২১শ শতকের ভারত অসাধারণ গতি ও পরিসরে এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি, ২০২৫) বলেছেন যে দেশটি বিশ্বব্যাপী দক্ষ প্রতিভার চাহিদা পূরণ করতে পারে। ওডিশার ভুবনেশ্বরে ১৮তম প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলন উদ্বোধনের পর তিনি এই কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতীয় প্রতিভার বৈশ্বিক স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারতের পেশাজীবীরা বড় বড় কোম্পানির মাধ্যমে বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তিনি বলেন, “ভারত বহু দশক ধরে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী এবং দক্ষ জনসংখ্যার দেশ থাকবে।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “ভারতের বিশ্বব্যাপী দক্ষ প্রতিভার চাহিদা পূরণের ক্ষমতা রয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, আজকের দিনে অনেক দেশ দক্ষ ভারতীয় যুবকদের স্বাগত জানাচ্ছে এবং ভারত সরকার নিশ্চিত করছে যে বিদেশগামী ভারতীয়রা ক্রমাগত স্কিলিং, রি-স্কিলিং এবং আপ-স্কিলিং এর মাধ্যমে আরও দক্ষ হয়ে উঠছেন।
প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় এগিয়ে যাচ্ছে ভারত
প্রধানমন্ত্রী ২১শ শতকের ভারতে অসাধারণ গতি ও স্কেলের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, মাত্র ১০ বছরে ভারত ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে এবং বিশ্বের ১০ম বৃহৎ অর্থনীতি থেকে ৫ম বৃহৎ অর্থনীতিতে উন্নীত হয়েছে। তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, ভারত শীঘ্রই বিশ্বের ৩য় বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠবে।
তিনি চন্দ্রযান মিশনের মাধ্যমে শিব-শক্তি পয়েন্টে পৌঁছানোর মতো কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, ডিজিটাল ভারতের শক্তি আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। “নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিমান পরিবহন, বৈদ্যুতিক যানবাহন, মেট্রো নেটওয়ার্ক এবং বুলেট ট্রেন প্রকল্পের ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ছে ভারত,” তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আধুনিক ভারত উত্তরাধিকার ও উন্নয়নের মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলছে।”
তিনি ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ভূমিকা এবং তার সাফল্য ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকের ভারত শুধু নিজের কথা বলেই থেমে থাকে না, বরং গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠও শক্তিশালী করে।”
তিনি আরও বলেন, ভারত আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি-২০ এর স্থায়ী সদস্য করার প্রস্তাব পেশ করেছে এবং এতে সর্বসম্মত সমর্থন পেয়েছে, যা ভারতের “মানবতাই প্রথম” অঙ্গীকারকে প্রকাশ করে।
ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের প্রতিফলন হিসেবে ওডিশার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধৌলি ঐতিহাসিকভাবে শান্তির প্রতীক। তিনি উল্লেখ করেন, সম্রাট অশোক এখানে শান্তির পথ বেছে নিয়েছিলেন, যখন বিশ্ব তলোয়ারের শক্তিতে সাম্রাজ্য বিস্তার করছিল। এই ঐতিহ্য ভারতকে অনুপ্রাণিত করে বিশ্বকে জানাতে যে, ভবিষ্যৎ যুদ্ধের পথে নয়, বরং বুদ্ধের পথে। তিনি বলেন, “যুদ্ধ নয়, ভবিষ্যৎ বুদ্ধের পথে।”
ভারতীয় প্রবাসীদের গৌরবময় ইতিহাস
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ভারতীয় প্রবাসীদের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “প্রবাসী ভারতীয় দিবস ভারত ও তার প্রবাসীদের মধ্যে বন্ধনকে শক্তিশালী করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।”
এই ইভেন্টটি ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত চলবে এবং এটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওডিশা সরকার যৌথভাবে আয়োজন করেছে। এবারের সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু হলো, “এক বিকশিত ভারতের জন্য প্রবাসীদের অবদান।”
সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন ট্রিনিদাদ ও টোবাগোর রাষ্ট্রপতি ক্রিস্টিন কার্লা কঙ্গালু, যিনি একটি ভিডিও বার্তায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে কথা বলেছেন। সম্মেলনে ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে ভারতীয় প্রবাসীদের বৃহৎ অংশগ্রহণ রয়েছে।
প্রদর্শনী উদ্বোধন ও বিশেষ ট্রেন যাত্রা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী
সম্মেলনের প্রথম দিন, প্রধানমন্ত্রী চারটি প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন: বিশ্বরূপ রাম – রামায়ণের সর্বজনীন উত্তরাধিকার; প্রযুক্তি ও বিকশিত ভারতে প্রবাসীদের অবদান; বিশ্বব্যাপী ভারতীয় প্রবাসের বিস্তার ও বিবর্তন, বিশেষ করে মন্দভি থেকে মাস্কাট অভিবাসন; ওডিশার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ পর্যটক ট্রেন, প্রবাসী ভারতীয় এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী যাত্রাও শুরু করেন। এটি দিল্লির নিজামুদ্দিন রেলস্টেশন থেকে যাত্রা করে ভারতের বিভিন্ন পর্যটন ও ধর্মীয় স্থানে তিন সপ্তাহ ধরে চলবে।
১৮তম প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলনটি ওডিশার সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের পটভূমিতে প্রথমবার আয়োজিত হচ্ছে। ১৭তম সম্মেলনটি ২০২৩ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।