ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: গত পর্বের লেখনীতে বলেছিলাম, প্রথমে ট্রেনে কলকাতা গিয়ে এরপর বিমান নেয়ার পরিকল্পনার কথা। কিন্তু পরবর্তীতে আব্বার অফিসের ছুটির দিন গণনা আরম্ভ হয়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে নির্ধারিত গন্তব্যে অর্থাৎ, বেঙ্গালুরে দ্রুত পৌঁছানোর আশায় ঢাকা থেকেই বিমানে যাত্রা করি। পূর্বেই জানিয়েছিলাম, ঢাকা টু বেঙ্গালুরুর সরাসরি কোন ফ্লাইট রুট নেই। তাই, চেন্নাই, দিল্লী, বম্বে, হায়দ্রাবাদ অথবা কলকাতা – কোথাও না কোথাও ট্রানজিট অবশ্যই নিতে হবে।
একদম শেষ মুহূর্তে বিমানে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরা খুব বেশি ট্রানজিট বিকল্প খুঁজে পাইনি। এছাড়া, ভাড়াও কিছুটা বাড়তি গুনতে হয়েছিলো, জনপ্রতি প্রায় সাড়ে পনেরো হাজার। হায়দ্রাবাদে পাঁচ ঘন্টার ট্রানজিট ফ্লাইটেই আমরা নির্ধারিত দিনে যাত্রা করি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুপুর একটার ইন্ডিগো ফ্লাইট; ইমিগ্রেশন পর্ব শেষ করে নির্ধারিত সময়েই বিমানে উঠলাম। সাথে থাকা লাগেজটি ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে দিলাম। তারা একটি স্টিকার লাগিয়ে দিলো আমার লাগেজে। আমাকে বলা হলো, এই লাগেজটি হায়দ্রাবাদ নেমে আমাকে পুনরায় সংগ্রহ করতে হবে এবং বেঙ্গালুরুগামী পরবর্তী লোকাল ফ্লাইটের বক্সে দিয়ে দিতে হবে।
যাহোক, না বললেই নয়, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন নিয়ে হাজারো গালমন্দ শুনে মনটা ভীত ছিলো, কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ এখানে কোন বিশেষ ঝামেলা ছাড়াই গোটা পর্ব শেষ হলো। সাথে থাকা ডলার, রুপির পরিমাণ, এন্ডোর্সমেন্ট, বাংলা টাকা ইত্যাদি কিছু নিয়েই কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো না। তবে, ইমিগ্রেশন ঝামেলা এড়ানোর বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে আমি আমার খুবই কাছের একজন মানুষ, বিমানবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা রিফাতকে জানিয়ে রেখেছিলাম যেনো কোন সমস্যা হলে সে সাহায্য করতে পারে। উল্লেখ্য, সঙ্গে প্রায় হাজার খানেক ডলার এবং হাজার পাঁচেক রুপি ও নগদ হাজার ত্রিশেক বাংলা টাকা ক্যারি করছিলাম আমি। বিদেশী অর্থ মানি এক্সচেঞ্জ থেকেই নিয়েছিলাম। বাকি প্রয়োজনীয় অর্থ যে মাধ্যমে নিয়েছিলাম, তার গল্প সামনের অধ্যায়ের জন্য সংরক্ষণ করলো।
অতঃপর বিমান যাত্রা আরম্ভ। কিঞ্চিৎ রোমাঞ্চিত আমি। জীবনে প্রথম বিমান ভ্রমণ। সেটাও বাবা-মা-বোন সমেত গোটা পরিবারের সাথে। আব্বা, আম্মা এবং ছোটবোন রাফা একসঙ্গে বিমানের একই সারিতে বসলেন। আমি পাশের সারিতে বসলাম। তবে খানিক সময় পরই আবিস্কার করলাম, অনেকগুলো সীট খালি রয়ে গিয়েছে। তাই যাত্রীরা নিজেদের পছন্দ মতো জায়গা সুইচ করে নিচ্ছেন। আমিও আমার পছন্দমতো একটি উইন্ডো সীটে গিয়ে বসলাম। কয়েকজনের সাথে আলাপচারিতার পর বুঝে গেলাম, গোটা বিমানের বেশিরভাগ যাত্রী সৌদী আরব যাচ্ছেন, তাদেরও হায়দ্রাবাদ ট্রানজিট, সেখান থেকে রিয়াদ যাত্রা। হাতে গোনা কয়েকজনকে পেলাম, যারা হায়দ্রাবাদ নেমে ভারতেরই বিভিন্ন শহরের অভিমুখে রওনা করবেন!
বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য, এই বিমানের ইকোনমি ক্লাসের সীটগুলো অনেকটা বাসের সীটের মতোই, তবে আরামদায়ক এবং ভাড়ার সঙ্গে অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া, যাত্রার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে টিকেট কাটতে পারলে বিমান ভাড়া ক্ষেত্রবিশেষে ৩-৫ হাজার টাকা কমানো সম্ভব। অর্থাৎ, পরিকল্পনামাফিক চললেই দশ হাজার টাকায় আপনি ঢাকা থেকে বেঙ্গালুরু বিমানে পৌঁছাতে পারবেন, যা ট্রেনে ভ্রমণের তুলনায়ও অনেক কম পড়বে।
যাকগে, যেমনটি আগেই বলেছি, বিমান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার আগে কোনোদিনও ছিলো না। তাই বিমান ছাড়ার পরই কিছু বীভৎস আওয়াজ কিংবা ভিন্ন কিছুর কারণে হয়তো আমার মাথা প্রচন্ড ঘুরছিলো। তবে তা কাটিয়ে উঠতে ৩-৪ মিনিটের বেশি লাগেনি। স্বাভাবিক হওয়ার পরই আমি মেঘপুঞ্জের খেলা দেখতে লাগলাম। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইলাম আকাশের নীল সমারোহের প্রতি।
মেঘরাশির খেলা দেখতে দেখতে কখন কীভাবে দু ঘণ্টা পেরিয়ে গেলো, তা টেরই পেলাম না! অতঃপর আমার ঘোর কাটলো বিমানের ভেতরকার এক এনাউন্সমেন্টে। জানানো হলো, আর ২০ মিনিটের ভেতরই আমরা হায়দ্রাবাদ ল্যান্ড করবো! মনটা আবারও পুলকিত হয়ে উঠলো! এই হায়দ্রাবাদ শহর নিয়ে কতই না লিখা পড়েছি! টিভিতেও হায়দ্রাবাদ নিয়ে অনেক ড্রামা দেখেছি। বিশেষ করে দ্যা সোর্ড অফ টিপু সুলতান সিরিজের মাধ্যমে এই জায়গার ইতিহাস আমাদের অনেকের কাছেই মোটামুটি জানা। তাছাড়া, কীভাবে স্বাধীন ভূমি হায়দ্রাবাদ বিশাল ভারতের ভূগর্ভে বিলীন হয়ে গেলো, সেটিও আমার অজানা নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, যত দ্রুত সম্ভব, ইমিগ্রেশন শেষ করেই একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে হায়দ্রাবাদ শহরটা দু ঘন্টা ঘুরে আসবো!
খুশিমনেই হায়দ্রাবাদ বিমানবন্দরে নেমে এলাম। কিন্তু, সে খুশি উবে যেতে আমার খুব বেশি সময় লাগেনি! হায়দ্রাবাদ বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের যথারীতি বাজে ম্যানেজমেন্ট এবং রুঢ় আচরণ, সে সঙ্গে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ আমার সব পরিকল্পনাতেই জল ঢেলে দিল। আমাদের সাকুল্য চারটি পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন শেষ করতেই প্রায় দু ঘন্টা সময় পেরিয়ে গেলো! এর মাঝে আবিস্কার করলাম, ছোটবোন রাফার পাসপোর্টে যে ভিসা সীল পড়েছে, সেখানে পাসপোর্ট নাম্বারটি ভুল। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বিষয়টি নজরে এনে রীতিমতো টেরোরিস্ট জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দিলেন। ঘটনাটি খুলে না বললেই নয়। এটা পাঠকদের সচেতনতার জন্যেও জরুরী।
ভিসা আবেদনের পর ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টার থেকে পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার পর আমি কেবল পাসপোর্টের পৃষ্ঠা উল্টে চেক করলাম যে, সীল পড়েছে কী না। দেখলাম ভিসা এসেছে ছ মাসের। এটি দেখেই আমি আনন্দে আত্মহারা! অন্য কোনো তথ্য বা আর কিছুই আমি চেক করিনি। কিন্তু, রাফার ভিসার পৃষ্ঠায় তাঁর পাসপোর্ট নাম্বারের শেষে ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারের ভুলে একটি অতিরিক্ত ডিজিট প্রিন্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ, ধরুন আপনার পাসপোর্ট নাম্বার ‘০১২৩৪’। এই নাম্বারটিই ভিসা পৃষ্ঠায় প্রিন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু এর শেষে একটি অতিরিক্ত ‘১’ জুড়ে ‘০১২৩৪১’ হয়ে যায় প্রিন্টে। এই বিষয়টি আমরা একদমই খেয়াল করিনি। কিন্তু জটিল অথচ সহজ এই বিষয়টি নিয়ে হায়দ্রাবাদ ইমিগ্রেশন আমাদেরকে রীতিমতো গলদঘর্ম করে তুলে। তাছাড়া, যাদের তেমন কোন সমস্যা ছিলো না, ওদেরকেও নানান প্রশ্নবানে জর্জরিত করে রীতিমতো হেনস্তা করছিলো এই কর্তৃপক্ষ। তাই পরবর্তীতে আমি সবাইকে পরামর্শ দিয়েছি, আদতে হায়দ্রাবাদ ইমিগ্রেশন এড়িয়ে চলার জন্যেই!
হায়দ্রাবাদ ইমিগ্রেশনের এই দুঃস্বপ্ন ভুলে এবার আমার লাগেজ সংগ্রহ করার পালা। এটি সংগ্রহ করতে তেমন কোন ঝাক্কি পোহাতে হয়নি, তবে আমাদের বিমানে থাকা অনেকেরই লাগেজ খুঁজে পেতেও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এদিকে, মানসিকভাবে তখন আমি এতটাই বিধ্বস্ত যে, হায়দ্রাবাদ ঘুরবার কথা একদম ভুলে গেলাম। বিমানবন্দরের আশপাশ ঘুরলাম একটু, আর হালকা কিছু খাবার কিনে নিলাম চারজনের জন্য। এখানে পরামর্শ দিতে চাই, প্রত্যেক পরিবার বা ব্যক্তি বিশেষের উচিত সঙ্গে বেশ ভালো পরিমাণে শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে ট্রাভেল করা। আমরা একটা ভেজিটেবল স্যান্ডুইচ কিনেছি সেখানে ৪৫ রুপি করে, অথচ একটা ছোট ৩০০ এমএল পানির বোতল কিনেছি ৭০ রুপি দিয়ে। আমরা ব্যাগেজ কমানোর চক্করে পড়ে খাবারের বিষয়টিতে তেমন জোর দিইনি। কিন্তু পরবর্তীতে ঠিকই ভোগান্তির শিকার হয়েছি।
হালকা নাস্তা শেষ করলাম। আরও প্রায় দু ঘন্টার মতো বাকি আছে বেঙ্গালুরুগামী ফ্লাইট বোর্ডিং হওয়ার। কিন্তু, চারজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আর বাইরে ঘুরাঘুরি ঠিক হবেনা। ইতোপূর্বে ইমিগ্রেশন আমাদের সবার মনেই এতটা ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, যথাসম্ভব সময় হাতে রেখেই ফ্লাইট অবধি যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভাবনা অনুসারে পৌঁছে গেলাম ইন্ডিগো কাউন্টারে। লাগেজ দিয়ে দিলাম বক্সে। এখানেও বন্দর চেকিং এর হাজারো গেইট পাড় হতে হলো। আন্তর্জাতিক যাত্রী হিসেবে কোন সম্মান তো দূর, ওল্টো হেনস্তা ও ভোগান্তিই বেশি পোহাতে হলো।
সব পর্ব শেষ করে যখন বিমানের উঠার নির্ধারিত গেইটে বসে আছি, তখন খবর এলো, গেইট চেঞ্জ হয়েছে! আবারও হাঁটা ধরলাম নতুন গেইটের উদ্দেশ্যে। হায়দ্রাবাদ এয়ারপোর্ট প্রায় ৫৫০০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। প্ল্যাটফর্মটাও এত বিশাল, যা বলে বুঝানো যাবেনা! গেইট খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হলো। এরপর অপেক্ষার পালা শেষ করে অতঃপর নির্ধারিত ফ্লাইটের দেখা পেলাম। যাত্রা আরম্ভ হলো।
বিমানে আগের মতোই আব্বা, আম্মা এবং ছোটবোন একসঙ্গে বসলেন। আমি অন্য সারিতে। আমার পাশে যিনি বসলেন, একটু বয়স্ক, লম্বা, ফরসা ব্যক্তি! আলাপ শুরু করলাম। পরিচয় হলো টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ এর একজন সম্মানিত ফেলোর সঙ্গে। তিনি বেঙ্গালুরু শহরের বাসিন্দা; সস্ত্রীক ভূবনেশ্বর যাত্রা করে নিজ ভূমে ফিরছেন। উনার সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতেই এক ঘন্টার ফ্লাইট কখন যে শেষ হয়ে এলো, টের পেলাম না! তিনি শহর সম্পর্কে অনেক ধারণা দিলেন। আমি নগর পরিকল্পনার ছাত্র জানতে পেরে তিনিও বেশ আনন্দিত হলেন। অনেক দিকনির্দেশনাও দিলেন। অতঃপর বিমানবন্দরে নেমে বিদায় দিলেন আমাদের।
যখন আমরা বিমানবন্দরে লাগেজ ক্যারি করে এক্সিট পয়েন্ট অবধি এলাম, তখন ভারতীয় সময় রাত সাড়ে বারোটা, যা বাংলাদেশে একটা প্রায়! এবার বিমানবন্দর থেকে বোমাসান্দ্রা অর্থাৎ, নারায়ানা হাসপাতাল এলাকায় যাবার পালা। আরও প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা গাড়ীতে করে পাড়ি দিতে হবে। অর্থাৎ রাত বেজে যাবে প্রায় তিন-চারটে। হায়দ্রাবাদ ট্রানজিট এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেয়ার এটাও একটা কারণ। আমি ইতোপূর্বে, ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ মারফত অনেকগুলো হোটেল সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলাম। সেখানেই থাকা এসবিআর লাক্সারী রুমস নামক এক হোটেল ম্যানেজারকে বলেছিলাম গাড়ী ব্যবস্থা করে দিতে। তিনি গাড়ী ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
এবার পূর্ব নির্ধারিত পিকাপ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ওই গাড়ীর ড্রাইভারকে ফোন দেয়ার পালা। ইচ্ছে ছিলো বেঙ্গালুরু শহরে নেমেই ভারতীয় সিম কিনে নিবো। কিন্তু বিমানবন্দরে সিম প্রতি প্রায় ৮০০ রুপি করে চাইলো। তাই কোন সিম আর কিনলাম না। ভাবলাম পরদিন হাসপাতাল এরিয়া থেকেই কিনবো সিম। তাই এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা এক স্থানীয় ব্যক্তিকে ওনার ফোন থেকে হটস্পট দেয়ার অনুরোধ করলাম। তিনি খুশিমনেই আমাদের সাহায্য করলেন। আমি ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে গাড়ীতে উঠে গেলাম। উদ্দেশ্য ছিলো পূর্বোল্লিখিত হোটেলেই গিয়ে রাতে উঠবো। কিন্তু গাড়িতে ড্রাইভার রাজুর সঙ্গে বিশেষ হৃদ্যতা গড়ে তুলতে সক্ষম হই। সে আমাকে ওই হোটেল সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক তথ্য ও প্রমাণ দেখায়, যা দেখার পর পরিবার সমেত ওই হোটেলে যাবার মন উঠে যায়।
তবুও ওই হোটেলে গিয়ে ওই ম্যানেজারকে ওঁর রুম খালি রাখার জন্য বরাদ্দ টাকা দিয়ে আমি ড্রাইভার রাজু সমেত বেরিয়ে পড়ি হোটেল খুঁজতে। তাঁর সাহায্যেই কয়েকটি হোটেল দেখার পর একটি হোটেলে গিয়ে উঠি। নাম, সুমাইয়া লজ। থাকার জায়গা হিসেবে ভালোই। মুসলিম বাড়ী। তবে সুবিধা ভাড়ার তুলনায় কিছুটা কম। দুই রুম, রাত প্রতি আটশ রুপি ভাড়া, এটাই ওখানকার প্রচলিত রেট। কিন্তু পরিচ্ছন্ন। মালিক পক্ষ, ম্যানেজার সবাই মুসলিম ও আসাম থেকে এসেছেন। রাতে এই হোটেলেই উঠলাম। তখন ইতোমধ্যে ঘড়ির কাটায় সাড়ে চারটে প্রায়।
এখানে অবশ্যই লিখতে চাই, রাতের বেঙ্গালুরু শহর এড়িয়ে চলাই ভালো। বিশেষ করে পরিবার নিয়ে যারা যাবেন বা যাবার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে এই লাইনটি একদমই যথার্থ। গোটা রাস্তা এতটা ফাঁকা এবং ভয়াল, যা অপরিচিত পরিবেশে আপনাকে অবশ্যই ভীত করতে বাধ্য। তাছাড়া, ওখানে পূর্ব হতে ড্রাইভার নির্ধারিত করা না থাকলে আপনি যেকোনো সময় বাটপারের খপ্পড়ে পড়তে পারেন, যারা মাঝ রাস্তা অবধি নিয়ে গাড়ি থামিয়ে কেড়ে নিবে আপনার সঙ্গে থাকা যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র কিংবা অর্থাদি। তাই এই রাস্তা দিনের বেলা যাওয়াই উত্তম।
এভাবেই প্রায় ২০ ঘন্টার জার্নিতে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমি বাংলাদেশ থেকে বেঙ্গালুরুতে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হই। কিন্তু নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ভারতে যেতে ইচ্ছুক নির্দিষ্ট গন্তব্যে যদি ডিরেক্টর ফ্লাইট না থাকে, তবে ট্রানজিট ফ্লাইট না নিয়ে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে স্থলপথে প্রবেশ করাই সর্বোত্তম। বেনাপোল, হিলি, আগরতলা কিংবা মৈত্রী ট্রেনের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে এরপর ট্রেনে বা বিমানে যাওয়া উচিত বেঙ্গালুর। এক্ষেত্রে, ট্রেন ভ্রমণের চেয়ে বিমান ভ্রমণই শ্রেয় মনে হয়েছে। বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি সামনের অধ্যায়গুলোতে তুলে ধরবো।
বেঙ্গালুরু যাত্রার অভিজ্ঞতা আমার মিশ্র অনুভূতিতে সিক্ত। আকাশে পরিবার সমেত প্রথম উড়ানের রোমাঞ্চ হতে ইমিগ্রেশনের অত্যধিক ভোগান্তি, পরবর্তীতে হোটেল খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম হওয়া, সবমিলিয়ে যাত্রা খুব যে সুখকর হয়েছে, তা বলা যায়না। আবার মন্দও বলা যায়না। অনভিজ্ঞতাবশতই অর্ধেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে আমায়। তাছাড়া, পরিবার সঙ্গে থাকায় মানসিকভাবেও আমি কিছুটা ভীত ছিলাম। তবে, সামনের দিনগুলোতে আরও কী কী দূর্ভোগ অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য কিংবা কোথায় কোথায় ভোগান্তিতে পড়লাম, কোথায় হেনস্তা হলাম কিংবা কোথায় ভাল কিছু পেলাম, সে গল্প লিখবো পরবর্তী লেখনীতে। সে অবধি সবাই ভালো থাকুন, সৃষ্টিকর্তার নিকট এই মোর প্রার্থনা।
লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেহাদ