ভারত সরকার সম্প্রতি নেপালের বাগলুং জেলার শ্রী ভীমগিঠে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে। নেপাল-ভারত উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচির অধীনে এই প্রকল্পটি উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এইচআইসিডিপি) হিসেবে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা এই অঞ্চলের শিক্ষাগত অবকাঠামো উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই প্রতিবেশী দেশের দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ হয়।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাগলুং জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান অমর বাহাদুর থাপা, বাদিগাড গ্রামীণ পৌরসভার চেয়ারম্যান গন্ডকী থাপা অধিকারী এবং কাঠমান্ডুস্থ ভারতীয় দূতাবাসের কাউন্সিলর অবিনাশ কুমার সিং। এছাড়াও স্থানীয় সরকার, রাজনৈতিক নেতা, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনগণও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৫৮ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শ্রী ভীমগিঠে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাগলুং-এর শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। ১৯৬৮ সালে এটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৯৮৮ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বর্তমানে এটি প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছে, যাদের ৫৪% মেয়ে।
ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় নির্মিত এই নতুন বিদ্যালয় ভবন এবং অন্যান্য অবকাঠামো জেলা সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়েছে। এই আধুনিক অবকাঠামো শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের জন্য একটি উন্নত পাঠদান পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ভারতের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাদিগাড গ্রামীণ পৌরসভার চেয়ারম্যান গন্ডকী থাপা অধিকারী বলেন, “এই সহযোগিতার মাধ্যমে নির্মিত অবকাঠামো শুধু শিক্ষার্থীদের উপকৃত করবে না, বরং বাগলুং-এর শিক্ষা খাতের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
অমর বাহাদুর থাপা প্রকল্পটির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এই উদ্যোগ নেপাল এবং ভারতের বন্ধুত্ব ও উন্নয়ন সহযোগিতার গভীর সম্পর্কের প্রতীক। বিদ্যালয়টি এখন তার শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য আরো সুসজ্জিত।”
শ্রী ভীমগিঠে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হস্তান্তর নেপালের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভারতের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এইচআইসিডিপি গুলোর একটি উদাহরণ। এই প্রকল্পগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হয়।
ভারতীয় দূতাবাসের কাউন্সিলর অবিনাশ কুমার সিং বলেন, “নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারত ও নেপাল বহুমুখী সহযোগিতার এক অনন্য বন্ধন ভাগ করে। এমন প্রকল্পগুলো নেপালের সম্প্রদায়গুলোকে উন্নত করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।”
শ্রী ভীমগিঠে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের সফল সমাপ্তি নেপালের শিক্ষা খাত উন্নয়নে ভারতের সমর্থনের একটি উদাহরণ। এর আগে ভারত সরকার মিয়াগদি জেলার মিয়াগদি মাল্টিপল ক্যাম্পাস নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল।
এই ২৭.৯৩ মিলিয়ন নেপালি রুপি ব্যয়ের প্রকল্পে নতুন অবকাঠামো এবং হোস্টেল সুবিধা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ৭০% মেয়েসহ ৯৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে উপকৃত করেছে। বাগলুং বিদ্যালয় প্রকল্পের মতোই, মিয়াগদি ক্যাম্পাস প্রকল্পটি এইচআইসিডিপি-এর অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছিল।
ভারত এবং নেপালের মধ্যে শিক্ষা খাতে অংশীদারিত্ব তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি মূল ভিত্তি। এই প্রকল্পগুলো যেমন স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে শক্তিশালী করে, তেমনি দুই জাতির সম্পর্কও আরও গভীর করে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।