১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“মাটিই আমাদের সব কর্মের শেকড়”

সাদিয়া রহমান, কৃষিবিদ: ০৫ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয়ে গেলো ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই দিনটি উদযাপিত হয়েছে যথাযথ গুরুত্বের সাথেই। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে দেশব্যাপী। আমাদের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল সায়েন্স বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়তে আসায় আমারও সৌভাগ্য হয়েছে দিনটি উদযাপনের সঙ্গে আদ্যন্ত জড়িয়ে থাকার। তাই, আজকের লেখনীর উদ্দেশ্য, পাঠকের সঙ্গে মৃত্তিকা দিবসের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব নিয়ে সম্যক আলোচনা করা।

অস্বীকার করার উপায় নেই, মাটি আমাদের মা। মাটিই আমাদের সব কর্মের শেকড়। আমরা এই মাটির সৃষ্টি। এই মাটিকে কেন্দ্র করেই আমাদের বড় ও বেড়ে উঠা এবং মাটিতেই আমরা বিলীন হবো৷ তাই, মাটির প্রতি আমাদের দায়বোধও অসীম। একজন কৃষিবিদ হিসেবে এই মাটির গুরুত্ব অন্য দশটা মানুষের চেয়ে আমি বেশিই অনুধাবন করতে পারি, সেটাও সত্য! এই গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বিশ্বের নীতি-নির্ধারকেরাও! তাই, ২০১৩ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ০৫ ডিসেম্বরকে অফিশিয়ালি বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৪ হতে অদ্যবধি প্রতিবছর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালন করা হয় ৫ ডিসেম্বর।

তবে এর প্রেক্ষাপট শুরু হয় আরও পূর্বে। উদ্ভিদের জন্ম-বৃদ্ধিতে ও মানবকল্যাণে মৃত্তিকার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতেই মূলত বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস নির্ধারণ করা হয়েছে। মৃত্তিকার সঠিক পরিচর্যার গুরুত্ব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মৃত্তিকা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন (আইইউএসএস) ২০০২ সালে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করে। পরে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অনুমোদন লাভের পর প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের প্রায় ৬০ হাজারের বেশি মৃত্তিকাবিজ্ঞানী এ দিবসটি সাড়ম্বরে পালন করে থাকেন। মৃত্তিকা সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি এবং তার প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদেরই নিতে হবে। বিশ্বের সব দেশে সুস্থ মৃত্তিকার সুফল লাভে উৎসাহিত করতেই এ দিবস পালন করা হয়।

এবারের ওয়ার্ল্ড সয়েল ডে’র মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো- ‘মাটি ও পানি: জীবনের উৎস’। সত্যই তাই! ভালো ও স্বাস্থ্যকর ফসল পেতে মাটির গুরুত্ব এবং পানি ও মাটির মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝানোর বিকল্প নেই। জাতিসংঘ তার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে লিখেছে, “সাসটেইনেবল সয়েল ম্যানেজম্যান্ট প্র্যাকটিস, অল্প চাষাবাদ, ফসলের পরিবর্তন, জৈব পদার্থ সংযোজন এবং কভাক ক্রপিং মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এবং মাটির ক্ষয় হ্রাস করে এবং জলের অনুপ্রবেশ এবং সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে পারে। এই প্রক্রিয়াগুলি মাটির জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে, উর্বরতা বাড়ায় এবং কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন ঠিক রাখে শুধু তাই নয় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সব প্রক্রিয়া”

মোদ্দা কথা, মাটি ক্ষয়, উর্বরতা হ্রাস এবং জৈব পদার্থের ক্ষতি থেকে মাটিকে রক্ষা করা এবং মাটির গুণগত মান বজায় রাখাটা মানুষের জীবন এবং খাদ্য ব্যবস্থায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি বছর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালন করা হয়। বিশ্বের সমস্ত নাগরিকেরই মাটি ভালো রাখার দিকে খেয়াল রাখতে এবং সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণও বটে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ভূমির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিভিন্ন গবেষনার তথ্য অনুযায়ী, এশিয়াতে মাটি ক্ষয়ের হার সবচেয়ে বেশি এবং তা বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি।

এই মাটি ক্ষয়ের মূল কারণ হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাক, লবনাক্ততা ও অম্লত্ব, মাটির নিচে শক্ত আবরণ সৃষ্টি হওয়া, মাটির বায়ু চলাচলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ও জলাবদ্ধতা তৈরি, অযৌক্তিক ব্যবস্থাপনা, ভূমির অধিকতর ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক পুষ্টি কমে যাওয়া, যাতে ঘটে মাটির স্বাস্থ্য হানি, জৈব সার মাটির প্রাণ আর এ জৈব সার কমে গিয়ে মাটি নিষ্প্রাণ হবার উপক্রম, বিভিন্ন কারণে মাটি থেকে পুষ্টি সরে যাওয়া বা কমে যাওয়া (ইমারত অট্টালিকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার প্রতিষ্ঠা, ইটের ভাটা প্রতিষ্ঠা), ভূপৃষ্ঠের পানি অযৌক্তিকভাবে বেশি পরিমাণে তোলা এবং অযাচিত ব্যবহারে পানির স্তর কমে যাওয়া, নিম্নমানের সেচের পানির ব্যবহার, মাটির ও ভূপৃষ্ঠের পানির দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে, টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই।

আমাদের বুঝতে হবে যে, মাটিতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রথমে ভূমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এ যাবত অর্জিত জ্ঞানে বলতে পারি, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং তাদের ক্ষয় হওয়া রোধ করার স্বার্থে শুধুমাত্র সামাজিকভাবে চিন্তা না করে, মাটি ব্যবহারের যৌক্তিকতা এবং মাটির স্বাস্থ্য বিবেচনায় রেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশকে যথাযথ ও স্বাভাবিক রাখার জন্যও ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা ঠিক রেখে কম বিনিয়োগে বেশি লাভ করার কৌশল অবলম্বন, প্রকৃতির সবকটি নিয়ামকের সাথে মাটির সমন্বয় করে মাটির উর্বরতা ঠিক রাখা, উপযুক্ত এবং যৌক্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো, সব ধরনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সর্বোপরি মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের জন্য টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা খুব বেশি প্রয়োজন।

কিন্তু এটি শুধুমাত্র সরকার বা বিভিন্ন সংগঠনের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। মাটি ও পানি দূষণ রোধে, অপচয় কমানো ও রক্ষনাবেক্ষন নিয়ে সচেতন হওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় সামাজিকভাবে কার্যকর করা- এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কর্তব্য বলে আমি মনে করি। তাই, সর্বোপরি, বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ভবিষ্যতে আরও গুরুত্ব ও আড়ম্বরের সাথে আয়োজিত হবে, এই কামনা করছি এবং এবারের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যের পূর্ণ সফলতার প্রার্থনা করছি।

লেখক: সাদিয়া রহমান, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, sadiarahaman79@gmail.com

ট্যাগ:

“মাটিই আমাদের সব কর্মের শেকড়”

প্রকাশ: ১১:৫৪:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

সাদিয়া রহমান, কৃষিবিদ: ০৫ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয়ে গেলো ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই দিনটি উদযাপিত হয়েছে যথাযথ গুরুত্বের সাথেই। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে দেশব্যাপী। আমাদের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল সায়েন্স বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়তে আসায় আমারও সৌভাগ্য হয়েছে দিনটি উদযাপনের সঙ্গে আদ্যন্ত জড়িয়ে থাকার। তাই, আজকের লেখনীর উদ্দেশ্য, পাঠকের সঙ্গে মৃত্তিকা দিবসের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব নিয়ে সম্যক আলোচনা করা।

অস্বীকার করার উপায় নেই, মাটি আমাদের মা। মাটিই আমাদের সব কর্মের শেকড়। আমরা এই মাটির সৃষ্টি। এই মাটিকে কেন্দ্র করেই আমাদের বড় ও বেড়ে উঠা এবং মাটিতেই আমরা বিলীন হবো৷ তাই, মাটির প্রতি আমাদের দায়বোধও অসীম। একজন কৃষিবিদ হিসেবে এই মাটির গুরুত্ব অন্য দশটা মানুষের চেয়ে আমি বেশিই অনুধাবন করতে পারি, সেটাও সত্য! এই গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বিশ্বের নীতি-নির্ধারকেরাও! তাই, ২০১৩ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ০৫ ডিসেম্বরকে অফিশিয়ালি বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৪ হতে অদ্যবধি প্রতিবছর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালন করা হয় ৫ ডিসেম্বর।

তবে এর প্রেক্ষাপট শুরু হয় আরও পূর্বে। উদ্ভিদের জন্ম-বৃদ্ধিতে ও মানবকল্যাণে মৃত্তিকার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতেই মূলত বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস নির্ধারণ করা হয়েছে। মৃত্তিকার সঠিক পরিচর্যার গুরুত্ব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মৃত্তিকা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন (আইইউএসএস) ২০০২ সালে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করে। পরে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অনুমোদন লাভের পর প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের প্রায় ৬০ হাজারের বেশি মৃত্তিকাবিজ্ঞানী এ দিবসটি সাড়ম্বরে পালন করে থাকেন। মৃত্তিকা সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি এবং তার প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদেরই নিতে হবে। বিশ্বের সব দেশে সুস্থ মৃত্তিকার সুফল লাভে উৎসাহিত করতেই এ দিবস পালন করা হয়।

এবারের ওয়ার্ল্ড সয়েল ডে’র মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো- ‘মাটি ও পানি: জীবনের উৎস’। সত্যই তাই! ভালো ও স্বাস্থ্যকর ফসল পেতে মাটির গুরুত্ব এবং পানি ও মাটির মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝানোর বিকল্প নেই। জাতিসংঘ তার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে লিখেছে, “সাসটেইনেবল সয়েল ম্যানেজম্যান্ট প্র্যাকটিস, অল্প চাষাবাদ, ফসলের পরিবর্তন, জৈব পদার্থ সংযোজন এবং কভাক ক্রপিং মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এবং মাটির ক্ষয় হ্রাস করে এবং জলের অনুপ্রবেশ এবং সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে পারে। এই প্রক্রিয়াগুলি মাটির জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে, উর্বরতা বাড়ায় এবং কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন ঠিক রাখে শুধু তাই নয় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সব প্রক্রিয়া”

মোদ্দা কথা, মাটি ক্ষয়, উর্বরতা হ্রাস এবং জৈব পদার্থের ক্ষতি থেকে মাটিকে রক্ষা করা এবং মাটির গুণগত মান বজায় রাখাটা মানুষের জীবন এবং খাদ্য ব্যবস্থায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি বছর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালন করা হয়। বিশ্বের সমস্ত নাগরিকেরই মাটি ভালো রাখার দিকে খেয়াল রাখতে এবং সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণও বটে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ভূমির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিভিন্ন গবেষনার তথ্য অনুযায়ী, এশিয়াতে মাটি ক্ষয়ের হার সবচেয়ে বেশি এবং তা বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি।

এই মাটি ক্ষয়ের মূল কারণ হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাক, লবনাক্ততা ও অম্লত্ব, মাটির নিচে শক্ত আবরণ সৃষ্টি হওয়া, মাটির বায়ু চলাচলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ও জলাবদ্ধতা তৈরি, অযৌক্তিক ব্যবস্থাপনা, ভূমির অধিকতর ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক পুষ্টি কমে যাওয়া, যাতে ঘটে মাটির স্বাস্থ্য হানি, জৈব সার মাটির প্রাণ আর এ জৈব সার কমে গিয়ে মাটি নিষ্প্রাণ হবার উপক্রম, বিভিন্ন কারণে মাটি থেকে পুষ্টি সরে যাওয়া বা কমে যাওয়া (ইমারত অট্টালিকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার প্রতিষ্ঠা, ইটের ভাটা প্রতিষ্ঠা), ভূপৃষ্ঠের পানি অযৌক্তিকভাবে বেশি পরিমাণে তোলা এবং অযাচিত ব্যবহারে পানির স্তর কমে যাওয়া, নিম্নমানের সেচের পানির ব্যবহার, মাটির ও ভূপৃষ্ঠের পানির দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে, টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই।

আমাদের বুঝতে হবে যে, মাটিতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রথমে ভূমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এ যাবত অর্জিত জ্ঞানে বলতে পারি, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং তাদের ক্ষয় হওয়া রোধ করার স্বার্থে শুধুমাত্র সামাজিকভাবে চিন্তা না করে, মাটি ব্যবহারের যৌক্তিকতা এবং মাটির স্বাস্থ্য বিবেচনায় রেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশকে যথাযথ ও স্বাভাবিক রাখার জন্যও ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা ঠিক রেখে কম বিনিয়োগে বেশি লাভ করার কৌশল অবলম্বন, প্রকৃতির সবকটি নিয়ামকের সাথে মাটির সমন্বয় করে মাটির উর্বরতা ঠিক রাখা, উপযুক্ত এবং যৌক্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো, সব ধরনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সর্বোপরি মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের জন্য টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা খুব বেশি প্রয়োজন।

কিন্তু এটি শুধুমাত্র সরকার বা বিভিন্ন সংগঠনের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। মাটি ও পানি দূষণ রোধে, অপচয় কমানো ও রক্ষনাবেক্ষন নিয়ে সচেতন হওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় সামাজিকভাবে কার্যকর করা- এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কর্তব্য বলে আমি মনে করি। তাই, সর্বোপরি, বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ভবিষ্যতে আরও গুরুত্ব ও আড়ম্বরের সাথে আয়োজিত হবে, এই কামনা করছি এবং এবারের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যের পূর্ণ সফলতার প্রার্থনা করছি।

লেখক: সাদিয়া রহমান, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, sadiarahaman79@gmail.com