মেয়াদোত্তীর্ণ জাতীয় পার্টির ২ মার্চ কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছেন নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান দাবি করা রওশন এরশাদ। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির (রওশন) মুখপাত্র সুনীল শুভরায়।
এর আগেও একবার এক তরফা কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন রওশন এরশাদ। ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট এক তরফা কাউন্সিলের তারিখ (২৬ নভেম্বর ২০২২) ঘোষণা করে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন। এরপর প্রায় ৪৫টি জেলায় প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে রওশন পন্থীরা। এরপর ৩০ অক্টোবর এসে আচমকাই স্থগিত করা হয় কাউন্সিল। যদিও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের পন্থীরা বরাবরই বলে আসছেন রওশন এরশাদের কাউন্সিল আহ্বানের কোন এখতিয়ার নেই।
তবে রওশন এরশাদ এবার ভিন্ন কৌশল ঘোষণা করেছেন। গত ২৮ জানুয়ারি রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। রওশন দাবি করেছেন তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি আরও বলেছেন, পার্টির গঠনতন্ত্রে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে এমন কোনো এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। তাই রওশন এরশাদের ঘোষণার কোনো ভিত্তি নেই। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গঠনতন্ত্রে এমন কোনো ধারা নেই যে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কাউকে বাদ দেবেন। আগেও জি এম কাদেরকে বহিষ্কার ঘোষণা করেছেন। এটা তৃতীয়বার। পরে ঘোষণা আবার প্রত্যাহারও করেছেন। এটা নিয়ে ভাবছি না।
রওশন এরশাদ নিজেকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণার পর সুনীল শুভরায়কে পার্টির মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেন। সাংবাদিক সুনীল শুভরায় দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে রয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যূর আগে পর্যন্ত তার প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি ছিলেন। একই সঙ্গে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে ছিলেন। গত ১২ জানুয়ারি তার সকল পদ পদবী থেকে অব্যাহতি দেন জিএম কাদের।
কাউন্সিল প্রসঙ্গে সুনীল শুভরায় বলেন, বরাবরের মতোই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল হবে। আমাদের সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে।
জাপা মহাসচিবের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরাও তাদের বক্তব্য আমলে নিচ্ছি না। পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবকে অব্যাহতি দিয়েছেন। পার্টির অন্যান্য সকল কমিটি রয়েছে। তাদের নিয়েই কাউন্সিল করা হবে। তাদেরকেও ডাকা হবে তারা আসলে আসবে। কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী চেয়ারম্যান ও মহাসচিব কে হবেন।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে না পারায় ইসির কাছে দু’মাস সময় চেয়ে নিয়েছিল জাপা। এরপর আবার চিঠি দিয়ে সময় বাড়িয়ে নেয়।
সামরিক শাসনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভাঙন কবলিত। এরশাদের জীবদ্দশায় জাপা, জেপি, বিজেপি ও জাপা (জাফর) নামে চার টুকরো হয়ে যায়। এরমধ্যে জেপি রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে। বিজেপি এবং জাপা (জাফর) রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে। রওশনের প্রক্রিয়ায় জাপার আরেকটি গ্রুপের আত্মপ্রকাশ সময়ের বিষয় বলে মনে করছেন অনেকেই।