“রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা যেন দেশের সীমান্তকে দুর্বল না করে।” কলকাতায় এসে এমনই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। বৃহস্পতিবার, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টে বা আইআইএমের পড়ুয়াদের সামনে ভাষণ দেন তিনি।
সেখানে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের রাজনীতি যেন জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী না হয়।” সব রাজনৈতিক নেতাদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিন, জম্ম-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের প্রসঙ্গ জয়শংকরকে প্রশ্ন করেন আইআইএমের পড়ুয়ারা। উত্তরে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা সাময়িকভাবে খর্ব করা হয়েছে। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, কারণ উপত্যকায় এমন কিছু সমস্যা রয়েছে, যা গোটা বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।”
তবে এই ইস্যুতে একবারের জন্যেও পাকিস্তানের নাম মুখে আনেননি তিনি। “আমাদের প্রতিবেশীর উচিত সন্ত্রাসবাদের নির্মূলের ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকার মূল্যায়ণ করা।” আইআইএমের পড়ুয়াদের সামনে বলেন জয়শংকর।
বর্তমান সময়ে বিশ্বের কোনও সমস্যাই ভারতের অংশগ্রহণ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত উন্নতি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে যা গুরুত্বপূর্ণ।”
উল্লেখ্য, গত মাসেই রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ২৬/১১-র মুম্বই হামলা নিয়ে নাম না করে পাকিস্তানকে নিশানা করেছিলেন জয়শংকর। “মুম্বই হামলার চক্রীরা এখনও মুক্ত, তাঁদের কোনও সাজা হয়নি।” আন্তর্জাতিক মঞ্চে বলেছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী।
গত মঙ্গলবার সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও-র একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন জয়শংকর। সেখানে নাম না করে চীনকে বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। বিদেশমন্ত্রী বলেন, “অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানানো উচিত।”
এর পাশাপাশি, এসসিও ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ানোর জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথাও বলেছেন তিনি। মধ্য এশিয়ার স্বার্থেই এসসিও ভুক্ত দেশগুলির একজোট হয়ে কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মঙ্গলবারের বৈঠকে ছিলেন পাকিস্তান, কাজাখস্তান, ও কিরগিস্তান-সহ মোট ৯টি দেশের প্রতিনিধিরা।
এদিকে, চলতি মাসেই রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম মস্কো যাচ্ছেন তিনি। ৮ নভেম্বর সেখানে পৌঁছবেন তিনি। সেখানে রুশ বিদেশমন্ত্রী সর্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করবেন জয়শংকর।
সূত্রে খবর, খনিজ তেলের দাম এবং খাদ্য সংকট নিয়ে কথা হবে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীর। উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার থেকে কম দামে খনিজ তেল কিনছে ভারত। কিন্তু রাশিয়াকে ঠেকাতে সম্প্রতি জি-৭ ভুক্ত দেশগুলি নতুন করে মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হবে। এমন আবহে তেল আমদানি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে মিলে নয়াদিল্লি কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক