০৭:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেডিকেল ভিসায় বেঙ্গালুরু: প্রস্তুতি পর্ব

India Bangladesh Medical Visa

ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা গ্রহণে যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতিবছরই কেবল বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, ২০১৪-১৫ সালের দিকে এই সংখ্যাটা দশ লাখের নিচে থাকলেও চলতি বছর নাগাদ পরিসংখ্যান এসে ঠেকেছে প্রায় পঁচিশ লাখে! অর্থাৎ, মাত্র দশক ব্যবধানে আমাদের দেশ হতে ভারতে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণে ইচ্ছুক মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ, যা আদতে ভারতের অর্থনীতিতে যোগ করছে কয়েক হাজার কোটিরও বেশি টাকা!

গোটা বিষয়টিকে আমরা দুটো ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে পারি। প্রথমটি, আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতের এতটাই অবনতি ঘটেছে, কিংবা স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণে ব্যয় এতটাই বেড়েছে যে, সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষেরাও আর প্রচলিত ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখতে পারছেন না, তাই ‘সু’ তথা ‘সস্তা’ চিকিৎসা গ্রহণের নিমিত্তে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন; দ্বিতীয়টি, মানুষের আর্থিক অবস্থার এতটাই উন্নতি ঘটেছে যে, তারা এখন চাইলেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণে সক্ষম! তবে, আমি নিজেও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হওয়াতে ধারণা করি, সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় কারণটির বৈধতা থাকলেও, প্রথম কারণটিই বেশি উপযুক্ত। নিঃসন্দেহে আমার বক্তব্যের সঙ্গে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করবেন। সে আলোচনায় যাচ্ছি না।

প্রসঙ্গত, আজকের এই লেখনীর মূল উদ্দেশ্য অবশ্য স্বাস্থ্যসেবা খাতের ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ নয়; বরং, আমার মতো যারা প্রথমবার পরিবার নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণে, অর্থাৎ, মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন, তাঁদের জন্য একটি প্রস্তুতি বার্তা দেয়া। এক্ষেত্রে, প্রথমেই বলে নিই, এখনো অবধি নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই গোটা লেখাটা লিখছি। সেহেতু, কাররু ভিন্ন কোনো অভিজ্ঞতা বা মন্তব্য থাকলে, তা নিচে প্রদত্ত আমার ইমেইল ঠিকানায় জানানোর জন্য অনুরোধ রইলো।

মূল আলোচনায় দৃষ্টিপাত করছি। ভারতে চিকিৎসা গ্রহণে মনস্থির করা প্রতিটি পরিবারের ক্ষেত্রে প্রথম কর্তব্য গন্তব্য নির্ধারণ করা। ভূমিকা না করেই বলছি, ভারতে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের চিকিৎসা গন্তব্য তিনটি। সেগুলোর ক্রম করলে প্রথমেই আসবে ভেলোরে অবস্থিত সিএমসি হাসপাতাল (ক্রিস্টান মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল) -এর নাম। তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই থেকে ভেলোর ১৩৩ কিলোমিটার দূরে। এটি খ্রিস্টান মিশনারি দ্বারা পরিচালিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রস্তুতি পর্বে যতটা জানতে পেরেছি, আমাদের দেশের হাসপাতালে জটিল অপারেশন করতে যে খরচ হয়, তা দিয়ে বা তারচেয়েও কম খরচে- ভেলোরে যাওয়া আসা, থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসার কাজ পুরোটা সেরে ফেলা যাবে। তবে, শুনেছি, খরচ অনেক কম হওয়ায় এখানে চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণের বিষয়টি একটু সময় সাপেক্ষ। তাই, যাদের জরুরি ভিত্তিতে সেবা প্রয়োজন এবং মোটামুটি সামর্থ্যবান, তারা জায়গাটি এড়িয়ে চললেই বোধ হয় ভালো করবেন।

দ্বিতীয়ত যে নামটি আমি পেয়েছি, তা হচ্ছে, চেন্নাইয়েরই এপোলো হাসপাতাল। আরও বেশ কিছু হাসপাতাল এখানে বিখ্যাত। তবে আমি সিএমসি হাসপাতালের পর এ যাবত এই নামটিই সবচেয়ে বেশি শুনেছি। এখানকার চিকিৎসা পরিষেবা বিশ্বখ্যাত। নামকরা সব ডাক্তারদের আনাগোনা ও কর্মস্থল এটি। তবে, এখানে চিকিৎসা সেবায় ভারতের অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে তুলনামূলক একটু বেশি খরচ পড়ে। কিন্তু, এখানে সেবা-সংক্রান্ত সবকিছুই অনেক তড়িৎ গতিতে পাওয়া যায় বলে জেনেছি। ফলত, আমাদের দেশের মোটামুটি সামর্থ্যবান যারা রয়েছেন, কিংবা উচ্চবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত, প্রত্যেকেই এই হাসপাতালটিকে নিজ গন্তব্য হিসেবে গোনায় রাখতে পারেন।

