লাল মাংস বলতে আমরা সহজ ভাষায় বুঝি গরু, খাসি, ষাঁড় ইত্যাদি মাংসকে। সাদা মাংস বলতে বুঝি মুরগী, হাঁস, কবুতর ইত্যাদি মাংসকে। লাল মাংসের মায়োগ্লোবিন পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা লাল মাংস দিয়ে সাধারণত বিরিয়ানি, পোলাও, তেহারী, তরকারি ইত্যাদি করে থাকি। কুরবানি ঈদে আমাদের লাল মাংস বেশি খাওয়া হয়। লাল মাংস যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তেমন এর ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। আজ আমরা লাল মাংসের উপকারী ও অপকারী দিক সম্পর্কে জানবো।
উপকারিতা
লাল মাংস পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি প্রাণিজ প্রোটিন উৎস। এতে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন থাকে, যা শরীরের পেশি গঠন ও পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া এতে রয়েছে আয়রন, জিংক ও ভিটামিন বি১২—যা রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখে।
বিশেষ করে আয়রনের হিম ফর্ম লাল মাংসে থাকে, যা উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রনের তুলনায় শরীর সহজে শোষণ করতে পারে। ভিটামিন বি১২ স্নায়বিক কার্যকলাপ ও স্মৃতিশক্তি রক্ষায় সহায়ক। এছাড়া জিংক শরীরের বিভিন্ন এনজাইমের কার্যক্রমে অংশ নেয় এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
অপকারিতা
লাল মাংসের যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত (যেমন সসেজ, সালামি) ও অতিরিক্ত পরিমাণে লাল মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রথমত, লাল মাংসে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল বেশি খেলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বেশি পরিমাণে লাল মাংস খাওয়ার সঙ্গে কোলন ক্যান্সারসহ কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
প্রক্রিয়াজাত লাল মাংসে নাইট্রেট ও নাইট্রাইটের মতো সংরক্ষণকারী রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও বাড়ে।
তাই লাল মাংস খাওয়ার সময় পরিমাণ ও প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেদ্ধ, গ্রিলড বা রান্না করা স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে খাওয়া ভালো এবং সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে সবজি ও অন্যান্য প্রোটিন উৎসের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। তাই এই ঈদে আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন ও নিরাপদ জীবনযাপন করুন।