ভারতের মণিপুরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে জি-২০ গ্রুপের আদলে তৈরী বি-২০ গ্রুপের বৈঠক। বিজনেস -২০ বা সংক্ষেপে বি-২০ গ্রুপের এই বৈঠকটি আয়োজন করেছে ভারতীয় শিল্প কনফেডারেশন। ১৭ ফেব্রুয়ারী শুরু হওয়া এই বৈঠকটি চলবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারী অবধি। এতে অংশ নিয়েছেন প্রায় ২৩ টি দেশের প্রতিনিধিগণ।
এর মূল উদ্দেশ্য জি২০ সদস্য দেশগুলোর ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে অংশীদারিত্ব অন্বেষণ করতে একটি উন্নয়ন চালক হিসাবে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর বিকাশের জন্য একটি সাধারণ এজেন্ডা তৈরি করা। মূলত এজন্যেই ভারতীয় শিল্প কনফেডারেশন উত্তর-পূর্ব ভারতের চারটি রাজ্য জুড়ে বি২০ প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জি২০-গ্রুপের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়েছে ভারত। ১ ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত জি২০-এর সভাপতির দায়িত্ব থাকবে ভারতের উপর। এই দায়িত্ব গ্রহণ করার মুহূর্ত হতে পরবর্তীতে দেশজুড়ে রাজ্যগুলোতে জি-২০ গ্রুপের বিভিন্ন বৈঠকসমূহ আয়োজন ঘিরে রয়েছে বেশ উত্তেজনা। এর মধ্যেই উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো নিয়ে জি-২০ এর মতই বি-২০ নামক এই প্রোগ্রাম আয়োজন করেছে ভারতীয় শিল্প কনফেডারেশন।
বিজনেস ২০ বা বি-২০ হল একটি গ্রুপ যা ২০টি দেশ (জি২০) ফোরামের গ্রুপের মধ্যে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব করে। এই সংস্থাটি ব্যবসায়িক সম্প্রদায়কে জি২০-এর সাথে জড়িত হওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নকে সমর্থন করতে পারে এমন নীতিগুলোর সুপারিশ প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
এই অংশীদারিত্বকে আরও অন্বেষণ করার জন্য ভারতীয় শিল্প কনফেডারেশন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয় এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্য সরকারগুলোর সহযোগিতায় মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং সিকিমে বি২০ অনুষ্ঠানের আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এই বি২০ প্রোগ্রামগুলো উত্তর-পূর্ব অঞ্চল বৈশ্বিক এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য যে সম্ভাবনাগুলো অফার করে, তা প্রদর্শন করবে। সেইসাথে শিল্প খাতে বহুপাক্ষিক ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের সুযোগগুলো তুলে ধরবে যেখানে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মূল শক্তি রয়েছে৷
জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে বি২০ প্রোগ্রাম, ১৭ থেক ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এই আয়োজনে আইসিটি, চিকিৎসা পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা এবং তাঁতের উপর ফোকাস করা হবে। উত্তর-পূর্বের আরেকটি রাজ্য মিজোরামের রাজধানী আইজলে বি২০ প্রোগ্রাম, ১ থেকে ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এই আয়োজন নগর পরিকল্পনা, অবকাঠামো, এবং দক্ষতা উন্নয়নের উপর ফোকাস করবে।
এদিকে, সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে ১৬ থেকে ১৯ মার্চ পর্যটন, আতিথেয়তা, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং জৈব চাষের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বি২০ প্রোগ্রামের আয়োজন করবে। সবশেষে, নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমায় বি২০ প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হবে ৪ থেকে ৬ এপ্রিল। এখানে কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের উপর ফোকাস করবে।
ব্যবসায়িক ২০ মিটিং ছাড়াও প্রতিটি রাজ্য পর্যটন দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণ, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অংশগ্রহণকারীদের উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে পরিচিত করার জন্য একটি গালা ডিনারের আয়োজন করবে। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য বি২০ ইন্ডিয়া ইনিশিয়েটিভস-এর অগ্রদূত প্রোগ্রামে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডঃ রাজকুমার রঞ্জন সিং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অনন্য শক্তি এবং এর ব্যবসায়িক সম্ভাবনার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি কূটনৈতিক মিশন এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সংস্থার প্রতিনিধিদের উত্তর-পূর্বে নির্ধারিত বি২০ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আমন্ত্রণও জানান।
এই সময় তিনি উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখ্য করে বলেন, “গত আট বছরে এই অঞ্চলে বিমানবন্দরের সংখ্যা নয় থেকে ষোলতে উন্নীত হয়েছে। এই অঞ্চলে সংযোগকারী ফ্লাইটের সংখ্যাও ১০০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৪ সালের আগে প্রায় ৯০০টি ফ্লাইট থেকে আজ প্রায় ১৯০০টি ফ্লাইটে উন্নিত হয়েছে। উপরন্তু, অনেক উত্তর-পূর্ব রাজ্য ভারতীয় রেলওয়ে মানচিত্রে প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে, যখন ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে পানিপথ প্রসারিত করার প্রচেষ্টাও করা হচ্ছে।” খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক