০১:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাকৃবির দিনপঞ্জি: হলের ছাদে বাহারি ইফতার

বাকৃবির বেগম রোকেয়া হলের ছাদে লেখক ও সঙ্গীদের ইফতার

সাদিয়া রহমান: আত্মশুদ্ধির মাস রমজানের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ‘ইফতার’। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে ইফতারে যে আনন্দ, তা বছরের অন্য কোন আয়োজনে হয়তো উপলব্ধি করা সম্ভবপর নয়! আর তাই পবিত্র রোজাকে কেন্দ্র করে আত্মশুদ্ধি ও ভ্রাতৃত্বের এ চিত্রের দেখা মেলে প্রতিদিনই। বিশেষ করে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে রোজার মাস মানেই যেনো ভিন্ন এক উৎসবের আমেজ! সেহরিতে এই উৎসবের ভাব তেমন ধরা না দিলেও ইফতারের বাহারি আয়োজনে তা চোখে পড়ে সবারই!

ইফতারকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন সাধারণত আসরের নামাজের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন আবাসিক হলের মাঠে কিংবা ছাদে সম্মিলিত হন শিক্ষার্থীরা। অনেকে আবার কাঙ্ক্ষিত জায়গা ধরা নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হোন। এই ঘটনাগুলো ছাত্রদের মনে একদিকে যেমন তাৎক্ষণিক আনন্দের জোগান দেয়, তেমনই বছরের পর বছর স্মৃতিপটে রয়ে যায় বিশেষ আবেগের অনুভূতি হয়ে!

এই ধরণের আয়োজনের বেলায় সাধারণত ছেলে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম বেশি চোখে পড়লেও মেয়েরা মোটেও পিছিয়ে নেই! মেয়েদের হলগুলোতেও ছেলেদের সমান্তরালে চলে বাহারি আয়োজন! তেমনই এক ইফতার আয়োজনের খবর নিয়ে আজকের এই লেখনী।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল। আমার বাকৃবি জীবনের প্রিয় আবাস স্থল! ব্রহ্মপুত্রের পাড় ঘেষা দৃষ্টিনন্দন এই হলটির বয়স বছর সাতেক প্রায়। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্তের আবহে হলটির চারপাশে যেনো এক মায়াবী ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়! রমজানের ইফতারে অনেক মেয়েই গ্রুপ ধরে হলের ছাদে এসে বসেন। অন্য সবার মতো আজকের ইফতারে আমিও বসলাম বাহারি পদের সমাহার নিয়ে। সঙ্গে অতিথি হিসেবে উপস্থিত আমার রুমমেট তিশা, জুনিয়র তন্নী ও  আফসানা।

প্রসঙ্গত, আমাদের আজকের আয়োজনে ছিলো খিচুড়ি, ডিম, ছোলা, পেয়াজি, আলুর চপ, বেগুনি, আপেল, কমলা, খেজুর, পেয়ারা, সুজির হালুয়া, জিলাপি, শরবত এবং সালাদ! বলা বাহুল্য, যেকোনো রেস্টুরেন্টের প্যাকেজ আইটেমের চেয়ে কোনো অংশে কম থাকেনা আমাদের নিজেদের প্রতিদিনের ইফতার আয়োজন! আজকে পরিবেশনের জন্য কয়েকটি বড় পাতাও জোগাড় করে নিয়েছিলাম, যাতে বিভিন্ন আইটেম রেখে আমরা একটু ভিন্ন রকম পরিবেশনায় খাবার গ্রহণ করতে পারি! তবে তৃপ্তির বিষয় এই যে, রোজা রেখেও আমাদের এই অনভিজ্ঞ রাধুনীদের রান্না স্বাদে-গন্ধে মাশাল্লাহ মজাদারই হয়েছিলো, যার সার্টিফিকেশনও অবশ্য আমরা নিজেরাই করেছি! স্বভাবতই উপরওয়ালার নিকট আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম!

হল জীবনের রমজান মাসের দ্রষ্টব্য বিষয়, সেহরিতে বাসার সবাইকে খুব মিস করি। মায়ের রান্নার সঙ্গে তো কিছুরই তুলনা নেই। তবে, বলতে দ্বিধা নেই, ইফতারে রুমমেট-বন্ধুদের মাঝে পরিবারকে খুঁজে পাই। তারাই যেনো আমার দ্বিতীয় পরিবার। ছাত্রজীবনের শেষাংশে এসে বুঝতে পারি, এই দিনগুলোই হয়তো সামনে অনেক বেশি মনে পড়বে! হয়তো আগামী রমজানেই আমি থাকবো ভিন্ন কোথাও! আমার এই রুমমেট বন্ধুরা থাকবে অন্যত্র নিজ জীবনে ব্যস্ত! বদলে যাবে পৃথিবী! কিন্তু রয়ে যাবে আমাদের স্মৃতি। রয়ে যাবে আমাদের এই মুহূর্তগুলো। আর, রয়ে যাবে ব্রহ্মপুত্রের পানি, যেনো অনন্ত অসীম তার পথচলা! দেশ থেকে দেশান্তরে, দূর-বহুদূর! সে অবধি টিকে থাকুক প্রাণাধিক প্রিয় বেগম রোকেয়া হল! প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়!

লেখক: স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ট্যাগ:

বাকৃবির দিনপঞ্জি: হলের ছাদে বাহারি ইফতার

প্রকাশ: ১০:৫১:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

সাদিয়া রহমান: আত্মশুদ্ধির মাস রমজানের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ‘ইফতার’। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে ইফতারে যে আনন্দ, তা বছরের অন্য কোন আয়োজনে হয়তো উপলব্ধি করা সম্ভবপর নয়! আর তাই পবিত্র রোজাকে কেন্দ্র করে আত্মশুদ্ধি ও ভ্রাতৃত্বের এ চিত্রের দেখা মেলে প্রতিদিনই। বিশেষ করে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে রোজার মাস মানেই যেনো ভিন্ন এক উৎসবের আমেজ! সেহরিতে এই উৎসবের ভাব তেমন ধরা না দিলেও ইফতারের বাহারি আয়োজনে তা চোখে পড়ে সবারই!

ইফতারকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন সাধারণত আসরের নামাজের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন আবাসিক হলের মাঠে কিংবা ছাদে সম্মিলিত হন শিক্ষার্থীরা। অনেকে আবার কাঙ্ক্ষিত জায়গা ধরা নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হোন। এই ঘটনাগুলো ছাত্রদের মনে একদিকে যেমন তাৎক্ষণিক আনন্দের জোগান দেয়, তেমনই বছরের পর বছর স্মৃতিপটে রয়ে যায় বিশেষ আবেগের অনুভূতি হয়ে!

এই ধরণের আয়োজনের বেলায় সাধারণত ছেলে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম বেশি চোখে পড়লেও মেয়েরা মোটেও পিছিয়ে নেই! মেয়েদের হলগুলোতেও ছেলেদের সমান্তরালে চলে বাহারি আয়োজন! তেমনই এক ইফতার আয়োজনের খবর নিয়ে আজকের এই লেখনী।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল। আমার বাকৃবি জীবনের প্রিয় আবাস স্থল! ব্রহ্মপুত্রের পাড় ঘেষা দৃষ্টিনন্দন এই হলটির বয়স বছর সাতেক প্রায়। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্তের আবহে হলটির চারপাশে যেনো এক মায়াবী ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়! রমজানের ইফতারে অনেক মেয়েই গ্রুপ ধরে হলের ছাদে এসে বসেন। অন্য সবার মতো আজকের ইফতারে আমিও বসলাম বাহারি পদের সমাহার নিয়ে। সঙ্গে অতিথি হিসেবে উপস্থিত আমার রুমমেট তিশা, জুনিয়র তন্নী ও  আফসানা।

প্রসঙ্গত, আমাদের আজকের আয়োজনে ছিলো খিচুড়ি, ডিম, ছোলা, পেয়াজি, আলুর চপ, বেগুনি, আপেল, কমলা, খেজুর, পেয়ারা, সুজির হালুয়া, জিলাপি, শরবত এবং সালাদ! বলা বাহুল্য, যেকোনো রেস্টুরেন্টের প্যাকেজ আইটেমের চেয়ে কোনো অংশে কম থাকেনা আমাদের নিজেদের প্রতিদিনের ইফতার আয়োজন! আজকে পরিবেশনের জন্য কয়েকটি বড় পাতাও জোগাড় করে নিয়েছিলাম, যাতে বিভিন্ন আইটেম রেখে আমরা একটু ভিন্ন রকম পরিবেশনায় খাবার গ্রহণ করতে পারি! তবে তৃপ্তির বিষয় এই যে, রোজা রেখেও আমাদের এই অনভিজ্ঞ রাধুনীদের রান্না স্বাদে-গন্ধে মাশাল্লাহ মজাদারই হয়েছিলো, যার সার্টিফিকেশনও অবশ্য আমরা নিজেরাই করেছি! স্বভাবতই উপরওয়ালার নিকট আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম!

হল জীবনের রমজান মাসের দ্রষ্টব্য বিষয়, সেহরিতে বাসার সবাইকে খুব মিস করি। মায়ের রান্নার সঙ্গে তো কিছুরই তুলনা নেই। তবে, বলতে দ্বিধা নেই, ইফতারে রুমমেট-বন্ধুদের মাঝে পরিবারকে খুঁজে পাই। তারাই যেনো আমার দ্বিতীয় পরিবার। ছাত্রজীবনের শেষাংশে এসে বুঝতে পারি, এই দিনগুলোই হয়তো সামনে অনেক বেশি মনে পড়বে! হয়তো আগামী রমজানেই আমি থাকবো ভিন্ন কোথাও! আমার এই রুমমেট বন্ধুরা থাকবে অন্যত্র নিজ জীবনে ব্যস্ত! বদলে যাবে পৃথিবী! কিন্তু রয়ে যাবে আমাদের স্মৃতি। রয়ে যাবে আমাদের এই মুহূর্তগুলো। আর, রয়ে যাবে ব্রহ্মপুত্রের পানি, যেনো অনন্ত অসীম তার পথচলা! দেশ থেকে দেশান্তরে, দূর-বহুদূর! সে অবধি টিকে থাকুক প্রাণাধিক প্রিয় বেগম রোকেয়া হল! প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়!

লেখক: স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।