তৃতীয়ত যে হাসপাতালটির নাম এখানে উল্লেখ করছি, এই হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক আবার আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কাছে অনেক তথাকথিত সেলিব্রেটিদের চেয়েও নামকরা একজন ব্যক্তি। বলার অপেক্ষা রাখেনা, গোটা বিশ্বেই তিনি অনেক বিখ্যাত। বলছি, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, কিংবদন্তীতূল্য ডাক্তার দেবী শেঠীর কথা। তারই প্রতিষ্ঠান বেঙ্গালুরুর নারায়ানা হেলথ। এই হাসপাতালের বিশেষ আবেদন মূলত হার্টের জটিল রোগ বা স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের কাছে। তুলনামূলক খরচ অনেক কম এবং বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকদের কর্মস্থল এটি। ব্যক্তিগতভাবে আমার ভারত গমনের মূল উদ্দেশ্য বাবার চিকিৎসা করানো এবং তিনি অনেকদিন যাবতই নানান রোগে আক্রান্ত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে হৃদরোগ ও পার্কিনসন ডিজিসে ভীষণ ভুগছেন! গত কয়েক মাসেই প্রায় তিনবার মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। বিধায় গন্তব্যস্থল আমরা পরিবারের সবাই মিলে আলোচনা করে চূড়ান্ত করলাম বেঙ্গালুরুর নারায়ানাতেই! সূক্ষ্ম ও সুপ্ত উদ্দেশ্য দেবী শেঠীর সঙ্গে বাবার মোলাকাত করিয়ে দেয়া। সঙ্গী আমি, আমার বাবা, মা ও ছোটবোন।

গন্তব্য নির্ধারণের পর এই পর্যায়ে প্রয়োজন পড়বে ভারতের সংশ্লিষ্ট মেডিকেল হতে একটি এপয়েনমেন্ট বা ইনভাইটেশন লেটারের। এটি নেহায়েতই একটি আনুষ্ঠানিক কর্তব্য মাত্র! এই ধাপ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করার কিছু নেই। যেহেতু, বাংলাদেশের অসংখ্য রোগী প্রতিবছর ভারতে চিকিৎসা গ্রহণে যায়, বিধায়, ভারতীয় হাসপাতালগুলো বাংলাদেশে তাঁদের নিজস্ব এজেন্সি রেখেছে, যারা বিনামূল্যে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এপয়েনমেন্ট লেটার জোগাড় করে দেয়।

এক্ষেত্রে, আমি দুটো হাসপাতাল থেকে এপয়েনমেন্ট লেটার জোগাড় করে রেখেছি, যথাক্রমে, বেঙ্গালুরুর নারায়ানা হেলথ এবং চেন্নাইয়ের এপোলো হাসপাতাল। প্রসঙ্গত, নারায়ানার এপয়েনমেন্ট জোগাড়ের জন্য বাংলাদেশীগণ +৮৮০ ১৭৫৫-৬৬৮৮৭৮ -এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন এবং এপোলো হাসপাতালের এপয়েনমেন্ট পেতে +৮৮০ ১৩২৯-৬৭২১০০ -এই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করবেন। তারা বিনামূল্যে এপয়েনমেন্ট লেটার ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকেন। তবে, তাদেরকে রোগীর পাসপোর্টের কপি, অ্যাটেন্ডারের পাসপোর্ট কপি (সর্বোচ্চ ০২ জন), সর্বশেষ মেডিক্যাল রিপোর্ট সমূহ (বিগত এক-দু বছর), এবং নিকটতম ইন্ডিয়ান হাইকমিশন এর তথ্য ছবি আকারে প্রদান করতে হয়। অতঃপর গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় ৩-৪ দিন সময় লেগে যেতে পারে।

এ পর্যায়ে যখন আপনি মেডিকেল এপয়েনমেন্ট লেটার পেয়ে যাবেন, তখন আপনার কাজ নিকটস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করা। ভারতে মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজাদি যথাক্রমে, সঠিকভাবে ভিসা আবেদন পূরণ ও প্রিন্ট করে নেয়া; ভিসা ফি প্রদানের কপি; সাম্প্রতিক পাসপোর্ট আকারের ফটোগ্রাফ (২*২; ন্যূনতম দুই কপি রাখা ভালো); পাসপোর্টের ফটোকপি; আবাসিক ঠিকানা প্রুফ (বিদ্যুৎ বা গ্যাস ইউটিলিটি বিলের কপি); দেশে করানো সকল চিকিৎসা নথির ফটোকপি; মেডিক্যাল এটেনডেন্টের পাসপোর্ট কপি; ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট (এক্ষেত্রে, ন্যূনতম লাখখানেক টাকা দেখানো উত্তম। উল্লেখ্য, একই পরিবারের সদস্য হলে, প্রধান কর্তা, অর্থাৎ, উপার্জনকারী ব্যক্তি যিনি, তাঁর ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টই সবাই ফটোকপি করে জমা দিবেন) অথবা পাসপোর্টে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট; ব্যাঙ্ক হতে স্টেটমেন্ট নেয়ার পাশাপাশি একটি সলভেন্সি সার্টিফিকেট; বাংলাদেশী ডাক্তারদের রেফারেন্স (চিকিৎসা চলমান থাকলে এটি না হলেও চলে); এনআইডি/জন্ম নিবন্ধনের কপি; ভারতীয় হাসপাতালের এপয়েনমেন্ট লেটার; চাকুরীরত থাকলে, তার প্রমাণ কপি অথবা শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো পেশার হলে সংশ্লিষ্ট পেশার প্রমাণ কপি; এবং, নতুন-পুরোনো সকল পাসপোর্ট কপি প্রভৃতি।

এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, আমি যদিও বেঙ্গালুরু যাচ্ছি, তথাপি এম্বাসিতে চেন্নাইয়ের এপোলো হাসপাতালের দেয়া এপয়েনমেন্ট লেটারটিই জমা করেছি। কেননা, নারায়ানা হেলথের দেয়া এপয়েনমেন্ট লেটারের চেয়ে এপোলো হাসপাতালের দেয়া লেটারটি অনেক বেশি স্ট্যান্ডার্ড মনে হয়েছে। এম্বাসির দেয়া ভিসাতে হাসপাতালের নামও উল্লেখ থাকে। তবে যতটা জেনেছি, এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। একবার ভিসা হয়ে গেলে গোটা ভারতের যেকোনো জায়গায় আপনি চিকিৎসা গ্রহণে যেতে পারেন।

মেডিকেল ভিসা আবেদন জমা দেয়ার পর সাধারণত মাসখানেকেরও কম সময়ে তা অনুমোদিত হয়ে যায় এবং কাগজপত্রে কোনো মেজর ভুল না থাকলে এই ভিসা আবেদন রিজেক্ট হয়না। এছাড়া, যদি কারুর জরুরি চিকিৎসা গ্রহণে ভারত গমনের প্রয়োজন পড়ে, তবে আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট এম্বাসিতে মেইল করলেই তারা দ্রুত ভিসা প্রসেস করে দেয়। নিজ অভিজ্ঞতা হতেই বলছি, নির্দিষ্ট অর্থে এই ক্ষেত্রে ভারতীয় এম্বাসি ভীষণ আন্তরিকতার সাথেই কাজ করে।

ভিসা হয়ে যাবার পর এ পর্যায়ে আপনার সম্পূর্ণ মনযোগ থাকবে, গন্তব্য শহর অনুযায়ী যাবার প্রস্তুতি নেয়া। অর্থাৎ, যেমন দেশ, তেমন বেশ! আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব সঙ্গে নিয়ে নিবেন। আমার বেলায় আমি পাসপোর্ট এর ১০ কপি ফটোকপি, ভিসার ১০ কপি ফটোকপি, ভারতীয় মেডিকেলের এপয়েনমেন্ট লেটার ২ কপি, কোভিড টিকা দেয়ার সার্টিফিকেট ৩ কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ৫ কপি করিয়ে নিয়েছি। সে সঙ্গে, যাবতীয় মেডিকেল ডকুমেন্টসের ৩ কপি সঙ্গে নিয়েছি। এখনো যেহেতু ভারতে যাইনি, বলা তো যায়না, কোথায় কী লেগে যায়! কাগজপত্র গোছাতে আমাকে সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন আমার বড় ভাই কায়সার জামিলের সহকর্মী, জনতা ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা রিপন দাদা। ইতোপূর্বে ভারত ভ্রমণে তাঁর ঢের অভিজ্ঞতা আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছে যাবতীয় ট্যুর পরিকল্পনা সাজাতে।

এসবের পাশাপাশি আমি একটি আলাদা পাইচার্ট বানিয়ে নিয়েছি সঙ্গে। সেখানে আমার নিজের, বাবার, বোনের ও মায়ের, তথাপি পরিবারের সকলেরই এ যাবতকালের সকল রোগের একটি ছক বা তালিকা দিয়েছি। ছক টেবিলে যে তথ্যগুলো মূলত আমি বসিয়েছি, তা যথাক্রমে, প্রথম কলামে অসুখের নাম, দ্বিতীয় কলামে রোগ কত সালে ধরা পড়ে এবং কতদিন তা চলেছে, সে তথ্য; তৃতীয় কলামে, সংশ্লিষ্ট রোগের বিপরীতে কী কী ঔষধ নেয়া হয়েছে, এই তথ্যগুলো দিয়েছি। জনপ্রতি এক পৃষ্ঠাতেই তালিকাটা সম্পন্ন করা সম্ভবপর। ফলত, যখন আপনাকে কোনো নতুন ডাক্তার দেখবেন, তিনি এই পৃষ্ঠাটি হাতে নিলেই আপনার গোটা মেডিকেল হিস্ট্রি সম্পর্কে অবগত হবেন এবং ট্রীটমেন্ট করা তাঁর জন্য সহজ হয়ে যাবে। আমার অভিভাবক তূল্য অগ্রজ কায়সার জামিল ভাইয়ের মস্তিস্ক প্রসূত এই আইডিয়াটা আমাকে যথেষ্ট আকর্ষণ করেছে। বিষয়টি যে বেশ ফলদায়ক, তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও আমি প্রমাণ পেয়েছি।

