ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: ঘন্টা দুয়েক চোখ বুজে থাকার পর সকালবেলা সাতটা নাগাদ ঘুম ভেঙ্গে গেলো এক কন্নড় গানের ব্যাপক আওয়াজে। পরে জানতে পেরেছিলাম, প্রতিদিন সকালবেলা গোটা কমিউনিটির বাসা-বাড়ি-হোটেল হতে ময়লা সংগ্রহ করতে স্থানীয় মিউনিসিপালিটির যে গাড়ীটি আসে, সেই গাড়ীটিই প্রতি বাসার সামনে এসে এই গানটি তীব্র সাউন্ডে বাজায়। গানের অর্থটি এরূপ: সকালে ঘুম ভাঙ্গলে, আরোগ্য ও মুক্তি মেলে!
এদিকে, চোখ খুলতেই সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আমার মনে এলো, তা হচ্ছে সাথে থাকা বাকি তিনজনের প্রায় ২৪ ঘন্টার কাছাকাছি সময় প্রায় অনাহারে থাকার বিষয়টি! দেশ ছাড়ার পর মাঝখানে হায়দ্রাবাদ ট্রানজিটে আমরা অল্প পরিমাণ স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু যাত্রার দীর্ঘপথ এবং নানান ভোগান্তিতে শরীর এতটাই শ্রান্ত হয়ে পড়েছিলো যে সেই খাবারটুকুও তখন মুঠোভর দানা তূল্য!
খেয়াল আছে, গতকালের দীর্ঘ যাত্রা শেষে ক্ষুধার যন্ত্রণা সবার মাঝে এতটাই ভর করেছিলো যে, আমার বাবা লজে চেক ইন করেই কাতর কণ্ঠে ম্যানেজারকে বলছিলেন, কোথাও থেকে যেন অন্তত দু মুঠো মুড়ি বা বিস্কিটের ব্যবস্থা করা হয়! কিন্তু তখন আশপাশের যাবতীয় সব দোকানই বন্ধ থাকার দরুণ সেটা সম্ভবপর হয়নি! যাহোক, আমি বেরিয়ে পড়লাম নিকটস্থ কোনো খাবারের হোটেল খুঁজতে!
উল্লেখ্য, বেঙ্গালুরুতে নারায়ানা হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর উদ্দেশ্যে গিয়ে যেসব হোটেলে বা লজে সাধারণত বাংলাদেশীগণ উঠেন, সেখানে দুটো রুমের পাশাপাশি কিচেন, কিচেনের প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র দেয়া হয় আলাদাভাবে। কিন্তু, আমাদের কাছে কোন বাজার না থাকায় এবং অসম্ভব ক্লান্তি ভর করায় তখন রান্না সম্ভবপর ছিলো না!
লজ থেকে বেরিয়েই বেশ কিছু রেস্টুরেন্টের দেখা পেলাম। কিন্তু সবগুলোই তখনও বন্ধ। এরা সাধারণত স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আট হতে নয়টা নাগাদই দোকান খুলে থাকে। কিঞ্চিৎ ঘুরাঘুরি শেষে একটি রেস্টুরেন্টের দেখা পেলাম। নাম, অন্নপূর্ণা হোটেল। মালিক ও কর্মচারী সবাই অবাঙ্গালী; কিন্তু, বেশ ব্যস্ত হোটেল! মোট খদ্দেরের ৯০ শতাংশই বাংলাদেশী। দামও বাংলাদেশের সাধারন খাবার হোটেলগুলোর মতোই, তবে রান্নাটা মজার ও পরিচ্ছন্ন। হোটেলের কর্মচারী এক বিহারী ছেলের সাথে পরিচয় হলো, নাম স্বন্দ্বীপ। ছেলেটির সঙ্গে একটু ভাব জমলো। অতঃপর সবার খাবার নিয়ে পুনরায় লজে ফিরলাম।
রুমে ফিরেই দেখলাম ইতোমধ্যে সবারই ঘুম ভেঙ্গেছে। ক্ষুধার যাতনায় সবাই মোটামুটি নিষ্প্রাণ তূল্য। তড়িঘড়ি খেতে বসলাম; আর, সঙ্গে শুকনো খাবার বেশি না আনবার ভুলে নিজেদের উপরই নিজেরা ক্ষোভ প্রকাশ করলাম! খাওয়া শেষে আমি বেরুলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। একই সঙ্গে, আরও বেশ কয়েকটি লজ দেখে নেয়ারও ইচ্ছে। ভাবনানুসারে গন্তব্য পথ ধরলাম! এখানকার লজ বা হোটেলগুলোর আবার হাসপাতালের সাথে একটি লিখিত চুক্তি রয়েছে। লজ কর্তৃপক্ষ সকল রোগী ও রোগী পরিবারকে বিনামূল্যে সারাদিনই হাসপাতাল থেকে লজ এবং লজ হতে হাসপাতালে গাড়ি করে পৌঁছে দেয়, যতবার প্রয়োজন, ততবারই। এটি লজের দিনপ্রতি মোট ভাড়া ৮০০ রুপির মাঝেই অন্তর্ভূক্ত। কোন হিডেন চার্জ নেই।
আমাদের লজ থেকে হাসপাতাল প্রায় কিলোখানেক রাস্তা। গাড়িতে যেতে ২ মিনিটের মতো সময় লাগলো। পথিমধ্যে বাজারঘাট ও সদাইখানা, ফার্মেসি সবই দেখে নিলাম। অসংখ্য ট্যুর এজেন্সির অফিসও চোখে পড়লো। হাসপাতালের সামনে নেমেই বিএমএস ট্যুরস নামের একটি দোকান হতে একটা এয়ারটেল সিম কিনে নিলাম, দাম নিলো ৫০০ রুপি। সিমের সুবিধা হচ্ছে, পরবর্তী ২৮ দিনের জন্য দৈনিক দেড় জিবি ও সারা ভারতে অফলাইন কল ফ্রি। সিম কিনতে আমার পাসপোর্টের একটা ফটোকপি প্রয়োজন পড়লো। যারা কলকাতা হয়ে ভারতে প্রবেশ করবেন, তাঁদের জন্য কলকাতা থেকেই সিম কেনা উত্তম। কেননা একই প্যাকেজে ২৯৯ রুপিতে সিম পাওয়া যায় সেখানে। অতঃপর হাসপাতাল ঢুকেই এক ভারী দুঃসংবাদ শুনলাম! রীতিমতো চোখ কপালে তোলার মতো! সম্পূর্ণ নিজের অনভিজ্ঞতা ও বোকামোতে এই দুর্ভোগের শিকার হতে হলো! ঘটনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি।
আমরা ঢাকা হতে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে রওনা দিই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের শুক্রবার। বিমান ভ্রমণ হেতু সেদিন রাতেই আমরা পৌঁছে যাই। ইচ্ছে ছিলো শনিবার হতেই ট্রীটমেন্ট পুরোদমে শুরু করার। কিন্তু শনিবার যাবার পর জানতে পারি, দিনটি হাসপাতাল কর্তাদের শীতকালীন ছুটি, পরদিন রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং সোমবার ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ, বেঙ্গালুরুতে আমি পৌঁছানোর পর টানা তিনদিন হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ! বিষয়টি আমাকে রীতিমতো হতাশ করে তুলে! একেতো গতদিনের যাবতীয় ঝাঁকি, ভোগান্তি ও ক্লান্তি, দ্বিতীয়ত, হাসপাতালের এই টানা তিন কর্ম দিবস বন্ধ থাকা, সবটাই আমার উপর মানসিকভাবে ভীষণ চাপ প্রয়োগ করছিলো! একইসঙ্গে, নিজের পরিকল্পনাগত ত্রুটির উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিলো!
ক্ষোভ-হতাশা পাশ কাঁটিয়ে হাসপাতালের আদ্যোপান্ত জানতে চেষ্টা করলাম। ইতোপূর্বে বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও এবং ফেসবুক লেখনীর মাধ্যমে হাসপাতাল সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরী হলেও নিজে বাস্তব জ্ঞান না নিলে, সেসব ধারণার গুরুত্ব প্রায় শুন্য! তাছাড়া, হাসপাতাল এলাকার প্রতিটি জায়গা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিনে নেয়ার একটা ইচ্ছেও ছিলো। একই সময়ে, হাসপাতালে ভর্তি প্রক্রিয়া, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সবকিছু সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিলাম। হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে চিকিৎসা আরম্ভ অধ্যায়ে বিশদ লিখার ইচ্ছে রয়েছে।
খেয়াল করে দেখলাম, রোগীদের সিংহভাগ বাংলাদেশী। সিংহভাগ শব্দটি দিয়েও আসলে এই সংখ্যা বলে বুঝানো যাবেনা। মনে হলো, ৯০ ভাগ রোগীই বাংলাদেশ হতে আগত। বাকিরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য হতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এর মাঝেও আসাম ও পশ্চিমবঙ্গেরই আধিপত্য। স্থানীয় কর্ণাটক ও তামিল রোগীর সংখ্যা খুবই কম। যদিও স্টাফদের বেশিরভাগই কন্নড় বলে মনে হলো।
তবে, একটি বিষয়ে বেশ খটকা লাগলো! রোগীর বেশিরভাগই যদিও বাংলাদেশ হতে আগত, কিন্তু, হাসপাতাল স্টাফদের মাঝে বাংলা বলতে পারেন, এমন সংখ্যা খুবই কম। যদিও, নারায়ানা হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন পর্বের শুরুতেই বাংলাদেশীদের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশন বুথ রয়েছে, সেখানে সবাই বাংলাতেই কথা বলেন, তথাপি, পরবর্তী প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপে হিন্দি বা ইংরেজি না জানা, কিংবা না বুঝতে পারার বিষয়টি সবাইকে ভোগাতে বাধ্য।
আমাদের বাংলাদেশে লোকজনের মাঝে একটি ধারণা প্রচলিত যে, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইতে চিকিৎসা নিতে গেলে সব জায়গাতেই বোধ হয় বাংলা দিয়েই পার পাওয়া যায়! কিন্তু, বেঙ্গালুর শহরে এসে আমার এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। আমার হিন্দি মোটামুটি ভালো হওয়ায় আমার কাজ চালিয়ে নিতে তেমন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হলো না। কিন্তু, অনেক বাংলাদেশীকেই দেখলাম বিষয়টি নিয়ে বিপদের সম্মুখীন হতে।
যাহোক, হাসপাতাল সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা নেয়া শেষে আমি বেরুলাম আশপাশের লজ সমূহ দেখতে। হাসপাতালের পাশের অনেক লজ দেখা মাত্রই পছন্দ হয়ে গেলো, কিন্তু, সেগুলোতে আবার চারজন থাকতে গেলে খরচা বেশি পড়ে যায়। আবার, অনেকগুলো লজের রুমগুলো দেখতে শুনতে ভালোই, তথাপি আশপাশ অনেকটা দম-বন্ধ পরিবেশ। পাশাপাশি, চাচ্ছিলাম একটা মুসলিম হোটেলেই থাকতে। সেদিক থেকেও কোন যুতসই লজ না পেয়ে অতঃপর আমি সুমাইয়া লজেই ফিরে গেলাম। যাবার পথে হাসপাতালের পাশে থাকা ‘ফুড জোন’ রেস্টুরেন্ট থেকে বাসার সবার জন্য খাবার কিনে নিয়ে গেলাম। এখানে বাঙ্গালীদের জন্য সব রকমের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আমি কিনে নিলাম, বেঙ্গলী ভেজ থালি! তিন রকমের সব্জি, ডাল, ভর্তা, পাপড় ও ভাতের সমন্বয়ে তৈরী প্যাকেজটি জনপ্রতি ৯০ রুপি করে পড়লো। এখানেই ডিম থালি নিলে সেটার দাম পড়বে ১০০ রুপি। আর চিকেন বা ফিশ থালি নিলে সেটার দাম পড়বে ১৪০ রুপি।
এদিকে, বাসায় ফিরে শুরুতেই সবাইকে খারাপ খবরটি বললাম। টানা তিনদিন হাসপাতাল বন্ধের খবরে বাবা-মা-বোন সবাই যারপরনাই হতাশ হলো। বিদেশ বিভূঁইয়ে একটি রাতও যেন বছরসম মনে হলো আমাদের! যাহোক, পরিস্থিতি মেনে নিয়ে আমরা সপরিবারে সিদ্ধান্ত নিলাম, এই হোটেলেই থাকবো। ইতোমধ্যে, এই লজে বাংলাদেশী অনেক পরিবারের সন্ধান পেলাম, যারা প্রায় সপ্তাহ দুয়েকের বেশি সময় ধরে সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁদের থেকেও রিভিউ ভালো পেলাম। লজের চারপাশটা বেশ খোলামেলা। পার্কও রয়েছে একটি। পাশেই বাচ্চাদের গভর্নমেন্ট স্কুল। লজ ম্যানেজারের ব্যবহারও ভালো। তবে সবচেয়ে ভালো লাগলো, লজটি যার নামে, সেই সুমাইয়া নামের পিচ্চি মেয়েটাকে দেখে। লজ মালিকের মেয়ে, বয়স বছরখানেক হবে। মাশাল্লাহ, পিচ্চিটার মিষ্টি হাসি ভূবন ভোলানো! ওঁর পরিবারের সাথেও কথা হলো। সব মিলিয়ে লজ এনভায়রনমেন্ট ভালো লাগতেই আরম্ভ করলো!
দুপুরের ভোজ শেষে বাসার সবাইকে নিয়ে পুনরায় হাসপাতাল গেলাম। সেখানে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো সেগুলো সম্পন্ন করা এবং সবাইকে হাসপাতালের সঙ্গে পরিচিত করা। কিন্তু বিধিবাম! দুপুর পেরুতেই হাসপাতালের সব কর্মীরাও বিদায় নিয়েছেন। ছুটির দিনে অবশ্য গুটিকয়েক কর্মী যে উপস্থিত ছিলেন, সেটাও অবাক করার বিষয়! যাহোক, সবাই মিলে লজে ফিরে এলাম। এবার গন্তব্য বাজার করা। কারণ সকাল ও দুপুর দু বেলা হোটেলে খেয়ে ইতোমধ্যে আমাদের প্রায় ৬০০ রুপির মতো শেষ হয়েছে। চিকিৎসা করাতে এসে একটি পয়সা বাঁচানোও যেখানে কৃতিত্বের, সেখানে শুধু দু বেলা খেতে গিয়েই আমাদের প্রায় ৬০০ রুপি শেষ হয়ে গেলো! তাই, রাত হতে রান্না করে খেতে হবে!
সকালবেলা হাসপাতাল যাবার পথেই বেশ কিছু সদাইখানা ও বাজারের সন্ধান পেয়েছিলাম। সে মোতাবেক বাজার করতে এলাম। প্রথম রাতের বাজার হিসেবে কিনলাম, তিনটি আলু, দুটো পেঁয়াজ, চারটে ডিম, একটি বেগুন। মোট ৫০ বা ৫২ রুপির বাজার হলো। শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টি বেশ আকর্ষণীয়! এখানে বাংলাদেশের মতো কৃত্রিমতা নেই। আমাদের দেশে বাজারে গেলে বেশি করে জিনিস কেনার যে একটা আলগা ভাব দেখাতে হয়, এখানে তেমন না। স্থানীয় কিংবা বাংলাদেশী, প্রত্যেকেই এখানেই নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে প্রতিবেলার জন্য টাটকা বাজার খরিদ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
বাজারদরও খুব কমই মনে হলো। পেঁয়াজের কেজি ৪০ রুপি, আলু ২৫ রুপি কেজি, বেগুন ৩০ রুপি কেজি, ডিম ২৪ রুপি হালি, টমেটো ২০ রুপি কেজি, চাল ৪০ রুপি কেজি। এখানে ফলের দামও অনেক কম। ডালিম ১২০ রুপি কেজি, আঙুর ৮০ হতে ১০০ রুপি কেজি, কমলা ৬০ হতে ৮০ রুপি কেজি, আপেল ৮০ রুপি কেজি। তবে অবাক হলাম দুটো বিষয়ে। কর্ণাটকে কলা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এক কেজি কলার দাম ৩৫ হতে ৪০ রুপি। প্রতি কেজিতে প্রায় ১২ টির মতো বড় সাগর কলা ধরছে। অন্যদিকে, পেয়ারার দাম এখানে অনেক বেশি। প্রতি কেজি পেয়ারার দাম এখানে দোকানভেদে ৮০ হতে ১৫০ রুপি। পরবর্তীতে জানতে পারি, মাছের দামও এখানে কম। তবে মাছ তুলনামূলক কম পাওয়া যায়। রুই মাছের দাম দোকানভেদে কেজি প্রতি ১৮০ রুপির কাছাকাছি, কাতল মাছের দাম ২৫০ রুপি কেজি, গরুর মাংসের দাম ২৫০ রুপি কেজি, মুরগী কেজি প্রতি ১০০ রুপির মতো।
এভাবেই বেঙ্গালুরু এসে আমার দ্বিতীয় দিন কেঁটে গেলো আবাসনের একটা টেকসই বন্দোবস্ত করতে এবং বাজার-সদাই এর একটা নির্দিষ্ট রুটিন তৈরী করতে। আর, খাবার খরচও এরপর আমাদের কমে গিয়েছিলো। কেননা, দ্বিতীয় দিন রাত হতে পরবর্তী প্রতিদিনই বাসায় আম্মু নিজেই রান্না করতেন। তাই এটা গতানুগতিক সংসার জীবনের মতোই প্রতীয়মান হতে লাগলো। এভাবেই চিকিৎসা শুরুর প্রারম্ভেই থাকা ও খাওয়ার একটা সুষ্ঠু গতি করতে সমর্থ হই।
নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বেঙ্গালুরু চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পূর্বেই হোটেল নির্ধারিত করা থাকলে এই নানাবিধ সমস্যা পোহাতে হবেনা। তাছাড়া, দরদাম করলে আরেকটু কমের মাঝেও হোটেল বুকিং করতে পারবেন। আমার যেহেতু সবটাই তাৎক্ষণিক করতে হয়েছে, তাই আমি সাময়িক বেকায়দায় পড়েছিলাম এই বিষয়ে। খরচাও একটু বাড়তি হয়েছিলো। হাসপাতালের আশপাশ ঘুরে কয়েকটি হোটেলকে বেশ পরিচ্ছন্ন মনে হয়েছে। সেগুলোর মাঝে রয়েছে, রয়্যাল হোটেল, গ্রীন হোটেল, বালাজি হোটেল, অর্কিড হোটেল, এএমভি হোটেল, এমআর হোটেল সহ প্রভৃতি। পাঠক চাইলে এগুলোর সম্পর্কে ফেসবুকে খোঁজ নিয়ে যেতে পারবেন।
একই সঙ্গে পাঠক মহলের সঙ্গে স্বীয় ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই। বাংলাদেশ হতে যারা বিমানে বা ট্রেনে বেঙ্গালুরু আসার পরিকল্পনা করছেন, কিংবা চিকিৎসা নিতে ভারতের যেখানেই যান না কেনো, এমন শিডিউল করবেন যেনো রবিবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছান। তবে অনেকটাই উপকৃত হবেন। কেননা, এতে করে ভারতীয়দের সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে আপনি যাত্রার মধ্যে থাকবেন এবং পরদিন থেকেই কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অনুসারে কাজ আরম্ভ করতে পারবেন।
লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেহাদ