ভারতে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। দেশটিতে গত বছর বাঘের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বের জঙ্গলে থাকা ৭৫ শতাংশ বাঘের বাস এখন ভারতে। গত রোববার সর্বশেষ বাঘশুমারির তথ্য প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব কথা বলেছেন। এদিন মোদি বলেছেন, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল—এই ৪ বছরে দেশে কম করে হলেও ২০০টি বাঘ বেড়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ভারতের বাঘশুমারিতে বলা হয়েছিল, ভারতে বাঘের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৭টি। ২০২২ সালে ভারতে সেই বাঘের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৬৭টি। সর্বশেষ শুমারিতে আরও বলা হয়েছিল, বিশ্বের জঙ্গলে থাকা বাঘের ৭০ শতাংশের বাস ভারতে। আর এখন তা বেড়ে ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
একসময় গোটা এশিয়া মহাদেশজুড়ে বিচরণ করতো বাঘ। গত শতাব্দীর শুরুতেও বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখের বেশি। কিন্তু এরপরই দ্রুত কমে যেতে থাকে বাঘের সংখ্যা। বিশ্বে বাঘের সবথেকে বড় আবাস্থল ভারতের বনগুলো। অথচ ২০০৬ সালে ভারতে বাঘের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৪১১ টিতে।
তবে গত কয়েক দশক ধরে বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা এই পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। ২০২৩ সালে এসে ভারতে বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৬৭টিতে। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) হিসাবে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ৪ হাজার ৫০০। অর্থাৎ ভারতে রয়েছে বিশ্বের ৭০ শতাংশ বাঘ।
ভারতে রয়েছে বাঘের জন্য ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার অরণ্য। দেশটিতে প্রতি চার বছর অন্তর ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথোরিটি দেশজুড়ে বাঘশুমারি করে থাকে। ক্যামেরা ট্র্যাপ এবং কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে গণনা করা হয় বাঘের সংখ্যা।
সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গ অংশেও বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ১০০-তে দাঁড়িয়েছে। ক্যামেরা ট্র্যাপের মাধ্যমে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে সুন্দরবন কর্তৃপক্ষ এই সংখ্যা পেয়েছে।
এভাবে ভারতীয় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পুরো বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য ইতিবাচক ঘটনা। ভারতে ১৯৭৩ সালে প্রথম বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প চালু করে।
এ বছর এই প্রকল্পের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোববার এক ভাষণে বলেন, আমাদের বাঘের সাথে সম্পর্কিত হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। অনেক উপজাতি গোষ্ঠীতে বাঘকে ভাই হিসাবে বিবেচনা করা হয়।মানব জাতির জন্য একটি ভাল ভবিষ্যত তখনই সম্ভব যখন আমাদের পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে এবং আমাদের জীববৈচিত্র্য প্রসারিত হতে থাকে। মোদি একইদিনে দু’টি টাইগার রিজার্ভও পরিদর্শন করেছেন।
১৯৪০ এর দশকে মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাঘের সংখ্যা তীব্রভাবে কমতে শুরু করে। ডব্লিউডব্লিউএফ-এর মতে কৃষি সম্প্রসারণ, বন উজাড় এবং অবকাঠামোর কারণে বাঘের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। বাঘ হল নির্জন পছন্দ করা প্রাণী, যাদের ঘোরাঘুরি ও শিকারের জন্য বড় অঞ্চলের প্রয়োজন হয়। একশ বছরে বাঘের বিচরণভূমির ৯৩ শতাংশই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এতেই বুঝা যায়, গত একশ বছরে মানুষ ও বাঘের মধ্যে সংঘাত সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রায়ই বাঘরা বাধ্য হয়েছে মানুষের বসতিতে প্রবেশ করতে এবং আক্রমণ করতে। শুধু বাঘই নয়, ভারতের বিপন্ন হাতিরাও প্রায়শই কৃষি জমিতে ঘুরে বেড়ায় এবং ফসল গ্রাস করে।
ভারতের জন্য জনসংখ্যা একটি বড় সমস্যা। ১৯৭১ সালে দেশটিতে ৫৪ কোটি মানুষ ছিল। কিন্তু এখন তা বেড়ে ১৪০ কোটি ছুঁয়েছে। এই বছর বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হতে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও বাঘ শিকার ভারতে বেশ জনপ্রিয় ছিল। হাজার হাজার বাঘ হত্যা করা হয়েছে শুধু শিকারের উদ্দেশ্যে। বাঘ শিকারকে মর্যাদার প্রতীকও বিবেচনা করা হয় এই উপ মহাদেশে। যদিও ১৯৭২ সালেই ভারতে বাঘ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তাতে শিকার বন্ধ হয়ে যায়নি। ২০০৫ সালে ভারতের একটি সংরক্ষিত বনে বাঘ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়, যার জন্য দায়ী করা হয় এই অবৈধ শিকারকেই।
তবে ভারত এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশটি বাঘ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যার ফল পেতে শুরু করেছে দেশটি। এখন প্রতিবেশী যেসব দেশে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গেও কাজ করতে আগ্রহী ভারত। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া ও ভুটানের সঙ্গে চুক্তি করেছে নয়া দিল্লি। শুধু বাঘের ক্ষেত্রেই নয়, এ জাতীয় বিপন্ন অন্য প্রজাতিকেও রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। গত মার্চ মাসে ভারতে জন্ম নেয় ৭০ বছরের মধ্যে প্রথম চিতা। অথচ একসময় ভারত থেকে চিতা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
২০১০ সালে সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গ অংশে পরিচালিত বাঘশুমারিতে মিলেছিল ৭০টি বাঘের খোঁজ। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬-এ। ২০১৮ সালে তা আরও বেড়ে ৮৮টিতে দাঁড়ায়। আর সর্বশেষ ২০২২ সালে সেই সংখ্যা ১০০-তে দাঁড়িয়েছে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক