্লেখ করেন। এফএটিএফ-এর সম্পূর্ণ অর্থ হল, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। এই সংগঠন সম্প্রতি পাকিস্তানকে তাদের ধূসর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

জয়শঙ্কর যে পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেন, সেগুলো হল:

১. সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অর্থায়ন প্রতিরোধে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এফএটিএফ-এর মতো অন্যান্য ফোরামের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে রাষ্ট্রসংঘের প্রচেষ্টাকে সর্ব-সমন্বিত করতে হবে।

২. শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে যেন নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত অকার্যকর না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এভাবে সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. অস্ত্র এবং অবৈধ মাদক পাচারের মত আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র এখন বেশ স্পষ্ট ও প্রমাণিত। এটি চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

৫. সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন সূত্র মারফত টাকা সংগ্রহ করছে। ফলে সন্ত্রাসবাদীদের ব্যবহৃত নতুন প্রযুক্তির মোকাবিলায় আমাদের উদ্ভাবনী সমাধান থাকা প্রয়োজন।

মুম্বই হামলার কথা স্মরণ করে জয়শঙ্কর বলেন, ‘১৪ বছর আগে, মুম্বই আমাদের সমসাময়িক সবচেয়ে মর্মান্তিক সন্ত্রাসবাদী হামলার সাক্ষী হয়েছিল। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ১৪০ ভারতীয় এবং ২৩টি অন্যান্য দেশের ২৬ জন নাগরিক প্রাণ হারান। প্রকৃতপক্ষে, পুরো শহরটিই সীমান্তের ওপার থেকে আসা সন্ত্রাসবাদীদের জিম্মায় চলে গিয়েছিল।’

আবেগঘন জয়শঙ্কর বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ মুম্বইবাসীরাও ছিলেন। তিনি বলেন, হামলা শুধু মুম্বই নয়, বিশ্ববাসীর উপর। হত্যার আগে নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের চিহ্নিত করা হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রাষ্ট্রসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে যেন প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। ‘তারপর থেকে, আমরা এই হামলার মাস্টারমাইন্ড এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই কাজটি অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। তাই, আজ এই স্থানে জাতিসংঘ কাউন্টার-টেররিজম কমিটির একত্রিত হওয়াটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ,’ বলেন বিদেশমন্ত্রী।

সন্ত্রাস-বিরোধী এই বৈঠকের আয়োজনের জন্য কেন্দ্র সরকার তাজমহল প্যালেস হোটেলই বেছে নিয়েছিলো। এর ফলে যেন সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিল কেন্দ্র। এই বৈঠকে ঘানার বিদেশমন্ত্রী শার্লি আয়রকর বোচও; গ্যাবনের বিদেশমন্ত্রী মাইকেল মুসা-আদামো; সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর প্রতিমন্ত্রী রিম বিনতে ইব্রাহিম আল হাশিমি, ব্রিটেনের বিদেশ সচিব জেমস ক্লিভারলি; আলবেনিয়ার উপ-বিদেশমন্ত্রী মেগি ফিনো এবং রাষ্ট্রসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি ভ্লাদিমির ভোরনকভ যোগ দেন। ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এটিই ব্রিটেনের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক