ভারতের অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে নতুন করে ‘অখণ্ড ভারত’ প্রসঙ্গ টেনে আনল ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। আজ শনিবার বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব তাঁর রাজ্যে এক অনুষ্ঠানে বলেন, অযোধ্যায় মন্দির প্রতিষ্ঠা অখণ্ড ভারত গড়ে তোলার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আগামী সোমবার বিপুল আয়োজনে অযোধ্যায় অসমাপ্ত রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই দিনে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ হবে ‘রামলালা’র (বালক রামচন্দ্র) বিগ্রহে। সেই উপলক্ষে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। মধ্যপ্রদেশের বৈরাগড় এলাকায় তেমনই এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব আজ অখণ্ড ভারত গড়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই রামমন্দির তৈরি হয়েছে। তাঁর ইচ্ছাতেই এটা হবে অখণ্ড ভারত গড়ে তোলার এক বিরাট পদক্ষেপ।’
মোহন যাদব দলের বিজেপির কট্টরপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের সৌভাগ্য যে ৩০–৩২ বছরের সংগ্রামের পর অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। ৫০০ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম রামমন্দির প্রতিষ্ঠার লড়াই করে এসেছে। আজ তা সফল। ঈশ্বর চাইলে অখণ্ড ভারত আবার তৈরি হবে। আজ না হলে কাল তা হবেই। সেই অখণ্ড ভারতের ব্যাপ্তি পাকিস্তানের সিন্ধু ও পাঞ্জাবে গিয়ে শেষ হবে না। শেষ হবে আফগানিস্তানে। আমরা আবার সহজে নানকানা সাহিব (পাকিস্তানের পাঞ্জাবে শিখ গুরু নানকের জন্মস্থান) যেতে পারব সহজেই।’
অখণ্ড ভারত ধারণা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শের অন্যতম। সেই ধারণায় একসময় ভারতবর্ষের ব্যাপ্তি ছিল পশ্চিমে আফগানিস্তান (গান্ধারী কান্দাহারেরই কন্যা) থেকে পূর্বের মিয়ানমার ও উত্তরে তিব্বত থেকে দক্ষিণের শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। অর্থাৎ মোহন যাদবের কথা মতো অখণ্ড ভারত কোনো দিন প্রতিষ্ঠিত হলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তিব্বত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।
অখণ্ড ভারত ধারণাটির একটি রূপ ভারতের নতুন সংসদ ভবনেও দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২৮ মে দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে অখণ্ড ভারতের একটি ম্যুরাল বা মানচিত্র স্থান পেয়েছে। তার ছবি দিয়ে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি সে সময় টুইট করে লিখেছিলেন, ‘সংকল্প স্পষ্ট : অখণ্ড ভারত’। অর্থাৎ অখণ্ড ভারত গঠনই তাঁদের সংকল্প। সে সময় কর্ণাটকের শাসক দল বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেলেও অখণ্ড ভারতের ম্যাপের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছিল, ‘আমাদের গর্বিত মহান সভ্যতার জীবনী শক্তির প্রতীক।’ তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল বিস্তর।
বিতর্ক প্রথম সৃষ্টি করেছিলেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘এই মানচিত্র নেপালসহ ভারতের অন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রে অহেতুক ও ক্ষতিকর বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। বিভিন্ন প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের বিশ্বাসের যে ঘাটতি রয়েছে, তা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উপাদান এই মানচিত্র রয়েছে। বিষিয়ে তুলতে পারে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক।’
ওই মানচিত্র নিয়ে বাংলাদেশেও উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। বিভিন্ন সংগঠন মনে করেছিল, ওই ম্যুরাল রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অবমাননা করা হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের সে সময়ের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সেই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ভারত জানিয়েছে, ওই ম্যুরালে সম্রাট অশোকের সাম্রাজ্য দেখানো হয়েছে। সেটি ছিল যীশুখ্রিষ্টের জন্মেরও ৩০০ বছর আগে। ভারতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ওই মানচিত্রে আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক সাযুজ্য ধরা হয়েছে। শাহরিয়ার বলেছিলেন, ওই ম্যুরাল নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে বিভ্রান্তির সেই অবকাশ অখণ্ড ভারত গঠন সম্পর্কে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন করে তৈরি হলো কি?