কাগজপত্রের বাইরে নিত্য-প্রয়োজনীয় অন্য সবকিছুই সঙ্গে নিয়ে নিবেন চাহিদানুসারে। উল্লেখ্য, সরকারী চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে এ পর্যায়ে অফিস হতে একটি বহির্গমন আদেশ সম্বলিত ছুটির কাগজ প্রয়োজন পড়বে। অফিসভেদে এই ছুটি মঞ্জুর হতে বিভিন্ন রকম সময় প্রয়োজন। আমার বাবার বেলায় এই কাগজটির জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের। তাই, সরকারী চাকুরে যারা মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাবার নিয়ত করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ভিসা আবেদনের পাশাপাশি এই ছুটির আবেদন করে রাখাই উত্তম।

এছাড়া, ভারতে টাকা নেয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু জেনেছি, ডলার সঙ্গে নিয়ে নেয়াই উত্তম। তবে এ মুহূর্তে আমাদের টাকার যে মান, তা দিয়ে ডলার বা রুপী, কোনোটিতেই কাঙ্ক্ষিত বিনিময় পাওয়া যাচ্ছেনা। আমি এখনো ডলার কিংবা রুপী কোনোটিতেই টাকা কনভার্ট করিনি। ইচ্ছে আছে, সঙ্গে নগদ হাজার বিশেক রুপী নেয়ার, হাজার খানেক ডলার নেয়ার এবং বাদবাকি অর্থ বাংলাদেশী টাকায় সঙ্গে নেয়ার ইচ্ছে। উদ্দেশ্য, ভারতের অভ্যন্তরে গিয়ে টাকাকে রুপীতে রূপান্তর। পরবর্তী লেখনীতে ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে আদ্যোপান্ত লেখার চেষ্টা থাকবে। বিশ্বাস করি, বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখাই উত্তম।

গন্তব্য তারিখ পূর্ব হতে নির্ধারিত থাকলে হাতে অন্তত সাতদিন সময় নিয়ে বিমান/ট্রেন বা বাসের টিকেট কেটে ফেলাই উত্তম। আমরা যাত্রার পরিকল্পনা করেছি ঢাকা হতে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ট্রেনে কলকাতায়। এরপর কলকাতা হতে বেঙ্গালুরু বিমানে। এতে বিমানের রুটটি লোকাল হয়ে পড়বে, বিধায় খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। অনেকে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুর রাস্তাটুকুও ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন, তবে তা সময় সাপেক্ষ। রেলে এই যাত্রার পথ প্রায় ৩০ ঘন্টারও অধিক, তবে, যতটা জানি, ভারতে রেল পরিষেবা অত্যন্ত উন্নত। তাই যাত্রীদেরকে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়না। আবার, কেউ চাইলে ঢাকা থেকে বেঙ্গালুরু বিমানেও যেতে পারেন। তবে সরাসরি এই রুটে কোনো বিমান নেই। সেক্ষেত্রে, দিল্লীতে বা চেন্নাইতে ট্রানজিট নেয়া লাগে। এসব ঝাক্কি পোহানোর চেয়ে আমার কাছে রেলে কলকাতা এবং পরে বিমানে বেঙ্গালুরুর রুটটিই সবচেয়ে সহজ লেগেছে। তাই এটা বেছে নেয়া।

সর্বোপরি, অজানা কিন্তু পরিচিত এক গন্তব্যের দিকে যেনো এগোচ্ছি। মোটামুটিভাবে, যারা ভারতে চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক এবং প্রস্তুতিপর্বে রয়েছেন, তাঁদের জন্য লেখনীটি সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা। সপ্তাহান্তে প্রাচীনতম সভ্যতার দেশ ভারতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। ইচ্ছে রয়েছে, ইমিগ্রেশন, যাত্রা অভিজ্ঞতা, ভারতে থাকার বন্দোবস্ত, খাওয়া খরচ, রোগী ভর্তির স্টেপ সহ প্রতিটি ধাপের আপডেট পাঠকমহলের সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ভাগ করে নেয়ার। সে অবধি সবার নিকট দোয়া চাই। সৃষ্টিকর্তার নিকট সবার সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করছি।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেহাদ

ট্যাগ:

মেডিকেল ভিসায় বেঙ্গালুরু: প্রস্তুতি পর্ব

প্রকাশ: ১১:০৯:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা গ্রহণে যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতিবছরই কেবল বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, ২০১৪-১৫ সালের দিকে এই সংখ্যাটা দশ লাখের নিচে থাকলেও চলতি বছর নাগাদ পরিসংখ্যান এসে ঠেকেছে প্রায় পঁচিশ লাখে! অর্থাৎ, মাত্র দশক ব্যবধানে আমাদের দেশ হতে ভারতে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণে ইচ্ছুক মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ, যা আদতে ভারতের অর্থনীতিতে যোগ করছে কয়েক হাজার কোটিরও বেশি টাকা!

গোটা বিষয়টিকে আমরা দুটো ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে পারি। প্রথমটি, আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতের এতটাই অবনতি ঘটেছে, কিংবা স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণে ব্যয় এতটাই বেড়েছে যে, সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষেরাও আর প্রচলিত ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখতে পারছেন না, তাই ‘সু’ তথা ‘সস্তা’ চিকিৎসা গ্রহণের নিমিত্তে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন; দ্বিতীয়টি, মানুষের আর্থিক অবস্থার এতটাই উন্নতি ঘটেছে যে, তারা এখন চাইলেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণে সক্ষম! তবে, আমি নিজেও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হওয়াতে ধারণা করি, সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় কারণটির বৈধতা থাকলেও, প্রথম কারণটিই বেশি উপযুক্ত। নিঃসন্দেহে আমার বক্তব্যের সঙ্গে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করবেন। সে আলোচনায় যাচ্ছি না।

প্রসঙ্গত, আজকের এই লেখনীর মূল উদ্দেশ্য অবশ্য স্বাস্থ্যসেবা খাতের ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ নয়; বরং, আমার মতো যারা প্রথমবার পরিবার নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণে, অর্থাৎ, মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন, তাঁদের জন্য একটি প্রস্তুতি বার্তা দেয়া। এক্ষেত্রে, প্রথমেই বলে নিই, এখনো অবধি নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই গোটা লেখাটা লিখছি। সেহেতু, কাররু ভিন্ন কোনো অভিজ্ঞতা বা মন্তব্য থাকলে, তা নিচে প্রদত্ত আমার ইমেইল ঠিকানায় জানানোর জন্য অনুরোধ রইলো।

মূল আলোচনায় দৃষ্টিপাত করছি। ভারতে চিকিৎসা গ্রহণে মনস্থির করা প্রতিটি পরিবারের ক্ষেত্রে প্রথম কর্তব্য গন্তব্য নির্ধারণ করা। ভূমিকা না করেই বলছি, ভারতে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের চিকিৎসা গন্তব্য তিনটি। সেগুলোর ক্রম করলে প্রথমেই আসবে ভেলোরে অবস্থিত সিএমসি হাসপাতাল (ক্রিস্টান মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল) -এর নাম। তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই থেকে ভেলোর ১৩৩ কিলোমিটার দূরে। এটি খ্রিস্টান মিশনারি দ্বারা পরিচালিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রস্তুতি পর্বে যতটা জানতে পেরেছি, আমাদের দেশের হাসপাতালে জটিল অপারেশন করতে যে খরচ হয়, তা দিয়ে বা তারচেয়েও কম খরচে- ভেলোরে যাওয়া আসা, থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসার কাজ পুরোটা সেরে ফেলা যাবে। তবে, শুনেছি, খরচ অনেক কম হওয়ায় এখানে চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণের বিষয়টি একটু সময় সাপেক্ষ। তাই, যাদের জরুরি ভিত্তিতে সেবা প্রয়োজন এবং মোটামুটি সামর্থ্যবান, তারা জায়গাটি এড়িয়ে চললেই বোধ হয় ভালো করবেন।

দ্বিতীয়ত যে নামটি আমি পেয়েছি, তা হচ্ছে, চেন্নাইয়েরই এপোলো হাসপাতাল। আরও বেশ কিছু হাসপাতাল এখানে বিখ্যাত। তবে আমি সিএমসি হাসপাতালের পর এ যাবত এই নামটিই সবচেয়ে বেশি শুনেছি। এখানকার চিকিৎসা পরিষেবা বিশ্বখ্যাত। নামকরা সব ডাক্তারদের আনাগোনা ও কর্মস্থল এটি। তবে, এখানে চিকিৎসা সেবায় ভারতের অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে তুলনামূলক একটু বেশি খরচ পড়ে। কিন্তু, এখানে সেবা-সংক্রান্ত সবকিছুই অনেক তড়িৎ গতিতে পাওয়া যায় বলে জেনেছি। ফলত, আমাদের দেশের মোটামুটি সামর্থ্যবান যারা রয়েছেন, কিংবা উচ্চবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত, প্রত্যেকেই এই হাসপাতালটিকে নিজ গন্তব্য হিসেবে গোনায় রাখতে পারেন।

তৃতীয়ত যে হাসপাতালটির নাম এখানে উল্লেখ করছি, এই হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক আবার আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কাছে অনেক তথাকথিত সেলিব্রেটিদের চেয়েও নামকরা একজন ব্যক্তি। বলার অপেক্ষা রাখেনা, গোটা বিশ্বেই তিনি অনেক বিখ্যাত। বলছি, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, কিংবদন্তীতূল্য ডাক্তার দেবী শেঠীর কথা। তারই প্রতিষ্ঠান বেঙ্গালুরুর নারায়ানা হেলথ। এই হাসপাতালের বিশেষ আবেদন মূলত হার্টের জটিল রোগ বা স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের কাছে। তুলনামূলক খরচ অনেক কম এবং বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকদের কর্মস্থল এটি। ব্যক্তিগতভাবে আমার ভারত গমনের মূল উদ্দেশ্য বাবার চিকিৎসা করানো এবং তিনি অনেকদিন যাবতই নানান রোগে আক্রান্ত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে হৃদরোগ ও পার্কিনসন ডিজিসে ভীষণ ভুগছেন! গত কয়েক মাসেই প্রায় তিনবার মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। বিধায় গন্তব্যস্থল আমরা পরিবারের সবাই মিলে আলোচনা করে চূড়ান্ত করলাম বেঙ্গালুরুর নারায়ানাতেই! সূক্ষ্ম ও সুপ্ত উদ্দেশ্য দেবী শেঠীর সঙ্গে বাবার মোলাকাত করিয়ে দেয়া। সঙ্গী আমি, আমার বাবা, মা ও ছোটবোন।

গন্তব্য নির্ধারণের পর এই পর্যায়ে প্রয়োজন পড়বে ভারতের সংশ্লিষ্ট মেডিকেল হতে একটি এপয়েনমেন্ট বা ইনভাইটেশন লেটারের। এটি নেহায়েতই একটি আনুষ্ঠানিক কর্তব্য মাত্র! এই ধাপ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করার কিছু নেই। যেহেতু, বাংলাদেশের অসংখ্য রোগী প্রতিবছর ভারতে চিকিৎসা গ্রহণে যায়, বিধায়, ভারতীয় হাসপাতালগুলো বাংলাদেশে তাঁদের নিজস্ব এজেন্সি রেখেছে, যারা বিনামূল্যে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এপয়েনমেন্ট লেটার জোগাড় করে দেয়।

এক্ষেত্রে, আমি দুটো হাসপাতাল থেকে এপয়েনমেন্ট লেটার জোগাড় করে রেখেছি, যথাক্রমে, বেঙ্গালুরুর নারায়ানা হেলথ এবং চেন্নাইয়ের এপোলো হাসপাতাল। প্রসঙ্গত, নারায়ানার এপয়েনমেন্ট জোগাড়ের জন্য বাংলাদেশীগণ +৮৮০ ১৭৫৫-৬৬৮৮৭৮ -এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন এবং এপোলো হাসপাতালের এপয়েনমেন্ট পেতে +৮৮০ ১৩২৯-৬৭২১০০ -এই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করবেন। তারা বিনামূল্যে এপয়েনমেন্ট লেটার ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকেন। তবে, তাদেরকে রোগীর পাসপোর্টের কপি, অ্যাটেন্ডারের পাসপোর্ট কপি (সর্বোচ্চ ০২ জন), সর্বশেষ মেডিক্যাল রিপোর্ট সমূহ (বিগত এক-দু বছর), এবং নিকটতম ইন্ডিয়ান হাইকমিশন এর তথ্য ছবি আকারে প্রদান করতে হয়। অতঃপর গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় ৩-৪ দিন সময় লেগে যেতে পারে।

এ পর্যায়ে যখন আপনি মেডিকেল এপয়েনমেন্ট লেটার পেয়ে যাবেন, তখন আপনার কাজ নিকটস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করা। ভারতে মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজাদি যথাক্রমে, সঠিকভাবে ভিসা আবেদন পূরণ ও প্রিন্ট করে নেয়া; ভিসা ফি প্রদানের কপি; সাম্প্রতিক পাসপোর্ট আকারের ফটোগ্রাফ (২*২; ন্যূনতম দুই কপি রাখা ভালো); পাসপোর্টের ফটোকপি; আবাসিক ঠিকানা প্রুফ (বিদ্যুৎ বা গ্যাস ইউটিলিটি বিলের কপি); দেশে করানো সকল চিকিৎসা নথির ফটোকপি; মেডিক্যাল এটেনডেন্টের পাসপোর্ট কপি; ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট (এক্ষেত্রে, ন্যূনতম লাখখানেক টাকা দেখানো উত্তম। উল্লেখ্য, একই পরিবারের সদস্য হলে, প্রধান কর্তা, অর্থাৎ, উপার্জনকারী ব্যক্তি যিনি, তাঁর ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টই সবাই ফটোকপি করে জমা দিবেন) অথবা পাসপোর্টে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট; ব্যাঙ্ক হতে স্টেটমেন্ট নেয়ার পাশাপাশি একটি সলভেন্সি সার্টিফিকেট; বাংলাদেশী ডাক্তারদের রেফারেন্স (চিকিৎসা চলমান থাকলে এটি না হলেও চলে); এনআইডি/জন্ম নিবন্ধনের কপি; ভারতীয় হাসপাতালের এপয়েনমেন্ট লেটার; চাকুরীরত থাকলে, তার প্রমাণ কপি অথবা শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো পেশার হলে সংশ্লিষ্ট পেশার প্রমাণ কপি; এবং, নতুন-পুরোনো সকল পাসপোর্ট কপি প্রভৃতি।

এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, আমি যদিও বেঙ্গালুরু যাচ্ছি, তথাপি এম্বাসিতে চেন্নাইয়ের এপোলো হাসপাতালের দেয়া এপয়েনমেন্ট লেটারটিই জমা করেছি। কেননা, নারায়ানা হেলথের দেয়া এপয়েনমেন্ট লেটারের চেয়ে এপোলো হাসপাতালের দেয়া লেটারটি অনেক বেশি স্ট্যান্ডার্ড মনে হয়েছে। এম্বাসির দেয়া ভিসাতে হাসপাতালের নামও উল্লেখ থাকে। তবে যতটা জেনেছি, এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। একবার ভিসা হয়ে গেলে গোটা ভারতের যেকোনো জায়গায় আপনি চিকিৎসা গ্রহণে যেতে পারেন।

মেডিকেল ভিসা আবেদন জমা দেয়ার পর সাধারণত মাসখানেকেরও কম সময়ে তা অনুমোদিত হয়ে যায় এবং কাগজপত্রে কোনো মেজর ভুল না থাকলে এই ভিসা আবেদন রিজেক্ট হয়না। এছাড়া, যদি কারুর জরুরি চিকিৎসা গ্রহণে ভারত গমনের প্রয়োজন পড়ে, তবে আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট এম্বাসিতে মেইল করলেই তারা দ্রুত ভিসা প্রসেস করে দেয়। নিজ অভিজ্ঞতা হতেই বলছি, নির্দিষ্ট অর্থে এই ক্ষেত্রে ভারতীয় এম্বাসি ভীষণ আন্তরিকতার সাথেই কাজ করে।

ভিসা হয়ে যাবার পর এ পর্যায়ে আপনার সম্পূর্ণ মনযোগ থাকবে, গন্তব্য শহর অনুযায়ী যাবার প্রস্তুতি নেয়া। অর্থাৎ, যেমন দেশ, তেমন বেশ! আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব সঙ্গে নিয়ে নিবেন। আমার বেলায় আমি পাসপোর্ট এর ১০ কপি ফটোকপি, ভিসার ১০ কপি ফটোকপি, ভারতীয় মেডিকেলের এপয়েনমেন্ট লেটার ২ কপি, কোভিড টিকা দেয়ার সার্টিফিকেট ৩ কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ৫ কপি করিয়ে নিয়েছি। সে সঙ্গে, যাবতীয় মেডিকেল ডকুমেন্টসের ৩ কপি সঙ্গে নিয়েছি। এখনো যেহেতু ভারতে যাইনি, বলা তো যায়না, কোথায় কী লেগে যায়! কাগজপত্র গোছাতে আমাকে সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন আমার বড় ভাই কায়সার জামিলের সহকর্মী, জনতা ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা রিপন দাদা। ইতোপূর্বে ভারত ভ্রমণে তাঁর ঢের অভিজ্ঞতা আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছে যাবতীয় ট্যুর পরিকল্পনা সাজাতে।

এসবের পাশাপাশি আমি একটি আলাদা পাইচার্ট বানিয়ে নিয়েছি সঙ্গে। সেখানে আমার নিজের, বাবার, বোনের ও মায়ের, তথাপি পরিবারের সকলেরই এ যাবতকালের সকল রোগের একটি ছক বা তালিকা দিয়েছি। ছক টেবিলে যে তথ্যগুলো মূলত আমি বসিয়েছি, তা যথাক্রমে, প্রথম কলামে অসুখের নাম, দ্বিতীয় কলামে রোগ কত সালে ধরা পড়ে এবং কতদিন তা চলেছে, সে তথ্য; তৃতীয় কলামে, সংশ্লিষ্ট রোগের বিপরীতে কী কী ঔষধ নেয়া হয়েছে, এই তথ্যগুলো দিয়েছি। জনপ্রতি এক পৃষ্ঠাতেই তালিকাটা সম্পন্ন করা সম্ভবপর। ফলত, যখন আপনাকে কোনো নতুন ডাক্তার দেখবেন, তিনি এই পৃষ্ঠাটি হাতে নিলেই আপনার গোটা মেডিকেল হিস্ট্রি সম্পর্কে অবগত হবেন এবং ট্রীটমেন্ট করা তাঁর জন্য সহজ হয়ে যাবে। আমার অভিভাবক তূল্য অগ্রজ কায়সার জামিল ভাইয়ের মস্তিস্ক প্রসূত এই আইডিয়াটা আমাকে যথেষ্ট আকর্ষণ করেছে। বিষয়টি যে বেশ ফলদায়ক, তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও আমি প্রমাণ পেয়েছি।

কাগজপত্রের বাইরে নিত্য-প্রয়োজনীয় অন্য সবকিছুই সঙ্গে নিয়ে নিবেন চাহিদানুসারে। উল্লেখ্য, সরকারী চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে এ পর্যায়ে অফিস হতে একটি বহির্গমন আদেশ সম্বলিত ছুটির কাগজ প্রয়োজন পড়বে। অফিসভেদে এই ছুটি মঞ্জুর হতে বিভিন্ন রকম সময় প্রয়োজন। আমার বাবার বেলায় এই কাগজটির জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের। তাই, সরকারী চাকুরে যারা মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাবার নিয়ত করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ভিসা আবেদনের পাশাপাশি এই ছুটির আবেদন করে রাখাই উত্তম।

এছাড়া, ভারতে টাকা নেয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু জেনেছি, ডলার সঙ্গে নিয়ে নেয়াই উত্তম। তবে এ মুহূর্তে আমাদের টাকার যে মান, তা দিয়ে ডলার বা রুপী, কোনোটিতেই কাঙ্ক্ষিত বিনিময় পাওয়া যাচ্ছেনা। আমি এখনো ডলার কিংবা রুপী কোনোটিতেই টাকা কনভার্ট করিনি। ইচ্ছে আছে, সঙ্গে নগদ হাজার বিশেক রুপী নেয়ার, হাজার খানেক ডলার নেয়ার এবং বাদবাকি অর্থ বাংলাদেশী টাকায় সঙ্গে নেয়ার ইচ্ছে। উদ্দেশ্য, ভারতের অভ্যন্তরে গিয়ে টাকাকে রুপীতে রূপান্তর। পরবর্তী লেখনীতে ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে আদ্যোপান্ত লেখার চেষ্টা থাকবে। বিশ্বাস করি, বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখাই উত্তম।

গন্তব্য তারিখ পূর্ব হতে নির্ধারিত থাকলে হাতে অন্তত সাতদিন সময় নিয়ে বিমান/ট্রেন বা বাসের টিকেট কেটে ফেলাই উত্তম। আমরা যাত্রার পরিকল্পনা করেছি ঢাকা হতে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ট্রেনে কলকাতায়। এরপর কলকাতা হতে বেঙ্গালুরু বিমানে। এতে বিমানের রুটটি লোকাল হয়ে পড়বে, বিধায় খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। অনেকে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুর রাস্তাটুকুও ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন, তবে তা সময় সাপেক্ষ। রেলে এই যাত্রার পথ প্রায় ৩০ ঘন্টারও অধিক, তবে, যতটা জানি, ভারতে রেল পরিষেবা অত্যন্ত উন্নত। তাই যাত্রীদেরকে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়না। আবার, কেউ চাইলে ঢাকা থেকে বেঙ্গালুরু বিমানেও যেতে পারেন। তবে সরাসরি এই রুটে কোনো বিমান নেই। সেক্ষেত্রে, দিল্লীতে বা চেন্নাইতে ট্রানজিট নেয়া লাগে। এসব ঝাক্কি পোহানোর চেয়ে আমার কাছে রেলে কলকাতা এবং পরে বিমানে বেঙ্গালুরুর রুটটিই সবচেয়ে সহজ লেগেছে। তাই এটা বেছে নেয়া।

সর্বোপরি, অজানা কিন্তু পরিচিত এক গন্তব্যের দিকে যেনো এগোচ্ছি। মোটামুটিভাবে, যারা ভারতে চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক এবং প্রস্তুতিপর্বে রয়েছেন, তাঁদের জন্য লেখনীটি সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা। সপ্তাহান্তে প্রাচীনতম সভ্যতার দেশ ভারতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। ইচ্ছে রয়েছে, ইমিগ্রেশন, যাত্রা অভিজ্ঞতা, ভারতে থাকার বন্দোবস্ত, খাওয়া খরচ, রোগী ভর্তির স্টেপ সহ প্রতিটি ধাপের আপডেট পাঠকমহলের সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ভাগ করে নেয়ার। সে অবধি সবার নিকট দোয়া চাই। সৃষ্টিকর্তার নিকট সবার সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করছি।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেহাদ