ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির অধীনে গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে অনুষ্ঠিত হয়েছে বি২০ বৈঠক। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক নয়া স্টার্টআপ প্রতিনিধি, যার মধ্যে ছিলেন ২৪টি দেশের প্রায় ৫০ জন বিদেশী প্রতিনিধি। এই বৈঠকে সিকিমের অর্গানিক ফার্মিং তুলে ধরা হয় বিশ্বের সম্মুখে। বৈঠকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়, যেমন পর্যটন, হসপিটালিটি ও ফার্মাসিউটিক্যালস।
সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং উপস্থিত প্রতিনিধিদের সামনে তার ভাষণে সিকিমকে বিশ্বের ‘গ্রিনেস্ট অ্যাগ্রো-ইকোলজিক্যাল ডেস্টিনেশন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাহায্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সীমিত কৃষিজমিতে বেশিমাত্রায় উৎপাদনের জন্য এরকম গ্রিন টেকনোলজির প্রয়োজন রয়েছে সিকিমের।
তিনি সিকিমের নবপ্রজন্মের কৃষকদের জন্য ‘ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট’-এর প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে বলেন, তাদের জন্য অর্গানিক ফার্মিংয়ের প্রশিক্ষণের নতুন পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে। বি২০ বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল ‘কনফারেন্স অন অপর্চুনিটিজ ফর মাল্টিল্যাটারাল বিজনেস পার্টনারশিপ ইন ট্যুরিজম, হসপিটালিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড অর্গানিক ফার্মিং’।
সিকিমের মুখ্যসচিব ভি বি পাঠকও এই বৈঠকে ভাষণ দেন। আর্থিক সম্ভাবনা-সহ জি২০ দেশগুলির সঙ্গে সিকিমের ব্যবসায়িক সহযোগিতার পথ খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বৈঠক বিশেষ সুযোগ এনে দিয়েছে। স্টার্টআপ ২০ ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে গ্যাংটকে, ১৮-১৯ মার্চ।
ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির আওতাধীনে উত্তরপূর্বাঞ্চলে অনুষ্ঠিতব্য বি২০’র চারটি বৈঠকের তৃতীয়টি হল সিকিমে। উল্লেখ্য, বি২০ হল গ্লোবাল বিজনেস কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনার জন্য জি২০’র অফিসিয়াল ডায়ালগ ফোরাম এবং জি২০’র অন্যতম প্রধান ‘এনগেজমেন্ট গ্রুপ’।
চলুন দেখে নিই সিকিমে জৈব চাষের বিশদ বিবরণ:
১। রাজ্যটি ২০০৩ সাল থেকে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে এবং কৃষকদের জৈব পদ্ধতিতে স্যুইচ করতে উত্সাহিত করেছে৷
২। সিকিমকে দেশের প্রথম জৈব রাজ্য ঘোষণা করা হয়। এটি প্রচুর পরিমাণে জৈব ফল, শাকসবজি এবং মশলা উত্পাদন করে।
৩। সিকিমের জৈব উৎপাদনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসল যেমন চাল, গম, ভুট্টা, বাজরা, শাকসবজি, ফল এবং মশলা।
৪। সরকার কৃষকদের জৈব চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করতে এবং তাদের পণ্য বাজারজাত করতে সহায়তা করার জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে।
৫। জৈব পণ্যের সত্যতা এবং গুণমান নিশ্চিত করতে রাজ্য তার নিজস্ব শংসাপত্র প্রক্রিয়াও তৈরি করেছে, যা সিকিম অর্গানিক সার্টিফিকেশন এজেন্সি নামে পরিচিত।
৬। সিকিমের জৈব চাষ শুধুমাত্র পরিবেশের জন্যই উপকার করেনি বরং উচ্চ আয় ও নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করে কৃষকদের জীবনযাত্রার উন্নতি করেছে।
৭। রাজ্যটি টেকসই কৃষি এবং ইকো-ট্যুরিজমের প্রতি আগ্রহী বিনিয়োগকারী এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে, যার স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
৮। বি২০ সভায় সিকিমের উপস্থাপনা জৈব চাষের সুবিধাগুলি তুলে ধরে, যেমন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা এবং খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতি করা।
৯। রাজ্য বিনিয়োগকারীদেরকে জৈব চাষ, কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, ইকো-ট্যুরিজম এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সুযোগ অন্বেষণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং তাদের একটি অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং নীতি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
১০। গ্যাংটকে বি২০ বৈঠকে কৃষি, অর্থ এবং প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন দেশ ও সেক্টরের ৪০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিল। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক