জানা গেছে, উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব ইউনিয়নের তিস্তা নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোর মধ্যে পশ্চিম বজরা, বাঁধের মাথা, উত্তর সাদুয়া দামার হাট, খামার দামার হাট নদীর পশ্চিম পাড়, সাতালস্ক, চর বজরা, সন্তোষ অভিরাম, কাজিরচক, টিটমা, গোড়াইপিয়ার, শেখেরটেক, পাকার মাথা, দড়ি কিশোর পুর, বামনপাড়া, কুমারপাড়া, ভেন্ডারপাড়া, ফকিরপাড়া, ঠুটাপাইকার, কর্পুরা, লাল মসজিদ ও অর্জুন এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের নতুন করে নদী ভাঙনে একরের পর একর আবাদি জমি,বসতবাড়ি এবং বড় বড় গাছ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা পাড়ের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় বসত ভিটে ঘর বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা উপায়ন্তর না পেয়ে অন্যের জমিতে ঘর উঠিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, শতশত বাড়িঘর ও আবাদি জমি। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থারও দাবি জানান। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষেরা জানান, যে ভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তাড়াতাড়ি ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যাবস্থা না নিলে এসব এলাকার ২০ থেকে ২৫টি গ্রামের শতশত পরিবার অসহায় হয়ে যাবে। এছাড়াও গোড়াই পিয়ার দাখিল মাদরাসা, গোড়াই পিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর হোকডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি ওয়ার্ড ক্লিনিক, ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দিরসহ উক্ত গ্রাম গুলোর কয়েক হাজার পরিবার ভাঙ্গন হুমকির মুখে আছেন। তিস্তার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকেরা জানান, আমরা কোন সাহায্য চাইনা নদী সংস্কার চাই। ভাঙ্গন এলাকা গুলোতে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গনরোধ করার জোর দাবী করেন।
বসত ভিটে বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে অন্যের বাড়িতে থাকা আয়শা (৬০), আব্দুল করিম (৪৭), আবু তাহের (৬২), মনোয়ারা (৫৫), আলতাব (৬৩), ছামাদ (৪৮) ও হাকিম মিয়া (৪৯) সহ আরও অনেকে বলেন, তিস্তা নদী আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের চলার মত কিছুই থাকলো না। আমরা এখন অন্যের বাড়িতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার তিস্তার ভাঙ্গনের কবলে পড়া মজিবর (৪৪), সুজন (৪২), মেলন (৩৮), মাইদুল (৫৪), মর্জিনা (৫১), মুকুল (৩৬), শহিদুল (৬১), আব্দুস ছামাদ (৭০), আব্দুল হামিদ (৬৫), ও আফরুজা বেগম (৪৫) সহ আরও অনেকে জানান, তিস্তার ভাঙ্গনে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি। আমরা সাহায্য চাইনা আমরা চাই নদী সংস্কার। এছাড়া ভাঙ্গন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গন এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রথম ধাপে দলদলিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকায় আজ কালের মধ্যে ভাঙ্গন রোধের কাজ শুরু হবে। পর্যাক্রমে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোতে ভাঙ্গন রোধের কাজ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, নদী ভাঙ্গনের শিকার ও পানিবন্দি পরিবারের তথ্য এখনও পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে দূর্যোগ কবলিত এসব মানুষের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে