০৯:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভালুকায় সুষ্ঠু সেচ ব্যবস্থাপনার্থে ‘মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ’

চাষাবাদের কাজে উপযুক্ত সেচ ব্যবস্থাপনা এবং ফসলে ভারী ধাতুর পরিমাণ কমানোর বিষয়ে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের উদ্যোগে ভালুকা উপজেলার আশকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ’। রবিবার (০৫ মে, ২০২৪) “Application of Intermittent Irrigation for Efficient Water Management and Its Impact on Heavy Metal Accumulation in Boro Rice” শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের আওতায় এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মো. আক্কাস আলী (ক্রপস এন্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস)। এছাড়া, আয়োজনের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট ড. মোঃ মনোয়ার করিম খান (ক্লাইমেট ও ন্যাচারাল রিসোর্সেস) এবং স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম। উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে এবং গৌরীপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মোঃ সোহেল রানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান টি পরিচালিত হয় যেখানে আরও বক্তব্য দেন বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি ফেলো সিফাত সুলতানা; পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান, খাদিজা খাতুন এবং মোঃ রুকনোজ্জামান নাসিম সহ প্রায় ৩০ জন কৃষক।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিশ্বে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানির ব্যবহার। একই সাথে মাটিতে বিশুদ্ধ পানির স্তর ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে। ফলত, অপরিহার্য হয়ে উঠেছে পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব। অন্যদিকে সেচের পানিতে ভারী ধাতু থাকায়, তা ধানের দানায় জমা হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই ধান চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ক্ষতিকর ধাতুর প্রভাব কমাতে এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ চেষ্টা।”

গবেষণা প্রকল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের গবেষণার প্লট হিসেবে ভালুকার আশকা এলাকাটিকে বেছে নিয়েছি; কারণ, এখানে বহমান খিরো নদীর পানি খুবই অপরিষ্কার এবং বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বর্জ্য মিশ্রিত। তাই এই পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতিও রয়েছে। এমতাবস্থায়, নদীর কাছাকাছি ১২ টি প্লটে তিনটি ভ্যারাইটির বোরো ধান (ব্রী ধান ৮৮, ব্রী ধান ১০০ এবং বিনা ধান ২৫) চারটি আলাদা আলাদা পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষ করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য কার্যকরভাবে পানি ব্যবস্থাপনা করে পানির অপচয় রোধ করা এবং ধানের দানায় ভারী ধাতুর (আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম) পরিমান কমিয়ে আনা।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মো. আক্কাস আলী বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ভারী ও ক্ষতিকর ধাতু যুক্ত এলাকা খুঁজে বের করা এবং সেখানে আমাদের গবেষণার ট্রায়াল দেয়া; যাতে করে আমরা ধানে ভারী ধাতুর পরিমান কমিয়ে আনতে পারি।” তিনি আরও বলেন, “পানির অপব্যবহার অবশ্যই কমাতে হবে। এজন্য আমাদেরকে ম্যাজিক পাইপ/দাগ দেয়া কাঠি দিয়ে মাঠে চুলের মত সূক্ষ্ম ফাটল দেখে পানি কমে গেছে কিনা সেটা বুঝে সেচ দিতে হবে। অবিরাম সেচ দেবার কারনে একদিকে পানির অপচয় হয়, অন্যদিকে ধানের উৎপাদনও বিশেষ বৃদ্ধি পায়না।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট ড.মো. মনোয়ার করিম খান বলেন, “আল্লাহ তা’আলার অশেষ নিয়ামতের মধ্যে মাটি, পানি ও অক্সিজেন অন্যতম। উদ্ভিদ এর জীবনেও মাটি ও পানির ভূমিকা অপরিসিম। আমরা সবাই জানি, পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পানির অপচয় দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিশুদ্ধ পানির পরিমাণ যে হারে কমছে, তাতে কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনার বিকল্প কিছুই আমাদের নেই। অবিরত পানি ব্যবহার এর পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে মাটি ভেজানো ও শুকানো পদ্ধতি (AWD – Alternative wetting and drying) এবং অন্তর্বর্তীকালীন সেচ (intermittent irrigation) পদ্ধতি ব্যবহার করে পানির অপচয় কমানো যেতে পারে।”

অনুষ্ঠান সঞ্চালক মোঃ সোহেল রানা বলেন, “প্রচলিত ধারনা অনুযায়ী প্রতি এক কেজি ধান উৎপাদন করতে প্রায় ৩ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন, কিন্তু বাস্তবে এর এক-তৃতীয়াংশ পানিই আসলে ধানের কাজে লাগে। তাই অপচয় রোধে নিদির্ষ্ট সময় অনুযায়ী পানি ব্যবহার লাভজনক।”

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সমাপনী বক্তা হিসেবে উক্ত গবেষণা প্রকল্পে পানির অপচয় রোধে ব্যবহৃত পদ্ধতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মত ব্যক্ত করেন উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মেহেদী হাসান। এছাড়াও, মাটিতে উপস্থিত অনুজীবের গুরুত্ব এবং মাটিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব উপাদান মিশ্রিত করার প্রতি জোর দেন তিনি।

ট্যাগ:

ভালুকায় সুষ্ঠু সেচ ব্যবস্থাপনার্থে ‘মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ’

প্রকাশ: ০৪:৫৩:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

চাষাবাদের কাজে উপযুক্ত সেচ ব্যবস্থাপনা এবং ফসলে ভারী ধাতুর পরিমাণ কমানোর বিষয়ে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের উদ্যোগে ভালুকা উপজেলার আশকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ’। রবিবার (০৫ মে, ২০২৪) “Application of Intermittent Irrigation for Efficient Water Management and Its Impact on Heavy Metal Accumulation in Boro Rice” শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের আওতায় এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মো. আক্কাস আলী (ক্রপস এন্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস)। এছাড়া, আয়োজনের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট ড. মোঃ মনোয়ার করিম খান (ক্লাইমেট ও ন্যাচারাল রিসোর্সেস) এবং স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম। উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে এবং গৌরীপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মোঃ সোহেল রানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান টি পরিচালিত হয় যেখানে আরও বক্তব্য দেন বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি ফেলো সিফাত সুলতানা; পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান, খাদিজা খাতুন এবং মোঃ রুকনোজ্জামান নাসিম সহ প্রায় ৩০ জন কৃষক।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিশ্বে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানির ব্যবহার। একই সাথে মাটিতে বিশুদ্ধ পানির স্তর ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে। ফলত, অপরিহার্য হয়ে উঠেছে পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব। অন্যদিকে সেচের পানিতে ভারী ধাতু থাকায়, তা ধানের দানায় জমা হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই ধান চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ক্ষতিকর ধাতুর প্রভাব কমাতে এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ চেষ্টা।”

গবেষণা প্রকল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের গবেষণার প্লট হিসেবে ভালুকার আশকা এলাকাটিকে বেছে নিয়েছি; কারণ, এখানে বহমান খিরো নদীর পানি খুবই অপরিষ্কার এবং বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বর্জ্য মিশ্রিত। তাই এই পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতিও রয়েছে। এমতাবস্থায়, নদীর কাছাকাছি ১২ টি প্লটে তিনটি ভ্যারাইটির বোরো ধান (ব্রী ধান ৮৮, ব্রী ধান ১০০ এবং বিনা ধান ২৫) চারটি আলাদা আলাদা পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষ করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য কার্যকরভাবে পানি ব্যবস্থাপনা করে পানির অপচয় রোধ করা এবং ধানের দানায় ভারী ধাতুর (আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম) পরিমান কমিয়ে আনা।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মো. আক্কাস আলী বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ভারী ও ক্ষতিকর ধাতু যুক্ত এলাকা খুঁজে বের করা এবং সেখানে আমাদের গবেষণার ট্রায়াল দেয়া; যাতে করে আমরা ধানে ভারী ধাতুর পরিমান কমিয়ে আনতে পারি।” তিনি আরও বলেন, “পানির অপব্যবহার অবশ্যই কমাতে হবে। এজন্য আমাদেরকে ম্যাজিক পাইপ/দাগ দেয়া কাঠি দিয়ে মাঠে চুলের মত সূক্ষ্ম ফাটল দেখে পানি কমে গেছে কিনা সেটা বুঝে সেচ দিতে হবে। অবিরাম সেচ দেবার কারনে একদিকে পানির অপচয় হয়, অন্যদিকে ধানের উৎপাদনও বিশেষ বৃদ্ধি পায়না।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট ড.মো. মনোয়ার করিম খান বলেন, “আল্লাহ তা’আলার অশেষ নিয়ামতের মধ্যে মাটি, পানি ও অক্সিজেন অন্যতম। উদ্ভিদ এর জীবনেও মাটি ও পানির ভূমিকা অপরিসিম। আমরা সবাই জানি, পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পানির অপচয় দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিশুদ্ধ পানির পরিমাণ যে হারে কমছে, তাতে কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনার বিকল্প কিছুই আমাদের নেই। অবিরত পানি ব্যবহার এর পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে মাটি ভেজানো ও শুকানো পদ্ধতি (AWD – Alternative wetting and drying) এবং অন্তর্বর্তীকালীন সেচ (intermittent irrigation) পদ্ধতি ব্যবহার করে পানির অপচয় কমানো যেতে পারে।”

অনুষ্ঠান সঞ্চালক মোঃ সোহেল রানা বলেন, “প্রচলিত ধারনা অনুযায়ী প্রতি এক কেজি ধান উৎপাদন করতে প্রায় ৩ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন, কিন্তু বাস্তবে এর এক-তৃতীয়াংশ পানিই আসলে ধানের কাজে লাগে। তাই অপচয় রোধে নিদির্ষ্ট সময় অনুযায়ী পানি ব্যবহার লাভজনক।”

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সমাপনী বক্তা হিসেবে উক্ত গবেষণা প্রকল্পে পানির অপচয় রোধে ব্যবহৃত পদ্ধতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মত ব্যক্ত করেন উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মেহেদী হাসান। এছাড়াও, মাটিতে উপস্থিত অনুজীবের গুরুত্ব এবং মাটিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব উপাদান মিশ্রিত করার প্রতি জোর দেন তিনি।