গ্রেগ চ্যাপেল ইস্যুতে এবার মুখ খুললেন ভারতীয় সাবেক তারকা ক্রিকেটার রবিন উথাপ্পা। কাঠগড়ায় তুললেন বিদেশি সংস্কৃতি চাপানোর ওপর। ২০০৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতীয় দল গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে যায়, সেই সময় ড্রেসিং রুমের পরিবেশ এবং গ্রেগ চ্যাপেলের অধীনে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেছেন রবিন উথাপ্পা।
সম্প্রতি উথাপ্পা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গ্রেগ চ্যাপেল থাকাকালীন দলের পরিবেশ খুব খারাপ ছিল। ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো ১৫-২০ জন খেলোয়াড়, যারা বিভিন্ন রাজ্য, সংস্কৃতি ও পরিবার থেকে এসেছে, তারা সবাই একসঙ্গে একটি লক্ষ্য নিয়ে খেলে—ভারতের হয়ে খেলা। এর মধ্যে একটি জাদু রয়েছে। যখন এই সংযোগ ঠিকমতো হয়, ক্রিকেট খেলার অনুভূতিটাই অন্যরকম হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা একে অপরের সাফল্য উদযাপন করতাম। আমরা একটি ইউনিটের মতো খেলেছি। আমি আউট হলেও চাইতাম পরবর্তী ব্যাটসম্যান রান করুক। ম্যাচ জিতিয়ে আনুক। কে রান করছে বা উইকেট নিচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
রবিন উথাপ্পা বলেন, একজন নবাগত হিসেবে গ্রেগ চ্যাপেল আমার জন্য খুবই ভালো ছিলেন। আমি তখন দলে নতুন। তিনি তরুণ খেলোয়াড়দের সমর্থন করতেন। ২০ বছর বয়সে ভারতের হয়ে খেলা এবং জয়ী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। যখন দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পাই, মনে হয় এটাই যথেষ্ট। আমি দলের জন্য সবকিছু দিতে প্রস্তুত ছিলাম।
গ্রেগ চ্যাপেল কিভাবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সংস্কৃতি ভারতীয় ড্রেসিং রুমে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার ব্যাখ্যায় উথাপ্পা বলেন, গ্রেগ চ্যাপেল একটি এজেন্ডা চালাচ্ছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি বলতেন, ‘আমাদের (অস্ট্রেলিয়ায়) এভাবেই কাজ হয়।’ আমি মনে করি না উনি কখনই ভারতীয় সংস্কৃতিকে সম্মান করতেন। উনি এসেই অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
উথাপ্পা জানান, তখন ফিটনেস ভারতীয় ক্রিকেটে অতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ট্রেনিং গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আমাদের ফিল্ডিং ভালো ছিল না; কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা ছিল অসাধারণ। ফিটনেস সংস্কৃতি মূলত কর্ণাটকের খেলোয়াড়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অনিল কুম্বলে, রাহুল দ্রাবিড়, জাভাগল শ্রীনাথ—তারা এগুলো নিয়ে সচেতন ছিল। শ্রীনাথ দক্ষিণ আফ্রিকায় কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর রিহ্যাব করেছিলেন এবং সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেছিলেন। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন।
উথাপ্পা বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ফিটনেস ট্রেনিং হতো, ভারতে এসব ছিল না। তখন গ্রেগ চ্যাপেল আমাদেরও ফিটনেস ট্রেনিং করান। তিনি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিলেন। এ কারণে তিনি দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হন। সৌরভ গাঙ্গুলি, শচীন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষ্মণ, বীরেন্দ্র সেহওয়াগ ও জাহির খানরা সবাই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিলেন। তারা অভ্যস্ত ছিলেন না যে কেউ এসে তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে।
উথাপ্পা জানান, গ্রেগ চ্যাপেলের একটি খারাপ অভ্যাস ছিল। সে ড্রেসিংরুমের তথ্য বাইরে ফাঁস করত। যখন তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু হতো না, তখন তিনি তথ্য ফাঁস করতেন। এটা খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করেনি।