ভারত স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদেশের ওপর ন্যূনতম নির্ভরতাও দূর করার চেষ্টা করছে। সরকার সারাদেশে নতুন করে আরও ১,৫০,০০০ স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করবে। সোমবার, ‘স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা’ বিষয়ক একটি বাজেট পরবর্তী ওয়েবিনারে ভাষণ দেওয়ার সময় এমন বক্তব্যই রাখলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসার সুযোগ সকলের জন্য সুলভ করে তোলার মতো বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই কারণে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন তথা স্বাস্থ্য পরিচর্যাকে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দায়িত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে বিষয়টিকে সরকারের একটি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী রূপে গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।”
মোদী বলেন, “স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টিকে কোভিড পূর্ববর্তী এবং অতিমারী পরবর্তী এই দুটি দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচার করা উচিৎ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থাও অতিমারী পরিস্থিতিতে কিভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, তা আমরা চাক্ষুষ করেছি। অতিমারী পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যের মতো বিষয়টিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়েছে, ভারত তখন আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ‘এক অভিন্ন পৃথিবী এবং এক অভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। মানুষ, প্রাণী, গাছপালা – যাই হোক না কেন, সজীব সকল বস্তুর প্রতি যত্ন নেওয়ার মতো গুরু দায়িত্বকে এই দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।”
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অতিমারী জনিত পরিস্থিতিতে বিশ্বের যোগান-শৃঙ্খল কিভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, তা আজ আর কারুর অজানা নয়। ঐ সময়ে দুর্ভাগ্যবশত ওষুধ, চিকিৎসা এবং চিকিৎসা সম্পর্কিত সাজ-সরঞ্জামের মতো জীবনদায়ী উপায়সমূহ কিভাবে মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশে্র কারায়ত্ত হয়ে পড়েছিল, তাও আমরা লক্ষ্য করেছি। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি সুষ্ঠু ও নিরন্তর যোগান-শৃঙ্খল গড়ে তুলতে বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ।”
গুরুতর ধরনের অসুস্থতার মোকাবিলায় চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত করে তুলতে এক শক্তিশালী স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপর বিশেষ জোর দেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ যাতে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে বাড়ির কাছাকাছি প্রাথমিক চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারেন, সেজন্য সারা দেশে দেড় লক্ষেরও বেশি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলোতে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং হার্টের অসুখের জন্য পরীক্ষা করানোরও সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনের আওতায় দেশের ছোট ছোট শহর ও গ্রামগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে বলেও মোদী তাঁর ভাষণে অবহিত করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিল্পোদ্যোগী, বিনিয়োগকারী এবং পেশাদারদের এজন্য নানা ধরনের নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে গত কয়েক বছরে ২৬০টিরও বেশি নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পঠন-পাঠনের জন্য আসন সংখ্যাও ২০১৪’র তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ সংখ্যায়। শুধু তাই নয়, মেডিকেল কলেজগুলির কাছাকাছি ১৫৭টি নার্সিং কলেজ স্থাপন মানবসম্পদ বিকাশের লক্ষ্যে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র দেশের চাহিদা মেটানোই নয়, বিশ্ববাসীর প্রয়োজনেও এগুলি বিশেষভাবে কাজে আসবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পরিষেবা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টিকে সকলের কাছে সুলভ করে তুলতে সরকার প্রযুক্তির উপর আরও বেশি করে জোর দিচ্ছে। ডিজিটাল হেলথ আইডি-র মাধ্যমে সঠিক সময়ে চিকিৎসা পরিষেবাকে সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য। অন্যদিকে, ই-সঞ্জিবনী কর্মসূচির আওতায় ১০ কোটিরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছেন চিকিৎসকদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণের সুবাদে।
রক্তাল্পতা ও অপুষ্টির মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মিলেট তথা বাজরা যাতে স্থান পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বর্তমান বছরটিকে আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ রূপে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘সবকা প্রয়াস’ অর্থাৎ ‘সকলের মিলিত প্রচেষ্টায়’ এক উন্নত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকেই প্রয়োজনীয় মতামত ও পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান তিনি। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক