০১:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘে ভারতের চতুর্থ জলবায়ু প্রতিবেদন জমা

ভারত তার জলবায়ু কর্মপ্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে চতুর্থ দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিয়ে। ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের পথে ভারতের অঙ্গীকার এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তুলে ধরে।

বিইউআর-৪ -এর প্রধান দিকনির্দেশনা

বিইউআর-৪ -এ ভারতের তৃতীয় জাতীয় প্রতিবেদন হালনাগাদ করা হয়েছে এবং ২০২০ সালের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আরও রয়েছে নির্গমন প্রশমন উদ্যোগ, সীমাবদ্ধতা এবং অর্থায়ন, প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির চাহিদার বিশ্লেষণ।

পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, ‘ভারত টেকসই উন্নয়নে উদাহরণ সৃষ্টি করছে।’

নির্গমনে উল্লেখযোগ্য হ্রাস

২০২০ সালে ভারতের জিএইচজি নির্গমন ২০১৯ সালের তুলনায় ৭.৯৩% কমেছে, যা পরিবেশের ওপর প্রভাব হ্রাসে ভারতের অসামান্য সাফল্য প্রকাশ করে। ভূমি ব্যবহার, ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন এবং বনায়ন বাদে মোট নির্গমন ছিল ২,৯৫৯ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমমান। ভূমি ব্যবহার, ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন এবং বনায়ন অন্তর্ভুক্ত করে নিট নির্গমন ছিল ২,৪৩৭ মিলিয়ন টন।

জ্বালানি খাত মোট নির্গমনের ৭৫.৬৬% এর জন্য দায়ী, এরপরে কৃষি (১৩.৭২%), শিল্প প্রক্রিয়া ও পণ্যের ব্যবহার (৮.০৬%) এবং বর্জ্য (২.৫৬%)। তবে ভারতের বনাঞ্চল এবং গাছপালার আচ্ছাদন প্রায় ৫২২ মিলিয়ন টন CO2 শোষণ করেছে, যা ২০২০ সালের মোট নির্গমনের ২২% হ্রাসের সমতুল্য।

প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যে অগ্রগতি

প্যারিস চুক্তির অধীনে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান পূরণে ভারত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

জিডিপির নির্গমন তীব্রতা হ্রাস: ২০০৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি-র নির্গমন তীব্রতা ৩৬% হ্রাস পেয়েছে।

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বৃদ্ধি: ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৬.৫২% এসেছে অ-জ্বালানি উৎস থেকে।

কার্বন শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি: ২০০৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বনায়ন এবং বৃক্ষ আচ্ছাদনের মাধ্যমে ২.২৯ বিলিয়ন টন কার্বন সমমানের অতিরিক্ত কার্বন শোষণ সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

সমতা এবং সাধারণ দায়বদ্ধতার ওপর জোর

ভারত ঐতিহাসিক এবং বর্তমান বৈশ্বিক নির্গমনে ন্যূনতম অবদান রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিইউআর-৪ সমতা এবং সাধারণ কিন্তু পৃথকীকৃত দায়বদ্ধতার নীতিতে ভারতের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয়

বিইউআর-৪ -এ উন্নত জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য বেশ কয়েকটি সীমাবদ্ধতা এবং ফাঁক চিহ্নিত করা হয়েছে:

অর্থায়নের প্রয়োজন: জলবায়ু প্রশমন এবং অভিযোজন উদ্যোগ বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রযুক্তিগত অগ্রগতি: নবায়নযোগ্য শক্তি সম্প্রসারণ, শক্তি দক্ষতা উন্নয়ন, এবং কার্বন ধরার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন।

সক্ষমতা বৃদ্ধি: জলবায়ু নীতিমালা কার্যকর করতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং কর্মক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।

বৈশ্বিক নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত

বিইউআর-৪ জমা দিয়ে ভারত স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সৌর জোট এবং দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো জোট-এর মতো বৈশ্বিক উদ্যোগে ভারতের অংশগ্রহণ তার জলবায়ু নেতৃত্বের প্রমাণ।

ভারতের এই উদ্যোগগুলি বিশ্বব্যাপী একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক। 

ট্যাগ:

জাতিসংঘে ভারতের চতুর্থ জলবায়ু প্রতিবেদন জমা

প্রকাশ: ০৯:১৫:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

ভারত তার জলবায়ু কর্মপ্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে চতুর্থ দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিয়ে। ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের পথে ভারতের অঙ্গীকার এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তুলে ধরে।

বিইউআর-৪ -এর প্রধান দিকনির্দেশনা

বিইউআর-৪ -এ ভারতের তৃতীয় জাতীয় প্রতিবেদন হালনাগাদ করা হয়েছে এবং ২০২০ সালের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আরও রয়েছে নির্গমন প্রশমন উদ্যোগ, সীমাবদ্ধতা এবং অর্থায়ন, প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির চাহিদার বিশ্লেষণ।

পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, ‘ভারত টেকসই উন্নয়নে উদাহরণ সৃষ্টি করছে।’

নির্গমনে উল্লেখযোগ্য হ্রাস

২০২০ সালে ভারতের জিএইচজি নির্গমন ২০১৯ সালের তুলনায় ৭.৯৩% কমেছে, যা পরিবেশের ওপর প্রভাব হ্রাসে ভারতের অসামান্য সাফল্য প্রকাশ করে। ভূমি ব্যবহার, ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন এবং বনায়ন বাদে মোট নির্গমন ছিল ২,৯৫৯ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমমান। ভূমি ব্যবহার, ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন এবং বনায়ন অন্তর্ভুক্ত করে নিট নির্গমন ছিল ২,৪৩৭ মিলিয়ন টন।

জ্বালানি খাত মোট নির্গমনের ৭৫.৬৬% এর জন্য দায়ী, এরপরে কৃষি (১৩.৭২%), শিল্প প্রক্রিয়া ও পণ্যের ব্যবহার (৮.০৬%) এবং বর্জ্য (২.৫৬%)। তবে ভারতের বনাঞ্চল এবং গাছপালার আচ্ছাদন প্রায় ৫২২ মিলিয়ন টন CO2 শোষণ করেছে, যা ২০২০ সালের মোট নির্গমনের ২২% হ্রাসের সমতুল্য।

প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যে অগ্রগতি

প্যারিস চুক্তির অধীনে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান পূরণে ভারত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

জিডিপির নির্গমন তীব্রতা হ্রাস: ২০০৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি-র নির্গমন তীব্রতা ৩৬% হ্রাস পেয়েছে।

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বৃদ্ধি: ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৬.৫২% এসেছে অ-জ্বালানি উৎস থেকে।

কার্বন শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি: ২০০৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বনায়ন এবং বৃক্ষ আচ্ছাদনের মাধ্যমে ২.২৯ বিলিয়ন টন কার্বন সমমানের অতিরিক্ত কার্বন শোষণ সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

সমতা এবং সাধারণ দায়বদ্ধতার ওপর জোর

ভারত ঐতিহাসিক এবং বর্তমান বৈশ্বিক নির্গমনে ন্যূনতম অবদান রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিইউআর-৪ সমতা এবং সাধারণ কিন্তু পৃথকীকৃত দায়বদ্ধতার নীতিতে ভারতের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয়

বিইউআর-৪ -এ উন্নত জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য বেশ কয়েকটি সীমাবদ্ধতা এবং ফাঁক চিহ্নিত করা হয়েছে:

অর্থায়নের প্রয়োজন: জলবায়ু প্রশমন এবং অভিযোজন উদ্যোগ বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রযুক্তিগত অগ্রগতি: নবায়নযোগ্য শক্তি সম্প্রসারণ, শক্তি দক্ষতা উন্নয়ন, এবং কার্বন ধরার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন।

সক্ষমতা বৃদ্ধি: জলবায়ু নীতিমালা কার্যকর করতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং কর্মক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।

বৈশ্বিক নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত

বিইউআর-৪ জমা দিয়ে ভারত স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সৌর জোট এবং দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো জোট-এর মতো বৈশ্বিক উদ্যোগে ভারতের অংশগ্রহণ তার জলবায়ু নেতৃত্বের প্রমাণ।

ভারতের এই উদ্যোগগুলি বিশ্বব্যাপী একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।